ডিসেম্বরের মধ্যেই বিএনপিতে দলীয় বিপ্লব: কামরুল হাসান নাসিম
১ আগস্ট ২০২১ ১৫:৫৪
ঢাকা: চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই দলীয় বিপ্লবের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির বিদ্রোহী নেতা এবং দলটির পুনর্গঠনের উদ্যোক্তা কামরুল হাসান নাসিম। রোববার (০১ আগস্ট) আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন।
কামরুল হাসান নাসিম বলেন, ‘দলীয় বিপ্লব করা হবে ২০২১ সালের মধ্যেই হবে। অর্থাৎ এই বছর ডিসেম্বরের মধ্যে দলের নয়া পল্টন কার্যালয়ের সামনেই বসবে প্রতীকী উচ্চ আদালত। আর কোনো মহড়া নয়। কোনো একটি সকালে আমি তা করে দেখাব। রাতের আঁধারে নয়। অতঃপর, দলের ক্রেডিবল কাউন্সিল করা হবে একই সময়ে। বিপ্লবের মাহেন্দ্রক্ষণে সেই কাউন্সিল করা হবে। দলের সকল কাউন্সিলরের ভোটে শীর্ষ নেতা বাছাই করা হবে।’
নাসিম বলেন, ‘আপনারা অবগত যে, ২০১৫ সালের ৯ জানুয়ারি দলের পক্ষ থেকে বিএনপি পুনর্গঠনের তাগিদ রাখি। সেদিন বলেছিলাম ১৯৭৮ সালে গঠিত বিএনপি প্রয়াত জিয়ার গড়া দল। জিয়াউর রহমান মশিউর রহমান যাদু মিয়াদের নিয়ে যে দল গঠন করেছিলেন তা আজ দুর্বল, মানহীন এবং উত্তরসূরিদের কাছে নিরাপদ নয়। ফলে দলটি জাতীয়তাবাদকে মেলে ধরতে পারছে না। কাজেই দলকে পুনর্গঠন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ওই বছরের ১৭ জানুয়ারি বিএনপি পুনর্গঠনের ডাক দেই জোরেসোরে। বিএনপি তখন অনির্দিষ্টকালের অবরোধ-হরতাল পালন করছিল। সে সময় আমি বলেছিলাম বিএনপির ৫টি অসুখ হয়েছে। দলটি জাতীয়তাবাদী থেকে জামায়াতেবাদী হয়ে পড়েছে, নাশকতাকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছে, বিদেশি শক্তির ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, জনস্বার্থ সংরক্ষণে রাজনীতি করছে না এবং দল পরিচালনায় বেগম জিয়া ও তারেক রহমান ব্যর্থ।’
‘এরপর প্রতীকী হরতাল, সংবাদ সম্মেলনসহ দল পুনর্গঠনের উদ্যোগ হিসেবে ব্যতিক্রধর্মী কর্মসূচি পালন করতে থাকি। ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী জনতার প্রতীকী নিম্ন আদালত বসাতে সক্ষম হই। বাদীর কাঠগড়ায় আমি ছিলাম। বিবাদীর কাঠগড়ায় ওই ৫টি অসুখ প্ল্যাকার্ডে লেখা থাকে। উপস্থিত জাতীয়তাবাদী জনতাকে বিচারক হিসেবে আমরা দেখাতে সক্ষম হই। বাদী হিসাবে আমার বক্তব্য তুলে ধরি এবং একপর্যায়ে আমি দলের পক্ষ থেকে বিচারকের কাছে দুটি রায় চাই। এক, দলের গঠনতন্ত্র স্থগিত করা হোক। দুই, জাতীয়তাবাদী জনতার উচ্চ আদালত দলের নয়া পল্টন কার্যালয়ের সামনে বসবে। তখন উপস্থিত জনতা হ্যাঁ সমস্বরে চিৎকার করলে দলের পক্ষ থেকে আমি দলীয় বিপ্লবের ঘোষণা দেই’- বলেন কামরুল হাসান নাসিম।
তিনি বলেন, ‘এরপর আমি তৃনমূলে চিঠি পাঠাই দলের পক্ষ থেকে। তাদেরকে জানানোর চেষ্টা করি যে, বিএনপি জিয়ার আদর্শ থেকে সরে গেছে। দলটা জাতীয়তাবাদী নয়, জামায়াতেবাদী হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে আমাদের রাজনীতি জনগণের জন্য নেই, অথচ আমরা খুবই জনপ্রিয় দল। চিঠি পাঠানোর পর সারাদেশ থেকে নেতারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে দেন।’
নাসিম বলেন, ‘সবার আগে বিএনপিকে জাতীয়তাবাদী হতে হবে। সরকারি দলের সঙ্গে লড়াইয়ের শুরুটা হতে পারে ২০২২ সাল থেকে। আমি মনে করি না, আওয়ামী লীগের সঙ্গে রাজনৈতিক লড়াই করার জন্য আমরা এখন প্রস্তুত না। কারণ, আমরা জনপ্রিয় কিন্তু জনস্বার্থ ইস্যুতে আমরা কি রাজনীতিটা করতে পারছি? আজ ক্ষমতায় গেলে মানুষের জন্য কি করতে পারব সেটার হোমওয়ার্ক নেই। এটা কেউ বুঝতে চাইছে না। আগে তো দেশ। সে হিসাব করলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বেশ শক্তিশালী নেতৃত্ব পেয়েছে। যিনি শেখ হাসিনা। আমাদের শেখ হাসিনাটা কোথায়?’
তিনি বলেন, ‘বেগম জিয়া আমার কথা শুনতে পাবেন কিনা জানি না। তাকেই সিদ্ধান্ত দিতে হবে। আগে তো আমার কথা শুনত ! সর্বশেষ কাউন্সিলে যেয়ে তিনি বলেছিলেন, আমি( খালেদা জিয়া) নকল আর উনি আসল ? তেমন সিদ্ধান্ত ওই দলীয় বিপ্লবের মাহেন্দ্রক্ষণে দিতে হবে। তাকে নতি স্বীকার করতে হবে এই মর্মে যে, ‘আমি ( খালেদা জিয়া) দল ও দেশের জন্য নেতৃত্ব দেওয়ার মত চরিত্র কখনই ছিলাম না। আমার পুত্র তারেক রহমান ওর বাবার মতো হতে পারেনি।’
নাসিম বলেন, ‘দলের পক্ষ থেকে আমি বর্তমান সরকারকে বলব, আপনারা বেগম খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তির জন্য চিন্তা করুন। তা, সেটা বৃহৎ রাজনৈতিক কারণে। আর যদি আইনের গতিতে সব কিছু চলতে থাকে, তবে তার আজকের পরিণতির জন্য বলব, এটিই প্রকৃতির বিচার। কারণ, তিনি অপরাধীও।’
দলীয় সমর্থন ছাড়া কীভাবে এই কাউন্সিল করা সম্ভব? এমন প্রশ্নের জবাবে নাসিম বলেন, ‘যেহেতু একজন বেগম জিয়া মুখে কিছু বলবার অবস্থায় নেই। তিনি এক প্রকার মুচলেকা দিয়ে রাজনীতি থেকে সরে গেছেন। কাজেই সম্ভব। কারণ তার পুত্র তারেক রহমান তো বাংলাদেশে বসবাস করে রাজনীতি করছেন না। এত বড় দলের এমন দুর্দশা দলের নেতাকর্মীরা মেনে নিতে পারছেন না। কাজেই কাউন্সিল করা যাবে। দলীয় বিপ্লব হবে।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার সাথে দলের জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের প্রায় সকলেই আছেন। কৌশল এবং অনিবার্য কারণে তাদের নাম প্রকাশ করতে যাব না। তারা বিপদে পড়তে পারেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তারেক রহমানের কাছে মুল দলটা থাকবে। আপনারা সাম্প্রতিক সময়ে জনাব মির্জা আব্বাসের বিষয়টি কি দেখেন নি ?’
নাসিক নির্বাচনে বাবুকে সমর্থন:
আসন্ন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী কামরুল ইসলাম বাবুর জন্য কাজ করার ঘোষণা দেন কামরুল হাসান নাসিম।
তিনি বলেন, ‘কামরুল ইসলাম বাবু আমার জীবনে সমবয়সী একমাত্র বন্ধু। এখানে দল কিংবা মত গুরুত্বপূর্ণ নয়। তিনি যদি বাসদের কোনো নেতাও হতেন, আমি তার জন্য লড়তাম। যতদূর জানি, তিনি জয় বাংলা নাগরিক কমিটির ব্যানারে নির্বাচন করতে যাচ্ছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আদর্শকে ধারণ করেন। আওয়ামী লীগের কোনো পর্যায়ের সদস্য তিনি নন। তবে তিনি সরকার দলের সমর্থন প্রত্যাশী। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, আমি কেন তাকে সমর্থন দিচ্ছি? উত্তরটা হলো- স্রেফ বন্ধুত্ব।
সারাবাংলা/এজেড