২ হাতে ২ চাপাতি নিয়ে স্ত্রীকে খুন করতে গেল স্বামী
৮ আগস্ট ২০২১ ১৭:১১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে দুই হাতে দুই ধারালো চাপাতি নিয়ে স্ত্রীকে খুন করতে যাওয়া এক ব্যক্তিকে কৌশলে নিবৃত্ত করে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, দাম্পত্য কলহের জেরে সম্মতি না নিয়ে স্ত্রী বাপের বাড়ি চলে যাওয়ায় তাকে খুন করতে গিয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। দরজা ভাঙতে দেরি হওয়ায় এবং ততক্ষণে পুলিশ পৌঁছে যাওয়ায় ‘খুনোখুনির’ হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে পরিবারটি। এমনকি পুলিশ দেখে ওই ব্যক্তি নিজের গলায় চাপাতি চালিয়ে আত্মহত্যারও চেষ্টা করে।
শনিবার (৭ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর ডবলমুরিং থানার পূর্ব গোসাইলডাঙ্গা এলাকায় মিনু ম্যানশনের ৫ম তলায় এ ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
গ্রেফতার সুজন দাশ (৪২) হাটহাজারী উপজেলার পূর্ব মেখল গ্রামের মৃত সাধন দাশের ছেলে। পরিবার নিয়ে সুজন থাকেন নগরীর আসকার দিঘির পাড়ে। সুজনের স্ত্রী সুতৃঞ্চা দাশ পূর্ব গোসাইলডাঙ্গা এলাকার তপন দাশের মেয়ে।
ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সুজন পুরনো গাড়ি কিনে মেরামতের পর বিক্রি করে থাকেন। তার স্ত্রীর অভিযোগ, তাদের সংসারে ১০ বছর ও ১০ মাস বয়সী দুই মেয়ে আছে। সুজন মাদকাসক্ত। সম্প্রতি পরকীয়ায়ও জড়িয়ে পড়েছে। সুতৃঞ্চা বিষয়টি জানার পর প্রতিবাদ করলে তার সঙ্গে প্রতিদিন ঝগড়া হয়। এমনকি সুজন তাকে কয়েকবার মারধরও করেছে। ঝগড়ার জেরে শুক্রবার সুজনের বাসা থেকে তার অমতে সুতৃঞ্চা বাবার বাসায় চলে যান।’
‘এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সুজন দুটি চাপাতি কিনে যান স্ত্রীকে খুন করতে। দুই হাতে দুই চাপাতি নিয়ে ভবনের ৫ম তলায় ওঠার সময় জানালা দিয়ে দেখে ফেলেন সুতৃঞ্চা। এর পর তিনি দ্রুত দরজা বন্ধ করে দেন। সুজন প্রথমে দরজায় ধাক্কা দেন। পরে দরজায় এলোপাতাড়ি চাপাতি দিয়ে আঘাত করতে থাকেন। এতে দরজা কিছুটা নড়বড়ে হয়ে গেলে সুতৃঞ্চার বাবা-কাকা মিলে আলনা, টেবিল, সোফা দিয়ে দরজা আটকে রাখেন। এরপর আমাদের খবর দেওয়া হলে আমরা ঘটনাস্থলে যাই’- বলেন ওসি মহসীন
ঘটনাস্থলে যাওয়া ডবলমুরিং থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অর্ণব বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সেখানে গিয়ে দেখি, সুজন চাপাতি দিয়ে বারবার দরজায় আঘাত করছে এবং স্ত্রী ও তার পরিবারের লোকজনকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। আমরা ওঠার সময় সে চাপাতি উঁচিয়ে আমাদের দিকেও কয়েকবার তেড়ে আসে। আমরা দূরে দাঁড়িয়ে তাকে বারবার শান্ত থাকার অনুরোধ করি।’
‘এসময় সুজন আমরা চলে না গেলে নিজের গলায় চাপাতি চালিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দেন। আমরা তাকে বারবার বোঝায় যে, চাপাতি ফেলে দিলে তার বিরুদ্ধে কোনো আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে না। আমাদের কথা বিশ্বাস করে একপর্যায়ে সে চাপাতি ফেলে দেয়। তখন আমরা তাকে গ্রেফতার করি। তাকে শান্ত করতে আমাদের প্রায় একঘণ্টা সময় লেগেছে। আমরা যদি ঘটনাস্থলে সময়মতো না পৌঁছাতাম তাহলে সে দরজা ভেঙ্গে ফেলত। তখন বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারত’— বলেন এসআই অর্ণব।
এ ঘটনায় সুতৃঞ্চা বাদি হয়ে সুজনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার চেষ্টা, হত্যাপ্রচেষ্টা ও হুমকি প্রদর্শনের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার এজাহারে তিনি সুজনের বিরুদ্ধে মাদক ও পরকীয়ায় আসক্ত হওয়ার অভিযোগ করেন। ১৩ আগস্ট ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে সুতৃঞ্চা বাবার বাড়িতে এসেছিলেন বলে এতে উল্লেখ করা হয়।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম