Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কোটার দাবি বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীদের

আলতাফুর রহমান আলতাফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২ আগস্ট ২০২১ ০৯:৩৬

লালম‌নিরহাট: ‘সন্তানদের বিদ্যালয় নিয়ে গেলেও ভর্তি করতো না। ছিল না পাকা রাস্তা, বিদ্যুৎ কিংবা মসজিদ-মন্দির। অনেকেই বাঁকা নজরে তাকাতেন। অনেকেই বলতেন, আমরা ভারতীয় নাগরিক। আদতে কোনো দেশেরই নাগরিক ছিলাম না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থলসীমান্ত চুক্তির মাধ্যমে ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই রাত ১২টা ১ মিনিটে ছিটমহলগুলো বিলুপ্তির মধ্যদিয়ে আমাদের বাংলাদেশের নাগরিক করেছেন। বিনিময় চুক্তি না হলে আমাদের স্বপ্ন আজও পূরণ হতো না।’

রোববার (১ আগস্ট) লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বিলুপ্ত ১৩৫ নম্বর উত্তর গোতামারী ছিটমহলের আমিনুর রহমান এসব কথা বলেন। বিনিময়ের পর তিনি আর সেদেশে যাননি, বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে এ দেশেই থেকে যান। ফলে এখন তিনি পাচ্ছেন মৌলিক অধিকারের প্রায় সবগুলো।

আমিনুর বলেন, ভারতের বাসিন্দা হওয়ার সুযোগ ছিল আমাদের। সুযোগ পেয়েও আমরা ওই দেশে না গিয়ে বাংলাদেশের নাগরিক হয়েছি। এখন অনেক ভালো আছি। আমাদের এলাকায় এখন সরকারি সব সুবিধা বিদ্যমান। এলাকার বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে।

আমিনুরের মতো অনেকেই সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিত হয়ে ভুগেছেন কয়েক দশক ধরে। মেলেনি শিক্ষা-চিকিৎসার মতো মৌলিক অধিকারগুলো। ছিল না ভোটাধিকার। কাগজে-কলমে ভারতীয় ভুখণ্ডের বাসিন্দা হলেও সীমান্তের কাঁটাতার থেকে তাদের অবস্থান ছিল অনেক দূরে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে।

জানা গেছে, বিলুপ্ত ১১১টি ভারতীয় ছিটমহলের মধ্যে লালমনিরহাট সদর ও হাতীবান্ধায় ছিল দুটি করে ও পাটগ্রাম উপজেলার অভ্যন্তরে ছিল ৫৯টি। এর বাইরে কুড়িগ্রামে ১২, নীলফামারীতে চার ও পঞ্চগড়ে ছিল ৩৬টি ভারতীয় ছিটমহল। বিনিময় চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর থেকেই লালমনিরহাটের সঙ্গে যুক্ত হওয়া ভারতীয় ছিটমহলগুলোয় শুরু হয় ব্যাপক উন্নয়ন। সরকার শুরু করে পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোর মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন।

এসব এলাকায় এখন হয়েছে পাকা রাস্তা, এসেছে বিদ্যুৎ। অনেকেরই ঘরে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে সৌরবিদ্যুৎ। ঘরে ঘরে বসানো হয় টয়লেট, নলকূপ। হয়েছে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও শহীদ মিনার। সেচের জন্য বসানো হয়েছে সৌরবিদ্যুৎ চালিত পাম্প। বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধীদের নিয়ে আসা হয়েছে ভাতার আওতায়। আবার চাকরিতে বিশেষ কোটা চালু করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সব মিলিয়ে এখন সাবেক ছিটমহলবাসীরা বেশ ভালোই আছেন।

হাতীবান্ধার উত্তর গ্রামের (বিলুপ্ত ছিটমহল) স্কুলশিক্ষক বকুল চন্দ্র রায়ের স্ত্রী শান্তনা রানী রায় বলেন, ‘আগে বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট, ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার সুযোগ ছিল না। এখন এসব সুবিধা পাচ্ছি, আমরা অনেক ভালো আছি।‘ প্রায় একই ধরনের নানা প্রাপ্তির কথা স্বীকার করেছেন পাটগ্রামের বাঁশকাটা, লতামারি, পানিশালাসহ একাধিক বিলুপ্ত ছিটমহলের মানুষ।

উত্তর গোতামারী গ্রামের (বিলুপ্ত ছিটমহল) আজিজুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীকে কখনোই ভুলব না। তিনি আমাদের বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীকে নাগরিক করেছেন, অনেক কিছু দিয়েছেন। কিন্তু কিছু সমস্যার সমাধান চাই আমরা। যেমন সাতটি রাস্তা পাকাকরণ করার কথা থাকলেও সেসব রাস্তা এখানকার নেতারা অন্য স্থানে নিয়ে গেছেন। তাই দ্রুত রাস্তাগুলো পাকাকরণের দাবি করছি। এসব রাস্তা পাকা হলে আমাদের আর কষ্ট থাকবে না।

কলেজ শিক্ষার্থী আলামিন ইসলাম বলেন, এখন আমাদের লেখাপড়ার কোনো সমস্যা নেই। তবে সরকারের কাছে দাবি, চাকরির ক্ষেত্রে আমাদের জন্য আলাদা কোটা দেওয়া হোক।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার ভেতরকুটি বাঁশপঁচাই বিলুপ্ত ছিটমহলের হারুন অর রশিদ বলেন, বিনিময়ের পর থেকে এ দেশের অনেক সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে এখানকার বাসিন্দারা। যুগ যুগ ধরে এসব থেকে বঞ্চিত ছিলেন তারা। জমিজমাও কেনাবেচা করতে পারেন। তবে রেকর্ডের সময় কিছু ভুলত্রুটি হয়েছে, সেগুলো নিরসন করা দরকার।

সারাবাংলা/এএম

ছিটমহলবাসী


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর