‘স্থানীয়’ কর্মকর্তাদের গণবদলি, সিএমপিতে আতঙ্ক-ক্ষোভ
৪ আগস্ট ২০২১ ২২:২৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে (সিএমপি) কর্মরত পরিদর্শক পদমর্যাদার ১০ কর্মকর্তাকে একযোগে বদলির আদেশ এসেছে সদর দফতর থেকে। এর আগে মে মাসের শেষ দিকে অতিরিক্ত উপকমিশনার ও সহকারী কমিশনার পদমর্যাদার ১১ কর্মকর্তাকে একযোগে বদলি করা হয়েছিল। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে বদলি করা হয় আরও দুই পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে, যারা নগরীর দুই থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন।
সম্প্রতি বদলি হওয়া এই ২৩ কর্মকর্তার সবার বাড়ি চট্টগ্রাম ও আশপাশের জেলায়। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, এভাবে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ধারাবাহিকভাবে ‘গণবদলির শিকার’ হচ্ছেন বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তারা, যাদের অধিকাংশের বাড়ি চট্টগ্রামসহ আশপাশের জেলায়। কেবল নির্দিষ্ট জেলার বাসিন্দাদের এই ‘গণবদলি’ নিয়ে সিএমপিতে কর্মরতদের মধ্যে ক্ষোভ ও আতঙ্ক রয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সূত্রে এ নিয়ে নানা আলোচনা হলেও থেমে নেই বদলি।
সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর অবশ্য এসব বদলির আদেশকে ‘স্বাভাবিক’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশ সার্ভিসে একটি বিধান আছে— যার বাড়ি যে জেলায়, তিনি সেখানে চাকরি করতে পারেন না। আরেকটি নীতিমালা হচ্ছে— যে জেলার বাসিন্দা, সেই জেলার মেট্রোপলিটন ইউনিটেও চাকরি করা যাবে না। যুক্তি হচ্ছে— নিজ জেলায় বা মেট্রোপলিটনে চাকরি করলে তাদের ওপর তদবিরের চাপ থাকে।’
সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘সে বিবেচনায় প্রথম ধাপে যারা চট্টগ্রামের বাসিন্দা, তাদের বদলি করা হচ্ছে। ধারাবহিকভাবে যারা দীর্ঘদিন ধরে সিএমপি ইউনিটে চাকরি করছেন, তাদেরও বদলি করা হবে। এটি একেবারেই স্বাভাবিক বদলির অংশ।’
তবে গণবদলির শিকার বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের অন্যান্য ইউনিটে এ নীতিমালা সেভাবে কার্যকর নয়। কেবল চট্টগ্রামকে টার্গেট করেই এই নীতিমালা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিএমপির পরিদর্শক পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেলায় বাড়ি হলে সিএমপিতে চাকরি করতে পারবেন না— এমন কোনো নীতিমালা নেই। সিএমপি অধ্যাদেশেও নেই। হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজারে বাড়ি, তাদের অনেকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের চাকরি করেন। ঢাকা জেলায় বাড়ি, এমন অনেকে ডিএমপিতে আছেন। সেখানে কোনো সমস্যা না হলে সিএমপিতে হবে কেন? আবার সিএমপিতে দীর্ঘসময় ধরে চাকরি করছেন— এমন অনেকে আছেন যারা ভিন্ন জেলার বাসিন্দা, কিন্তু তাদের বদলি করা হচ্ছে না।’
‘বিশেষ উদ্দেশ্য’ নিয়ে এ বদলি শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ বদলির শিকার সিএমপির বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের।
জানা যায়, ২০১৯ সালের শেষ দিকে সিএমপিতে কর্মরত চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের তালিকা প্রণয়ন শুরু হয়। পরে ১৩ কর্মকর্তাকে একযোগে বদলির একটি আদেশ আসে, যাদের সবার বাড়ি চট্টগ্রামে। এ নিয়ে বদলি আতঙ্ক তৈরি হলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। তারপর সমালোচনার মুখে কিছুদিন বদলি বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু গত একবছর ধরে আবারও বদলির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
সিএমপি সূত্র জানায়, ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সিএমপির ৩৬ জন পুলিশ কনস্টেবলকে একযোগে বদলি করে আর্মস পুলিশ ব্যাটেলিয়নে (এপিবিএন) পাঠানো হয়, যাদের সবার বাড়ি চট্টগ্রাম জেলায়। গত ২৭ মে পুলিশ সদর দফতর থেকে সিএমপিতে কর্মরত আট জন অতিরিক্ত উপকমিশনার ও তিন জন সহকারী কমিশনার পদমর্যাদার ১১ জন কর্মকর্তাকে সংশ্লিষ্ট ইউনিটের বাইরে বদলির আদেশ আসে। এর মধ্যে ৯ জনের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলায়। বাকি দু’জনের বাড়ি পার্বত্য জেলায়।
সবশেষ মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) চারটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ১০ জন পুলিশ পরিদর্শকের বদলির আদেশ আসে। এর মধ্যে দুইটি আদেশে চার পরিদর্শককে ৭ অগাস্টের মধ্যে, বাকি দুইটি আদেশে ছয় পরিদর্শককে ১১ অগাস্টের মধ্যে সিএমপি থেকে ছাড়পত্র নিতে বলা হয়েছে। আদেশে বলা হয়েছে— তা না হলে পরদিন ৮ ও ১১ অগাস্ট থেকে তারা তাৎক্ষণিকভাবে অবমুক্ত (স্ট্যান্ড রিলিজ) হয়েছেন বলে গণ্য হবেন।
আদেশ পাওয়া পরিদর্শকদের মধ্যে পাঁচ জনকে চট্টগ্রাম রেঞ্জে ও দু’জনকে সিলেট রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে। একজন করে বদলি করা হয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও হাইওয়ে পুলিশে।
এর আগে, গত ৭ জুলাই বাকলিয়া ও চকবাজার থানার দুই ওসিকে রংপুর ও রাজশাহী রেঞ্জে বদলির আদেশ দেওয়া হয়। এক মাসে বদলি হওয়া ১২ জন পরিদর্শকের ১১ জনের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলায় এবং একজন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির বাসিন্দা।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর
গণবদলি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সিএমপি সিএমপি কমিশনার স্থানীয়দের গণবদলি