Tuesday 10 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভ্যাকসিনেশনের ৬ দিনে ক্যাম্পেইন চলবে যেখানে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৬ আগস্ট ২০২১ ২১:৪৮

ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে শনিবার (৭ আগস্ট) থেকে শুরু হচ্ছে ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইন। এই ক্যাম্পেইনের আওতায় ১২ আগস্ট পর্যন্ত দেশে বিভিন্ন পর্যায়ের জনগোষ্ঠীর মাঝ থেকে ৩২ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এই ছয় দিনে সিটি করপোরেশন, ইউনিয়ন-ওয়ার্ড ও বিভিন্ন অঞ্চল ভেদে এই ক্যাম্পেইন চালানো হবে।

শুক্রবার (৬ আগস্ট) মহাখালীর বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) প্রাঙ্গণে ‘দেশব্যাপী কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইন’ নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম।

অধ্যাপক ডা. খুরশীদ বলেন, ‘৭ আগস্ট থেকে ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগণকে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ক্যাম্পেইনে সারাদেশের চার হাজার ৬০০টি ইউনিয়নে, ১ হাজার ৫৪টি পৌরসভায় এবং সিটি করপোরশেন এলাকার ৪৩৩টি ওয়ার্ডে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। ৩২ হাজার ৭০৬ জন ভ্যাকসিন প্রয়োগকারী এবং ৪৮৪৫৯ জন স্বেচ্ছাসেবীর মাধ্যমে একযোগে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।

৬ দিনে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে যেসব স্থানে:
৭ আগস্ট: এ দিন দেশে ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইন শুরু হবে। দেশের সব ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে এ দিন ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হবে।

৮ আগস্ট: ৭ আগস্ট যেসব ইউনিয়নের ওয়ার্ডে নিয়মিতভাবে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম চলছিল সেখানে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। একই সঙ্গে ৭ পৌরসভার যেসব ওয়ার্ডে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়নি সেখানে দেওয়া হবে। এছাড়াও সিটি করপোরেশন এলাকায় ভ্যাকসিনেশন চলবে। এ দিন দেশের দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকার মানুষদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।

৯ আগস্ট: ৮ আগস্টের ধারাবাহিকতায় ৯ আগস্ট ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এছাড়াও সিটি করপোরেশন এলাকায় ভ্যাকসিনেশন চলবে। এ দিনও দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।

১০ আগস্ট: রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মাঝে যাদের বয়স ৫৫ বছরের বেশি তাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।

১১ আগস্ট: রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মাঝে যাদের বয়স ৫৫ বছরের বেশি তাদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে।

১২ আগস্ট: রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মাঝে যাদের বয়স ৫৫ বছরের বেশি তাদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে।

ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইন বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, ‘১৮ বছর বয়সীদের অনেকের আইডি কার্ড নেই। এতে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। তাই বয়স ১৮ না করে ২৫ নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যারা আগে রেজিস্ট্রেশন করেছেন তারা যেখানে কেন্দ্র নির্ধারণ করেছেন সেখানে ভ্যাকসিন নেবে। ক্যাম্পেইনের ভ্যাকসিনেশন আলাদাভাবে পরিচালিত হবে।’

তবে ওই বয়সসীমার ওপরে যারা আগেই সুরক্ষা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন করেছেন, তাদের নিবন্ধনের সময় উল্লেখ করা কেন্দ্রে গিয়েই এসএমএস পাওয়ার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন নিতে হবে বলে জানান অধ্যাপক খুরশীদ।

তিনি বলেন, ‘ইউনিয়ন, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন এলাকায় ছয় দিনের আলাদা ভাবে করা বিশেষ ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইন আলাদাভাবে পরিচালিত হবে। পঁচিশোর্ধ্ব যারা নিবন্ধন করতে পারেননি, তারাও এসময় ভ্যাকসিন নিতে পারবেন। তবে পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়স্ক জনগোষ্ঠী, নারী ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগোষ্ঠী এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। ৭ থেকে ১২ আগস্টের মধ্যে প্রতি জেলায় এক দিন করে এই কর্মসূচি চলবে।’

অধ্যাপক ডা. খুরশীদ বলেন, ‘ভ্যাকসিনকে কেন্দ্র করে সারাবিশ্বেই রাজনীতি রয়েছে। ইতোমধ্যেই ভ্যাকসিন প্রদানের পরিমাণ বেড়েছে। গত দশদিনে ৩০ লাখ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত দেশে ১ কোটি ৯৯ হাজারের বেশি মানুষকে প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। আমরা যদি বড় আকারে ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন না করতে পারি, তাহলে বিরাট জনগোষ্ঠীকে কাভার করা যাবে না। এটা আমাদের কাছে একটি পাইলট প্রজেক্ট। এ থেকে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোভ্যাক্স এবং বিভিন্ন ভ্যাকসিন উৎপাদনকারীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। দেশেও ভ্যাকসিন উৎপাদনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। নেতিবাচক চিন্তা ও কুসংস্কার পরিহার করে ভ্যাকসিন গ্রহণের মাধ্যমে করোনা প্রতিরোধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান করছি।’

এসময় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সেন্টার (এমআইএস) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান, ইপিআই কর্মসূচির ব্যবস্থাপক ডা. মওলা বক্স চৌধুরীসহ অন্যান্যরা।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) সিটি করপোরেশন এলাকায় ৭ থেকে ৯ আগস্ট ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন কার্যক্রম চলমান রাখা যাবে বলে জানায় অধিদফতর। এছাড়া এই তিনদিন প্রয়োজনে দুর্গম এলাকায় (হার্ড টু রিচ এরিয়া) স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা যেতে পারে বলেও জানানো হয়।

উল্লেখ্য, দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকার মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ অর্থাৎ ১৪ কোটি নাগরিককে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ২৬ জানুয়ারি এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে জাতীয় পর্যায়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়।

দেশে এখন পর্যন্ত সরকারের কেনা ভ্যাকসিনসহ উপহার ও কোভ্যাক্সের আওতায় দুই কোটি ৫৬ লাখ ৪৩ হাজার ৯২০ ডোজ ভ্যাকসিন এসে পৌঁছেছে।

দেশে ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাদেশের ৪০ শতাংশ নাগরিককে দিতে ১৩ কোটি ১৮ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োজন হবে। ৬০ শতাংশ নাগরিককে ভ্যাকসিন দিতে লাগবে প্রায় ২০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন। বর্তমান হারে যদি দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয় তবে চলতি বছর ১৯.৬৪ শতাংশকে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হবে বলে ধারণা করছে ভ্যাকসিন পরিকল্পনার জন্য গঠিত টাস্ক ফোর্স।

সারাবাংলা/এসবি/এমও

টপ নিউজ ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন ভ্যাকসিনেশনের ৬ দিন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর