Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘অর্থসম্পদের দিকে দৃষ্টি ছিল না কামালের’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৫ আগস্ট ২০২১ ১৪:২৩

ফাইল ছবি

ঢাকা: জাতির জনকের সন্তান হলেও অর্থসম্পদের কোনো মোহ ছিল না শেখ কামালের। সবসময় সাধারণ মানুষের মতো চলাফেরা করতেন। তারুণ্যের শক্তি কাজে লাগাতে সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে বিপ্লব করার জন্য নিজেকে তিনি নিয়োজিত করেছিলেন। অথচ চক্রান্ত করে সেই শেখ কামালকেই ১৯৭৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) সকালে ‘শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭২তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন’ এবং শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার-২০২১ প্রদান অনুষ্ঠানে শেখ কামালের বড় বোন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। এসময় তিনি আরও বলেন, বাবা প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি বা জাতির পিতা হলেও অর্থসম্পদের দিকে তার কোনো দৃষ্টি ছিল না, ব্যবসা-বাণিজ্যের দিকে তার কোনো দৃষ্টি ছিল না। দেশকে গড়ে তোলা, দেশের মানুষের পাশে থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া অঙ্গনের উন্নতি করাই ছিল তার কাছে সবচেয়ে বড় কথা।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের শহিদ শেখ কামাল অডিটরিয়ামে যুক্ত ছিলেন। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল ও মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার হোসেনসহ অন্যরা।

শহিদ শেখ কামালের বহুমাত্রিক প্রতিভার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে স্মৃতিচারণ করেন তার বড় বোন শেখ হাসিনা। কামাল বেঁচে থাকলে দেশকে আরও অনেক কিছু দিতে পারতেন বলেও আক্ষেপ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু লেখাপড়া না, তখন যুদ্ধবিধস্ত দেশ গড়ে তুলতে যেখানে যখন যতটুকু কাজ করার, কামাল খুব আন্তরিকার সঙ্গেই সেই কাজগুলো করত। ক্রীড়াঙ্গনকে নতুনভাবে ঢেলে সাজিয়েছিল। সংস্কৃতি জগতেও যথেষ্ট অবদান রেখেছে।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর একটা চক্রান্ত করে কামালকে গুলি করা হয়। তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সে যখন বেঁচে যায়, তখন তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার চালানো হয়।

শেখ কামাল অত্যন্ত সাদাসিধা জীবনযাপন করতেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আবুল ফজল সাহেব একটা লেখা লিখেছিলেন। সেটা যদি কেউ পড়েন তাহলে দেখবেন কীভাবে কামালের অমায়িক ও সাদাসিধা জীবনযাপন করতো। সেটাই তিনি (আবুল ফজল) তুলে ধরেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ১৯৭৫ সালে যখন জার্মানিতে যাই তখন কামালের বিয়ে হয়েছে। ১৪ জুলাই কামালের বিয়ে হয়, আর ১৭ জুলাই জামালের। আমি কামালকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমরা বাইরে যাচ্ছি, তোর জন্য কী নিয়ে আসব? ও কিন্তু নিজের জন্য কিচ্ছু চায়নি। আমাকে বলল, তুমি আমার আবাহনী ক্লাবের ফুটবল খেলোয়াড়দের জন্য বুট নিয়ে এসো। নামও বলে দিলো। আমি আমার ডায়েরি বের করে বললাম, তুমি আমাকে লিখে দাও কোন বুট? সে লিখল এডিডাস বুট, তার লেখা আছে।

‘নিজের জন্য চাওয়া বা নতুন বিয়ে হয়েছে, তার বউয়ের জন্য কিছু চাওয়া— সেটা না। ওই খেলোয়াড়দের জন্য কী দরকার, সেটাই তার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেখান থেকে তার মানসিকতাটা বোঝা যায়,’— বলেন শেখ হাসিনা।

১৫ আগস্টের নির্মম নৃশংসতার কথা স্মরণ করে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তিনি বলেন, এই জাতির জন্য আমার বাবা এত ত্যাগ স্বীকার করলেন, বছরের পর বছর জেল খাটলেন। বারবার তাকে ফাঁসি দেওয়ার চেষ্টা করা হলো। নিজের জীবনকে তিনি তুচ্ছ জ্ঞান করে এই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য দেশকে স্বাধীন করলেন। এই বাঙালি জাতিকে একটা পতাকা দিলেন। একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিলেন। একটি জাতি হিসাবে আত্মপরিচয়ের সুযোগ দিলেন। যাদের জন্য ত্যাগ স্বীকার করলেন, যুদ্ধবিধস্ত বাংলাদেশ গড়ে তুললেন— সেই দেশেরই কিছু মানুষ ষড়যন্ত্র করে কী নির্মমভাবে হত্যা করল তাকে!

১৫ আগস্ট হামলার বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি কামালের জন্য। নূর আর কামাল একসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন কর্নেল ওসমানীর এডিসি হিসাবে কাজ করেছে। যখন বাসায় আক্রমণ হয় তখন কামাল নিচের বারান্দায় চলে যায়। ও যখন দেখে নূর-হুদা ঢুকছে, ও তাদের বলেছিল— আপনারা এসে গেছেন, খুব ভালো হয়েছে। দেখেন বাসায় কারা আক্রমণ করেছে। এই কথা শেষও করতে পারেনি। নূরের হাতের অস্ত্রই গর্জে ওঠে। ওরা ওখানেই কামালকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এত বড় বিশ্বাসঘাতকতা এই বাংলাদেশে ঘটে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ আগস্ট যদি বাঙালির জীবনে না ঘটত তাহলে এই বাঙালি অনেক আগেই বিশ্বে একটা মর্যাদা নিয়ে চলত। এই হত্যার পর বাংলাদেশকে ‘ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’ হিসাবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই ঘোষণা টেকেনি। চক্রান্তটা কোথায় কীভাবে ছিল, সেটা নিশ্চয়ই দেশের মানুষ এখন এতদিনে উপলব্ধি করতে পারে।

কামালের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আর রেহানা দু’জন বিদেশে ছিলাম বলে বেঁচে গেছি। কিন্তু হারিয়েছি আমাদের সবাইকে। বাংলাদেশের মানুষের জন্য যদি কিছু করে যেতে পারি সেটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া।

ক্রীড়াঙ্গনে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে যারা শেখ কামাল পুরস্কার পেয়েছে তাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ক্রীড়াক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে যাক— সেটাই আমি চাই। কারণ, যেকোনো জাতির জন্য শিক্ষা, ক্রীড়া, সংস্কৃতি চর্চা অপরিহার্য। এই পুরস্কারের মধ্য দিয়ে শেখ কামালের প্রতি সম্মান দেখানো হয়েছে।

সারাবাংলা/এনআর/এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেখ কামাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর