প্রশ্নফাঁস বন্ধের দাবিতে টিআইবির মানববন্ধন
১ এপ্রিল ২০১৮ ১৪:৪৫
।। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ।।
ঢাকা: সব ধরণের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ ও ৯ দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সামনে শান্তির পায়রা চত্বরে টিআইবি প্রশ্নফাঁস বন্ধে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।
মানববন্ধনে টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রশ্নফাঁস খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। এই পরিস্থিতি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। টিআইবির পক্ষ থেকে সব সময় এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি এবং ২০১৫ সাল থেকে গবেষণা করছি। গবেষণার ভিত্তিতে আমরা তুলে ধরেছি কীভাবে, কেমন করে, কী কী কারণে প্রশ্নফাঁস হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের গবেষণাটি যদি কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব সহকারে কার্যকর করে তাহলে এই পরিস্থিতির অবসান সম্ভব। এটাকে অনেক গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। প্রশ্নফাঁসের বিষয়টা যতটা গুরুত্ব পাওয়া দরকার ততটা পায়নি।’
পাবলিক পরীক্ষার আইনে প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের যে শাস্তির পরিমান ছিলো তা কমিয়ে ১০ বছর থেকে ৪ বছর করেছে। শাস্তির ব্যবস্থা পুনর্বহাল রাখা এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি।
সামনে আরেকটি পরীক্ষা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই না এই পরীক্ষাতেও প্রশ্নফাঁস হোক। প্রশ্নপত্র ফাঁস অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের ডিমরালাইজড করে এবং গোটা জাতির জন্য হতাশার জায়গা তৈরি করে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশে চাকরির বাজার বিদেশিদের হাতে চলে যাবে।’
প্রশ্নফাঁসে কোচিং সেন্টারের ভূমিকা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই জায়গায় সরকারকে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। বিশেষত যারা প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং দেখতে হবে এটা যেন পুনরায় শুরু না হয়।
এ ছাড়া মানববন্ধনে টিআইবি প্রশ্নফাঁস রোধে ৯ দফা দাবি উত্থাপন করে। দাবিগুলো হলো-
১. পাবলিক পরীক্ষাসমূহ অপরাধ সংশোধন আইন, ১৯৯২-এর ৪ ধারা পুনরায় সংশোধন করে শাস্তির মাত্রা পূর্বের ন্যায় সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান প্রণয়ন এবং নির্দিষ্টি ধারা অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা। ২. কোচিং সেন্টার নিষিদ্ধকরণে সরকারের ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধে নীতিমালা ২০১২-এর অস্পষ্টতা দূর করা। ৩. প্রশ্নফাঁস রোধ ও সৃজনশীল পদ্ধতির উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে গাইড বইয়ের আদলে প্রকাশিত সহায়ক গ্রন্থাবলী বন্ধে প্রচলিত আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা। ৪. তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে তদারকি বাড়ানো ও প্রচলিত আইনের অধীনে শাস্তি নিশ্চিত করা। ৫. ধাপ কমিয়ে প্রশ্ন প্রণয়ন, ছাপানো ও বিতরণের কাজটি পরীক্ষামূলকভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা। ৬. প্রশ্নফাঁস নিয়ে গঠিত যে কোনো তদন্ত প্রতিবেদন জনসম্মূখে প্রকাশ এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া। ৭. পাবলিক পরীক্ষায় প্রতিটি বিষয়ে প্রশ্নপত্রের একাধিক সেট রাখা। ৮. শিক্ষা ও পরীক্ষা পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট সকলকে যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদান করা। ৯. প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে বহুনির্বাচনী প্রশ্নব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে তুলে দেওয়া ও বাস্তবায়ন করা।
মানববন্ধনে টিআইবির পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা হয়। তাতে লেখা ছিলো- প্রশ্নফাঁসমুক্ত পরীক্ষার নিশ্চয়তা চাই, শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য সম্পৃক্ততা বন্ধ করতে হবে, সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার নিশ্চয়তা চাই, পরীক্ষা পদ্ধতির সকল পরিবর্তনে বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ করতে হবে, পরীক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলের কার্যকর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে ইত্যাদি।
সারাবাংলা/আরএম/এমআই