উৎসবে আলোয় সাজবে পদ্মা, থাকছে স্থায়ী স্ট্রিট লাইটিং
৪ আগস্ট ২০২১ ১৪:৫১
ঢাকা: পদ্মাসেতু এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। এক সময়ের স্বপ্ন এখন দৃশ্যমান। উত্তাল পদ্মার বুক চিরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে স্বপ্নের সেতু। দিনরাত মিলিয়ে তিন শিফটে চলছে সেতুর নির্মাণ কাজ। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ রোডওয়ে স্লাব, রেলওয়ে স্লাব ও রেলিং বসানোর কাজে। এছাড়া সেতুতে যানবাহন চলাচলের জন্য স্ট্রিট লাইটিং ও বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে স্থায়ী আর্কিটেকচারাল লাইটিং করা হচ্ছে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, আগামী বছরের জুন নাগাদ শেষ হতে পারে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ। এবং নির্মাণের পর পরই সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল উন্মুক্ত করা হবে।
প্রকল্প সূত্রে জানিয়েছে, পদ্মাসেতুতে থাকবে দুই ধরণের আলোকসজ্জার ব্যবস্থা। একটি যানবাহনের চলার পথ আলোকিত করতে স্ট্রিট লাইটিং, অন্যটি কোনো উৎসব কিংবা জাতীয় কোনো দিবসে পুরো সেতু নানা রঙে আলোকসজ্জা করার স্থায়ী ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থাকে আর্কিটেকচারাল লাইটিং বলা হচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, পদ্মাসেতুতে রোডওয়ে স্লাব বসানো হচ্ছে চারটি ভাগে ভাগ করে। মোট রোডস্লাব বসানো হবে ২ হাজার ২১৭টি। যদিও রোডস্লাব বসানোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে এই কাজ শেষ হবে। এছাড়া গত জুনে শেষ হয়েছে সেতুর রেলওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজ। সেতুতে মোট ২ হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হয়েছে। এখন এর পাশ দিয়ে গ্যাসের পাইপলাইন বসানোর কাজ চলছে। এই কাজ দুই/তিন মাসের মধ্যেই শেষ হতে পারে। এছাড়া সেতুতে রেলিং বা পারপেড ওয়াল বসানো হবে ১২ হাজার ৩৯৩টি। তবে এর কাজ কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। যদিও প্রকল্প সূত্র বলছে, সেই কাজও দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে চলেছে।
অপরদিকে, পদ্মাসেতুতে যানবাহন চলাচলের জন্য পিচ ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে গত মাস থেকে। সেতুর ৪০ নম্বর স্প্যানের ওপরের সড়কে পিচ ঢালাইয়ে কাজ শুরু হয় প্রথমে। বর্তমানে এই পিচ ঢালাইয়ের কাজ দ্রুততার সঙ্গে চলছে। পিচ ঢালাই শুরু করার আগে স্প্যানের ওপর কমলা রঙের মেমব্রেন বিছানো হয়। মেমব্রেনের পুরুত্ব তিন মিলিমিটার। এর ওপরে দুই মিলিমিটারের বিটুমিনের স্তর দেওয়া হচ্ছে। তার ওপরে দেওয়া হচ্ছে পিচ ঢালাই।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মাসেতু। এর পর একে একে ৪২টি পিলারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মাসেতু পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়। সর্বশেষ সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব অনুসারে, আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা।
মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি)। আর নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে পদ্মাসেতুর কাঠামো। প্রায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি আগামী বছরের জুনে চালু হওয়ার কথা রয়েছে।
সেতুর অগ্রগতি বিষয়ে পদ্মাসেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের সারাবাংলাকে বলেন, ‘পদ্মা সেতুর সার্বিক অগ্রগতি ৮৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। মূলসেতুর অগ্রগতি ৯৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর নদী শাসনের অগ্রগতি ৮৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। তিনটি শিফটে আমাদের কাজ চলমান রয়েছে। যত দ্রুত কাজ শেষ করা যায় সে চেষ্টাই আমরা করছি।
পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে তারা ২০২২ সালের জুন নাগাদ কাজ শেষ করতে পারবে। যেসব কাজ এখনও বাকি আছে সেগুলো দ্রুত শেষ করতে কোম্পানিগুলোকে বলা হয়েছে। আমাদের পরিকল্পনা আগামী বছরের জুনে যান চলাচলের জন্য সেতু খুলে দেওয়া।’
প্রসঙ্গত, পদ্মাসেতু এবং এর দুই প্রান্তে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেললাইন বসাতে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার আলাদা একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে রেল কর্তৃপক্ষ।
সারাবাংলা/এসজে/পিটিএম