তিন দশকেও শেষ হয়নি সড়কের নির্মাণকাজ, দুর্ভোগে লক্ষাধিক মানুষ
২ আগস্ট ২০২১ ০৮:০০
সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সদর থেকে অভ্যন্তরীণ যাতায়াতের একমাত্র উঁচু পথ তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়ক। ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের কাজ শুরু হয় ৯০ দশকের শুরুর দিকে। এর পরে তিন দশক পেরিয়ে গেছে, কিন্তু আজও যানবাহন চলাচলের উপযোগী হয়ে উঠেনি সড়কটি। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কের কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় যাতায়াত দুর্ভোগে রয়েছেন উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ। গতি নেই ব্যবসা বাণিজ্যেও। এলাকাবাসী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দ্রুত এ সড়কটি নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
এলাকাবাসী ও এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৯৩ সালে। এ সড়ক দিয়েই উপজেলার সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন বাদাঘাট, বড়দল উত্তর ও শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের লক্ষাধিক বাসিন্দা হেমন্তে ও বর্ষায় উপজেলা সদরে যাতায়াত করে থাকেন। তাছাড়া জেলার তিনটি এলসি স্টেশন (আমদানি-রফতানি বন্দর) উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নে অবস্থিত বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বাগলীতে উপজেলা সদর থেকে যাতায়াতে এই সড়কটি ব্যবহার করতে হয়। উপজেলার খনিজ বালু ও পাথর সমৃদ্ধ যাদুকাটা নদীতে যাতায়াতেও ব্যবহার করতে হয় এই সড়ক। দেশের পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান উপজেলার জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগান, বড়গোপ টিলা, শহিদ সিরাজ লেক ও লাকমাছড়াতে উপজেলা সদর থেকে যাতায়াতের একমাত্র সড়ক এটি। কিন্তু এ জরুরি সড়কটি ২৯ বছরেও ব্যবহার উপযোগী হয়ে না উঠায় যাতায়াতে চরম বিঘ্ন ঘটছে।
উপজেলার মেঘালয়ের পাদদেশে অবস্থিত চাঁনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেরিন সালমার বলেন, ‘দাফতরিক ও চিকিৎসার কাজে প্রায়ই উপজেলা সদরে যেতে হয়। যাতায়াতের একমাত্র সড়ক এটি। যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বর্ষাকালে এ দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়’।
বাদাঘাট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. তাবারক হোসেন বলেন, ‘১৭ বছর আগে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিতে তাহিরপুর যাওয়ার সময় দেখেছিলাম এ রাস্তায় কাজ চলছে। কিন্তু এত বছর পরও সড়কের কাজ সমাপ্ত হয়নি। তাই কমেনি জনদুর্ভোগও’।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কের বাদাঘাট ইউনিয়নের হুসনার ঘাট থেকে পাতারগাঁও পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সড়ক কাঁচা। এর ১ কিলোমিটার সড়ক পার হতে হয় ছোট নৌকায়। এতে রয়েছে ঝুঁকি। বাকি ১ কিলোমিটার দূরত্বও পায়ে হেঁটে চলা কঠিন হয়ে পড়ে। তাছাড়া এ সড়কের দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের টাকাটুকিয়া সেতুর উত্তর অংশের মাটি প্রতি বর্ষায় সরে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
হুসনার ঘাট থেকে জামালগড় রাস্তার সামনা পর্যন্ত এবং সড়কটির বাদাঘাট ইউনিয়নের পাতারগাঁও থেকে বাদাঘাট বাজার পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার এলাকা সংস্কারের অভাবে ভাঙা। এই বেহাল সড়ক দিয়ে নারী, শিশু, বৃদ্ধ, রোগী ও গর্ভবতীরা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। অনেকেই আবার মোটরসাইকেলে করে বিভিন্ন মালামাল চরম ঝুঁকিতে পরিবহন করছেন। এ কারণে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা।
ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালক সিরাজ মিয়া বলেন, ‘এ রাস্তায় যাত্রী বা মালামাল নিয়ে চলাচল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’।
স্থানীয় চালকলের ম্যানেজার পরাণ বৈদ্য বলেন, ‘এ রাস্তাটি যানবাহন চলাচলের উপযোগী না হওয়ায় প্রতি বস্তা চাল পরিবহনে আমাদের একশ টাকা বেশি খরচ পড়ে। এ কারণে আমাদের ব্যবসায় কোনো উন্নতি নেই’।
তাহিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী ইকবাল কবীরের কাছে সড়কটির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাহিরপুর-বাদাঘাট রাস্তাটি সংস্কারের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। নৌকা পারাপারের অংশে একটি ৭শ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতু নির্মাণ করা হবে’।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবীর এ ব্যাপারে বলেন, ‘উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ এ রাস্তাটি যানবাহন চলাচলের উপযোগী করতে বড় ধরণের অর্থ বরাদ্ধ প্রয়োজন। এজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো আছে। এ বিষয়ে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে’।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দাবি, সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় বর্ষায় বৃষ্টিতে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলের পানিতে রাস্তাটি ভেঙে যায়। এ কারণেই প্রতিবছর রাস্তাটি ভাঙনের কবলে পড়ে।
সারাবাংলা/আইই