গর্ভবতীরাও পাবেন করোনা ভ্যাকসিন, ঘোষণা শিগগিরই
১ আগস্ট ২০২১ ২১:৩৩
ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতিতে গর্ভবতীদের ঝুঁকিমুক্ত রাখতে ভ্যাকসিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খুব দ্রুতই তাদের ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হতে পারে।
ইতোমধ্যেই দেশে ভ্যাকসিন বিষয়ক সর্বোচ্চ পরামর্শক কমিটি বা ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারি গ্রুপের (নাইট্যাগ) একাধিক বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা দ্রুতই সরকারকে জানানো হবে। এরপরই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়া হবে সরকারের পক্ষ থেকে।
রোববার (১ আগস্ট) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও নাইট্যাগের একাধিক সূত্র সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নাইট্যাগের একটি সূত্রে জানা গেছে, কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে প্রসূতি নারীদের ভ্যাকসিন দেওয়ার পক্ষে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে যারা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন তাদেরকেও ভ্যাকসিন দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন- মহামারিতে গর্ভধারণ হলে চিকিৎসার প্রস্তুতি রাখবেন যেভাবে
এক্ষেত্রে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ও যথাযথ কাউন্সিলিং করে ভ্যাকসিন নিতে পারবেন তারা। তবে একটি স্বীকৃতিপত্র স্বাক্ষর করে ভ্যাকসিন নিতে হবে গর্ভবতীদের —এমন পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে গর্ভবতীদের ভ্যাকসিন দেওয়া বিষয়ে নাইট্যাগের কাছ থেকে পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। কমিটির বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে মতামত জানানোর পরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। পরামর্শক কমিটির থেকে সিদ্ধান্ত এলেই তা খুব দ্রুতই বাস্তবায়ন করা হবে।
তবে এখনও গর্ভবতী মায়েদের ভ্যাকসিন দেওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহম্মদ খুরশিদ আলম।
অধ্যাপক খুরশিদ বলেন, ‘গর্ভবতী মায়েদের ভ্যাকসিন দেওয়ার বিষয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন। তবে আমরা নাইট্যাগের মতামতের জন্য অপেক্ষায় রয়েছি। তাদের মতামত এখনও আমি আনুষ্ঠানিকভাবে পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত আমরা এককভাবে তো আর নেবো না। জাতীয়ভাবে কমিটি আছে। সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমরা সেটা বাস্তবায়ন করবো। ইতোমধ্যেই ওজিএসবি (অবসট্রাক্টিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ) আমাদের কাছে আবেদন করেছে। তারাও বিভিন্ন দেশের পরিসংখ্যান উল্লেখ করে প্রসূতিদের ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য বলেছেন। সুতরাং আমরা নাইট্যাগের কাছ থেকে সিদ্ধান্ত পেলেই তা ,বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করবো।’
এদিকে গর্ভবতী নারীদের ভ্যাকসিন দেওয়ার বিষয়ে ওজিএসবির বক্তব্য আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২৯ জুলাই ওজিএসবির একটি ওয়েবিনার আয়োজন করা হয়। সেখানে তাদের পরামর্শ স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে জানানো হয়।
জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম কাজল সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভ্যাকসিন অবশ্যই গর্ভবতী নারীদের নেওয়া প্রয়োজন। কারণ কোভিড-১৯ সংক্রমিত হলে আমরা দেখছি গর্ভবতীদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। যা অনেক ক্ষেত্রেই প্রাণঘাতী হয়ে পড়ছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে গর্ভবতীদের করোনার ভ্যাকসিন দিতে ওজিএসবির পক্ষ থেকেও সম্মতি দেওয়া হয়েছে। কারণ এতে গর্ভবতী মায়েদের কোভিড-১৯ সংক্রমিত হলেও ঝুঁকি কমে আসতে পারে। যদি কোনো জটিলতা না থাকে তবে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ভ্যাকসিন অবশ্যই নিতে পারবে যে কেউ। এক্ষেত্রে চিকিৎসক প্রয়োজনীয় কাউন্সিলিং করবেন গর্ভবতীকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখছি গর্ভবতী নারীরা কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যাচ্ছে। ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে গর্ভবতীদের করোনা সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি কমে আসবে। এতে করে মা ও শিশু উভয়েই নিরাপদ থাকবে।’
বিশ্বের অন্যান্য দেশে গর্ভাবস্থায় ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে ডা. কাজল বলেন, ‘মহামারিতে তো আমাদের বসে থাকা যাবে না। অন্য অনেক দেশে সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত দেওয়া না হলেও সেসব দেশের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুসারে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে গর্ভবতী মায়েদের। আমাদের এখানেও আশা করছি এটি খুব দ্রুতই শুরু হবে।’
সারাবাংলা/এসবি/এমও