৩ উপজেলার জন্য হচ্ছে জলবায়ু সহনশীল উন্নয়ন পরিকল্পনা
৩ আগস্ট ২০২১ ০৮:২২
ঢাকা: দেশের তিন উপজেলার জন্য তৈরি হচ্ছে জলবায়ু সহনশীল উন্নয়ন পরিকল্পনা। এজন্য ‘প্রিপারেশন অব ক্লাইমেট সেনসিটিভ স্ট্র্যাটেজিক ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান ফর নাজিরপুর, পিরোজপুর সদর অ্যান্ড নেছারাবাদ উপজেলা অব পিরোজপুর ডিস্ট্রিক্ট’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ কোটি ৮১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। প্রকল্পটি নিয়ে রোববার (১ আগষ্ট) দ্বিতীয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, প্রক্রিয়াকরণ শেষে অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এটি বাস্তবায়ন করবে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতায় নগর উন্নয়ন অধিদফতর।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্ক পিইসি সভার কার্যপত্রে বলা হয়েছে, দেশের উন্নয়নের মূল ধারার সঙ্গে পিরোজপুর জেলাকে সম্পৃক্ত করা এবং প্রকল্প এলাকার অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে ভূমির রূপান্তরিত ব্যবহার সামঞ্জস্যপূর্ণ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় গাইডলাইন দেওয়া হবে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কৃষি জমিকে অপরিকল্পিত পরিবর্তন হতে রক্ষা, প্রকল্প এলাকার দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সম্ভাব্য অভিযোজন কৌশল হিসেবে বিভিন্ন পলিসি ও প্ল্যান সুপারিশ করা এবং গ্রোথ সেন্টারগুলো উন্নয়নের জন্য গ্রামীণ বসতি একত্রিভূতকরণের জন্য নীতিমালা ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে। সেই সঙ্গে সাব–রেজিওনাল প্ল্যান, আরবান এরিয়া প্ল্যান, রুরাল এরিয়া প্ল্যান ও অ্যাকশন এরিয়া প্ল্যান প্রণয়ন করা হবে।
সূত্র জানায়, অন্যান উন্নয়নশীল দেশের মত বাংলাদেশের উন্নয়নও কিছুটা নগরকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। সে কারণে উন্নয়নের কল্যাণও সীমিত সংখ্যক মানুষ ভোগ করছে। সেবাগুলোর সহজলভ্যাতার অভাব গ্রামীণ অঞ্চলগুলো পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। দেশের ভবিষ্যৎ নগরায়নের ক্ষেত্রে ছোট শহরগুলোর উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। ছোট শহরগুলোর উন্নয়ন এবং সেখানে সেবার বিস্তার শহরের মানুষকে যেমন উপকৃত করবে, তেমনি অর্থনৈতিক দিক থেকেও এটি অধিক ফলপ্রসূ হবে। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সরকারের ভূমি ব্যবহার নীতিমালার মূল লক্ষ্য হলো ভূ–সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার এবং টেকসই উন্নয়ন তথা দারিদ্র হ্রাসকরণের জন্য আধুনিক ও দক্ষ ভূমি প্রশাসনের মাধ্যমে ভূমি সংক্রান্ত সেবা জনগণের কাছে পৌঁছানো।
সূত্র আরও জানায়, নগর অথবা গ্রামীণ এলাকায় অপরিকল্পিত উন্নয়নকে নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি কম্প্রিহেনসিভ ডেভলপমেন্ট প্ল্যান প্রয়োজন। এরকম প্ল্যানের অভাবে দেশের অধিকাংশ উপজেলায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মধ্যে তেমন সমন্বয় সাধন সম্ভব হয়নি। ফলে টেকসই পরিবেশ এবং জীবনমান বজায় রেখে অবকাঠামো, ইফটিলিটি সেবা এবং আধুনিক সুযোগ সুবিধার সংস্থান রাখা সম্ভব হয়নি। পরিকল্পনা প্রণয়নে উন্নয়নের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা এবং স্থানীয় উন্নয়ন সম্ভাবনাকে পরিষ্কারভাবে চিহ্নিত করে তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা আবশ্যক। সরকার উপজেলাগুলোর উন্নয়নের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে। যেসব উন্নয়নে সব সামাজিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক এবং অবকাঠামো সেবা অর্ন্তভুক্ত থাকবে। ফলে গ্রামীণ জনসাধারণের দোরগোড়ায় প্রশাসনিক ও আধুনিক সুযোগ সুবিধাদি সহজে পৌঁছে যাবে। সে জন্য পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর, পিরোজপুর সদর এবং নেছারাবাদ উপজেলার ক্লাইমেট সেনসিটিভ স্ট্র্যাটেজিক ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান প্রণয়নের জন্য সমীক্ষা প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার পর অনেক দেরিতে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) প্রাপ্তি এবং পুনর্গঠিত ডিপিপিতে বেশ কিছু ক্রুটি–বিচ্যুতি থাকায় পুনরায় পিইসি সভা আহ্বান করা হয়।
প্রকল্পের প্রস্তাবিত মূল কার্যক্রম সম্পর্কে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুল–আল রশীদ সারাবাংলাকে জানান, ফিজিক্যাল ফিচার সার্ভে, আর্থসামাজিক জরিপ এবং ভূতাত্বিক জরিপ করা হবে। এছাড়া পরিবহন জরিপ, উদ্ভিদ ও প্রাণির বেজলাইন জরিপ, হাইড্রোজিওলজিক্যাল জরিপ, পিআরএ, সেমিনার ওয়ার্কশপ, অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট এবং ওয়েবডিজাইন হোস্টিং করা হবে। পাশাপাশি ইমেজ প্রসেসিং, থ্রিডি ডিজিটাইজেশন ও ডাটাবেজ প্রস্তুতি, স্যাটেলাইট ইমেজ ও মৌজা ম্যাপ ক্রয় এবং চারটি মোটরসাইকেল ক্রয়সহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম হবে এই প্রকল্পের আওতায়।
পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে পিইসি সভার কার্যপত্রে বলা হয়েছে, কোভিড–১৯ পরিস্থিতিতে বৈদেশিক সফরের ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বাদ দেওয়া যেতে পারে। পরিপত্র অনুসারে তিন মাস পর পর পিএসসি (প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটি) ও পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) কমিটির সভার সংস্থান রেখে সম্মানীর ব্যয় প্রাক্কলন করতে হবে। প্রশ্নপত্র মূল্যায়ন এবং সমন্বয় সভা আয়োজন বাবদ সম্মানীর সংস্থান বাদ দেওয়া উচিত। এছাড়া ঢাকায় জাতীয় সেমিনার আয়োজন ১০ লাখ টাকার এবং প্রকল্প এলাকায় তিনটি পরিকল্পনা কর্মশালা আয়োজনে ছয় লাখ টাকা প্রস্তাবিত ব্যয়ের বিভাজন থাকা প্রয়োজন।
সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম