Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাপার্ড কমপ্লেক্স নির্মাণ: ৩ বছরের প্রকল্প ঠেকেছে ১১ বছরে

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপনডেন্ট
৭ আগস্ট ২০২১ ১৩:০৩

ঢাকা: পল্লী উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে প্রয়োজনীয় আধুনিক প্রশিক্ষণ ও গবেষণার সুবিধা নিশ্চিত করতে ‘বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্সে’র সংস্কার ও আধুনিকায়ন করে বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমিতে (বাপার্ড) রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি খাতে মানবসম্পদের সক্ষমতা বাড়ানোও ছিল প্রকল্পের উদ্দেশ্য। গোপালগঞ্জের কোটলীপাড়ার এই কেন্দ্রটি প্রায়োগিক গবেষণা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে অন্য অঞ্চলের আঞ্চলিক আর্থসামাজিক বৈষম্য নিরসন করবে বলেও প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু তিন বছর মেয়াদে গৃহীত প্রকল্পটি শেষ করা যায়নি ১১ বছরেও! এখনো প্রকল্পটির কিছু কাজ বাকি রয়েছে। তবে চলমান মুজিববর্ষের মধ্যেই এটি উদ্বোধনের উপযোগী করা সম্ভব বলে আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের মার্চ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্স নির্মাণের প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ৩ বছর বাড়িয়ে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ করা হয় প্রকল্পটির। পরে দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে আরও দুই বছর বাড়িয়ে মেয়াদ করা হয় ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত। এতেও শেষ করা যায়নি প্রকল্পটি। শেষ পর্যন্ত তৃতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত অর্থাৎ আরও তিন বছর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

বিজ্ঞাপন

কমিশন সূত্র জানিয়েছে, গত ১৫ জুন এই প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৩৪৪ কোটি৭৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন করতে না পারার এই চিত্র ওই সভাতেই উঠে এসেছে। পল্লী উন্নয়ন বিভাগের সচিব রেজাউল আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভার কার্যবিবরণী জারি করা হয় গত ২২ জুন।

পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিনিধিরাও ওই সভায় অংশ নেন। তারা জানতে চান, প্রকল্পটি কবে নাগাদ শেষ করা যাবে? এসময় প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পটির বাস্তব অগ্রগতি ৯৭ শতাংশ এবং ক্রমপুঞ্জিত অগ্রগতি ৯৮ শতাংশ। চলমান মুজিববর্ষের মধ্যেই প্রকল্পটি শেষ করে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের উপযোগী করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ জানান তারা।

তিন বছর প্রাক্কলিত মেয়াদের প্রকল্পটি ১১ বছরেও কেন শেষ করা যায়নি— জানতে চাইলে বাপার্ডের মহাপরিচালক শেখ মো. মনিরুহ খান সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পটির মূল কাজ জুনেই শেষ হয়েছে। প্রকল্পটিতে বারবার সংশোধন করা হয়েছে। বাস্তবায়ন পর্যায়ে প্রকল্পটিতে বেশকিছু ভেরিয়েশন আনা হয়েছে। ফলে একাধিকবার ডিপিপি সংশোধন করতে হয়। এসব কারণেই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এত বেশি দেরি হয়েছে।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্টিয়ারিং কমিটির সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে— বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমিকে (বাপার্ড) আন্তর্জাতিক মানের পল্লী উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে উৎকর্ষ কেন্দ্রে রূপান্তর করে আধুনিক প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সুবিধা নিশ্চিত করাই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। প্রকল্পটির আওতায় মূল কাজগুলোর মধ্যে ছিল প্রায় ৩০ একর জমি অধিগ্রহণ, ১০ তলা প্রশাসনিক ভবন ও ১০তলা হোস্টেল ভবন নির্মাণ, ছয় তলা অফিসার্স কোয়ার্টার ও ছয় তলা স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণ ছাড়াও কৃষি ও পোল্ট্রি শেড এবং মৎস্য হ্যাচারি নির্মাণ।
প্রকল্প পরিচালক সভায় বলেন, প্রকল্পটিতে কাজের গতি আগের চেয়ে অনেকটা বেড়েছে। ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশনের মূল ঠিকাদার কাজে সম্পৃক্ত হলে এই গতি বেড়েছে। তবে অফিসার্স ও স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণের দায়িত্বে ছিল ঢালী কনস্ট্রাকশন। এ বছরের মার্চের মধ্যে তাদের এই দুইটি স্থাপনার কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু স্টিয়ারিং কমিটির সভা অনুষ্ঠানের সময়ও তা শেষ না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন সভার সভাপতি সচিব রেজাউল আহসান।

সভায় এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, প্রতিটি সাইটে লোকবল বাড়ানোর কারণে কাজের গতি বেড়েছে। অফির্সাস কোয়ার্টার ও স্টাফ কোয়ার্টারের ভেতরের কিছু ফিটিংসের কাজ কেবল বাকি রয়েছে। ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশনের দায়িত্বে থাকা রাস্তা, বাউন্ডারি ওয়ালের নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। কৃষি ও মৎস্য শেডের ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। এ বছরের মধ্যেই সব ধরনের কাজ শেষ করা সম্ভব বলে জানান তিনি।

সভায় এলজিইডির প্রকৌশলী আরও জানান, মূল ফটকের নির্মাণ কাজও শেষ। সেখানে টাইলস ফিটিংয়ের কাজ চলছে। দ্রুতই সেখানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি বসানো হবে। স্থাপত্য অধিদফতরের প্রতিনিধিকে বাপার্ড ক্যাম্পাস পরিদর্শন করে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি স্থাপনের কাজটি স্থাপত্য নকশা অনুযায়ী শেষ করার অনুরোধ জানানো হয় সভায়। স্থাপত্য অধিদফতরের প্রতিনিধি সভায় জানান, গেটে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি স্থাপনের সময় তাদের একজন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন।

সব ধরনের নির্মাণ কাজ শেষ করে মুজিববর্ষের মধ্যেই প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের উপযোগী করা যাবে কি না— ফের এ বিষয়ে প্রশ্ন রাখেন সভার সভাপতি। জবাবে এলজিইডির বাপার্ড সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী আযহারুল ইসলাম বলেন, দ্রুতই নির্মাণ কাজগুলো শেষ করে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের উপযোগী করতে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

সারাবাংলা/জেজে/টিআর

দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প বাপার্ড

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর