কারখানা বন্ধ তাই কমেছে রফতানি আয়
৩ আগস্ট ২০২১ ১৯:৩৩
ঢাকা: নতুন অর্থবছরের শুরুতেই দেশের রফতানি আয়ে নেতিবাচক প্রবনতা দেখা গেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রফতানি আয় কমে গেছে ১১ শতাংশের বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও এই আয় প্রায় সাত শতাংশ কম।
মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যাচ্ছে।
জুলাইয়ে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে ৩৪৭ কোটি ৩৪ লাখ মার্কিন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ।
এর মধ্যে, পোশাক রফতানি থেকে আয় ২৮৮ কোটি ৭২ লাখ ডলার। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১১ দশমিক দুই শতাংশ এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চার দশমিক ১৭ শতাংশ কম।
পোশাক খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে জুলাই মাসের প্রায় অর্ধেক সময় গার্মেন্টস বন্ধ থাকার কারণেই দেশের রফতানি আয় কমেছে।
এদিকে, জুলাই মাসের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৩৭২ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার।
আগের বছরে একই সময়ে রফতানির পরিমাণ ছিল ৩৯১ কোটি ৯ লাখ মার্কিন ডলার। সেই হিসাবেই প্রবৃদ্ধি কমেছে ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ। আর লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমেছে ছয় দশমিক ৮৫ শতাংশ।
রফতানিকারকরা বলছেন, করোনা মহামারি মোকাবিলায় আরোপিত কঠোর বিধিনিষেধ এবং ঈদুল আজহার কারণে টানা ১২ দিন বন্ধ ছিল রফতানিমুখী শিল্প কারখানা। তাই কমে গেছে রফতানি আয়।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান সারাবাংলাকে বলেন, জুলাইয়ে ১৮ তারিখ পর্যন্ত রফতানি আয় খুবই ভালো ছিল। তারপর গার্মেন্টস বন্ধ রাখতে হয়েছে। রফতানি কমার একমাত্র কারণ গার্মেন্টস বন্ধ থাকা।
তিনি বলেন, অন্য সময় তো নানা কারণে রফতানি কমে। এবার কমেছে শুধুমাত্র গার্মেন্টস বন্ধ থাকার কারণে। অর্ডার আছে, কিন্তু কাজ করা যায়নি।
একই রকম মন্তব্য করেছেন নিটওয়্যার ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি মো. হাতেম। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, জুলাই মাসে ১২ দিন কারখানা বন্ধ ছিল। ১৯ দিনে ২৮৮ কোটি ডলারের যে আয় হয়েছে তা খুবই ভালো। বন্ধ থাকার কারণে উৎপাদন করা যায়নি।
তিনি বলেন, কারখানা চালু থাকলে জুলাই মাসে এবার সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি রফতানি করা সম্ভব ছিল। অর্থাৎ রফতানি কম হওয়ার একমাত্র কারণ কারখানা বন্ধ থাকা। অন্য কোন কারণ নেই।
বাংলাদেশকে টেক্কা দিয়ে পোশাক রফতানি আয়ে বিশ্বে ভিয়েতনামের দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা প্রসঙ্গে মো. হাতেম বলেন, ভিয়েতনাম তিন কারণে এগিয়ে গেছে। তাদের ওখানে কোন লকডাউন ছিল না। ভৌগলিক কারণে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে তারা ২০-২৫ দিন এগিয়ে আছে। সরাসরি পণ্য রফতানি করতে পারছে। আবার চীন থেকে সড়ক পথে ২-৩ দিনে উপকরণ আমদানি করতে পারছে।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহ-সভাপতি ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, জুলাই মাসে কোরবানি ঈদ ছিল। কঠোর বিধিনিষিধে গার্মেন্টসও বন্ধ ছিল। ১৩ দিন কোন কাজ হয়নি। অর্থাৎ অর্ধেক মাসই কাজ করা যায়নি। এখনো অনেক শ্রমিক কাজে ফিরেনি।
তিনি বলেন, মূলত কাজ বন্ধ থাকার কারণেই রফতানি আয় কম হয়েছে। তারপরও যে ২৮৮ কোটি ডলার রফতানি হয়েছে, এটি অনেক বেশি।
ভিয়েতনামের দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা প্রসঙ্গে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ভিয়েতনাম বাংলাদেশকে ছাড়িয়েই যেতে পারে। কারণ ওদের বিনিয়োগকারী চীন ও জাপান। বাংলাদেশের মতো ওদেরকে নিয়ে বিশ্বে কোথাও এমন নেতিবাচক কথাবার্তা নেই। তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে নেতিবাচক কোনো আলোচনা নেই।
ইপিবির তথ্য থেকে দেখা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রথম মাস জুলাইয়ে ২৮৮ কোটি ৭২ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। যা মোট রফতানি আয়ের ৮১ দশমিক ১৬ শতাংশ। তবে টানা ১২ দিন কারখানা বন্ধ থাকায় গত অর্থবছরে চেয়ে রফতানি কমেছে ১১ দশমিক ২ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমেছে ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। একই সময়ে নিট পোশাক রফতানি হয়েছে ১৬৫ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি কমেছে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রা কমেছে শূন্য দশমিক ৮৬ শতাংশ। ওভেন পোশাক রফতানি হয়েছে ১২২ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। এ খাতে ১৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কমেছে। ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা কমেছে।
তবে, করোনা মহামারির মধ্যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি আয়ের উৎস চামড়া খাতে। বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের প্রধান বাজার ইউরোপের দেশগুলোতে করোনার প্রাদুর্ভাব কমে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসতে শুরু করায় চাহিদা বেড়ে রফতানিতে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি করে ১১৩ কোটি ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা আরও কমে ৭৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলারে নেমে আসে। সদ্য সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরের এই খাত থেকে আয় হয়েছে ৯৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার।
নতুন অর্থবছরের প্রথম মাসে চামড়া রফতানি থেকে আয় এসেছে ৯ কোটি ৫ লাখ ডলার। এ সময়ে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে শূন্য দশমিক ৬৪ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ২ দশমিক ৪২ শতাংশ।
অন্যদিকে, করোনা সংক্রমণের মুখে ধস নেমেছে হিমায়িত চিংড়ি রফতানি আয়ে। নতুন অর্থবছরের প্রথম মাসে হিমায়িত চিংড়ি রফতানি করে বাংলাদেশ তিন কোটি মার্কিন ডলার আয় করেছে। রফতানির এই খাত থেকে আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে পাঁচ দশমিক ৩৬ শতাংশ কম। এ খাতের লক্ষ্য ছিল তিন কোটি ৩০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরে আয় হয়েছিল তিন কোটি ১৭ লাখ ডলার।
এছাড়াও, বিভিন্ন কৃষি পণ্য রফতানি করে চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশ ৯ কোটি ৮১ লাখ ডলার আয় করেছে। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৮৮ শতাংশ কম।
অপরদিকে, নতুন অর্থবছরের প্রথম মাসে ধস নেমেছে পাট রফতানিতে। জুলাই মাসে পাট রফতানিতে আয় এসেছে ৬ কোটি ৭ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১০ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। এ হিসাবে এই খাতে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৪১ দশমিক ২৯ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ৫০ দশমিক ৮ শতাংশ।
সারাবাংলা/ইএইচটি/একেএম
কঠোর বিধিনিষেধ কোভিড-১৯ নভেল করোনাভাইরাস রফতানি আয় রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)