Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘একটাই চিন্তা, তৃণমূল মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৩ আগস্ট ২০২১ ১৪:৩০

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের সরকারের একটাই চিন্তা, একেবারে তৃণমূলে পড়ে থাকা যে মানুষগুলি তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করা, জীবন মান উন্নত করা, তাদের একটু সুস্থ-উন্নত জীবন দেওয়া।

মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) সকালে মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় আয়োজিত জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তার জীবনটা উৎসর্গ করেছিলেন বাংলাদেশের মানুষের জন্য। তিনি সবসময় একটি কথাই বলতেন। আমার জীবনের একমাত্র কামনা বাংলাদেশের মানুষ অন্ন পাবে, বস্ত্র পাবে, উন্নত জীবনের অধিকারী হবে। বাংলাদেশের মানুষ ছিল শোষিত-বঞ্চিত, ক্ষুধার্ত। এই বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা, এটাই ছিল তার জীবনের একমাত্র স্বপ্ন।’

স্বাধীনতার পর তিনি যে সংবিধান দিয়েছেন, সেখানে প্রত্যেকটা মানুষের যে গৃহ পাওয়ার অধিকার আছে। আবাসন পাওয়ার অধিকার আছে সেই কথাটাও তিনি স্পষ্টভাবে সংবিধানে উল্লেখ করে দিয়েছেন, বলেও স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা স্বাধীনতার পর যারা ভূমিহীন গৃহহীন, নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত তাদের ঘর করে দেওয়া, ভূমিহীনদের মাঝে খাস জমি বিতরণ করা গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন।’

মাত্র সাড়ে তিনটা বছর খুব কম সময় একটা জাতির জন্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মতো একজন দৃঢ়চেতা দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব ছিল বলে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে যুদ্ধের ভয়াবহতা কাটিয়ে উঠে আর্থসামাজিক উন্নয়নের পথে তিনি যাত্রা শুরু করেছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী, পরাজিত শক্তির দোসর, এমন কিছু বেঈমান মুনাফেকের চক্রান্তে ১৫ আগস্ট তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেইসঙ্গে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ সব একে একে ভুলুণ্ঠিত হয়। সব আদর্শকে জলাঞ্জলি দেওয়া হয়।’

বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে দেশের ফিরে আসার কথা স্মরণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘১৯৮১ সালে আমার আসার পথটা ওতো সহজ ছিল না। কারণ তখণ মিলিটারি ডিটেকটর যিনি ছিলেন, অনেক রকম বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সেদিন আমি দেখেছিলাম হাজার হাজার মানুষ। আমি যখন বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাই, তখন এয়ারপোর্টে আমার ভাই-বোন, ওরাই ছিল। কিন্তু যখন ফিরে আসি তখন হাজার মানুষ পেয়েছি। কিন্ত সেই চেনামুখগুলি পাইনি। কিন্তু আমার পার্টির লোকেরা, সমর্থকরা এবং সাধারণ অগণিত মানুষ। আমি সেখানেই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, তাদের বলেছিলাম, জাতির পিতা যে আদর্শ নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন, সেটা আমি বাস্তবায়ন করবো।’

‘আমাদের সরকারের একটাই চিন্তা, একেবারে তৃণমূলে পড়ে থাকা যে মানুষগুলি তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করা। তাদের জীবন মান উন্নত করা। তাদেরকে একটু সুস্থ জীবন দেওয়া। উন্নত জীবন দেওয়া। যে মৌলিক চাহিদাগুলির কথা আমাদের সংবিধানে আছে, সেই চাহিদাগুলি পূরণ করা’, বলেন টানা তিন মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যেকোনেনা একটা রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গেলে সরকার, সরকারি কর্মচারী, তাদের প্রয়োজন। আমাদের সংবিধানে কিন্তু সরকারি অফিসারদের কর্মচারী হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে কে উঁচু কে নিচু সেটা দেখা হয় নাই। তারা যেন একটা ভালো পরিবেশে থাকতে পারেন। তাদের মেধা মনন, শক্তি সবকিছু কাজে লাগাতে পারেন, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’

সরকারি চাকরিজীবীদের বাসস্থানের লক্ষ্যে বহুতল বিশিষ্ট ফ্ল্যাট নির্মাাণের প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্দেশ্য এই যে, আমাদের ভূমির পরিমাণ কম, জনসংখ্যা বেশি। সাড়ে সাত কোটি থেকে এখন জনসংখ্যা সাড়ে ১৬ কোটি উপরে। কাজেই আমাদের সরকারের পরিধিও বেড়েছে, কাজের পরিধি বেড়েছে। সরকারি কর্মচারিদের সংখ্যাও বেড়েছে। সেটা বিবেচনা করেই আমরা ঠিক করলাম আমরা ফ্ল্যাট নির্মাণ করে দেবো।’

মাদারীপুরে সমন্বিত অফিস ভবন উদ্বোধনের প্রসঙ্গ তুলে সরকার প্রধান বলেন, ‘এটা মাদারীপুরে প্রথম আমরা ভবন করলাম। পর্যায়ক্রমে প্রত্যেক জেলায় আমরা করবো। প্রত্যেক উপজেলায় করে দেবো। উপজেলায় শুধু সরকারি অফিস না, আমি চাচ্ছি প্রত্যেক উপজেলায় ফ্ল্যাট তৈরি করে দেওয়া। কারণ অনেকেই যারা চাকরিজীবী সেখানে যান কিন্তু থাকার অসুবিধা, ভালো বাড়ি ভাড়া পান না; নানা অসুবিধায় পড়তে হয়। সেদিকে বিবেচনা করে সেটাও আমরা করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছি, চিন্তা করছি। পর্যায়ক্রমে সব করে যাবো।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার যে স্বপ্ন সেই স্বপ্ন পূরণ করাটাই একমাত্র দায়িত্ব এবং আমি মনে করি সেটাই হচ্ছে বাংলাদেশের উন্নতি। তার থেকে ভালো চিন্তা আর কেউ কখনো করতে পারে না। কারণ এটা আমি নিজেই জানি। আমি তার বড় মেয়ে। তার কাছে আমরা এ গল্প শুনেছি, তিনি বলেছেন- কিভাবে বাংলাদেশকে সাজাতে চান।’

মুজিববর্ষে বস্তিবাসীদের ফ্ল্যাট উপহার দিতে পারার দিকটির কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এই আগস্ট মাসে আজকে যে বস্তির মানুষগুলি একটা সুন্দর থাকার জায়গা পাবে, এটাই হচ্ছে সবথেকে বড় কথা।’

মিরপুর জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে ‘বস্তিবাসীদের জন্য নির্মিত ভাড়াভিত্তিক ৩০০টি ফ্ল্যাট’ হস্তান্তরের পাশাপাশি ‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ঢাকায় নির্মিত ২৪৭৪টি ফ্ল্যাট সংবলিত ৫টি আবাসন প্রকল্প’ এবং মাদারীপুরে নির্মিত ‘সমন্বিত অফিস ভবন’ উদ্বোধন করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে যুক্ত ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রান্তে অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার। এছাড়া মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতা, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বস্তিবাসী হিসাবে ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাটের মালিকানাপ্রাপ্ত প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এনআর/এমও

তৃণমূল পরিবর্তন মানুষের ভাগ্য শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর