রেমিট্যান্সের জাদু সম্ভবত শেষ হতে চলেছে: দেবপ্রিয়
৮ আগস্ট ২০২১ ১৯:৩৬
ঢাকা: বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেছেন, এতদিন রেমিট্যান্সের যে জাদু ছিল সেটা সম্ভবত শেষ হতে চলেছে। তিনি বলেন, করোনা মহামারিকালেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ছিল বেশ আশাব্যঞ্জক। তবে সম্প্রতি তা নিম্নমুখী হতে শুরু করেছে।
রোববার (৮ আগস্ট) নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ‘জাতীয় বাজেট ২০২১-২২ বাস্তবায়ন: পিছিয়ে পড়া মানুষেরা কীভাবে সুফল পাবে?’ শীর্ষক এক সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন। সংলাপে অংশ নেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল, সিপিডি’র সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
মূল প্রবন্ধে দেবপ্রিয় বলেন, ‘বাংলাদেশে শুধু আয়, কর্মসংস্থান ও মজুরি কমছে না, খাদ্যপণ্যের দামও বাড়ছে। করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় বিশেষ করে মার্চ, এপ্রিল, মে ও জুন মাসের প্রভাব নিয়ে ২০২১-২০২২ অর্থবছর শুরু হয়েছে। অনেকটা দুর্বল অর্থনীতির মধ্যে দিয়েই এই অর্থবছর আমরা শুরু করেছি। এই করোনাকালে সবচেয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে পিছিয়ে পড়া মানুষের ওপর।’
তিনি বলেন, ‘নতুন অর্থবছরের খবর হচ্ছে জুলাই মাসের হিসাবে রফতানি কমেছে ১১ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থনীতির সবচেয়ে শক্তিশালী জায়গা ছিল বৈদেশিক খাত। এই খাতে জুলাই মাসের তথ্য বলছে, বৈদেশিক খাতেও এক ধরনের ভাঙন দেখা দিয়েছে। জুলাই মাসে ২৮ শতাংশ রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে।’
তিনি বলেন, ‘বিশেষজ্ঞরা সবাই একমত হবেন যে, রেমিট্যান্সের যে জাদু সেটা সম্ভবত শেষ হতে চলেছে। কারণ, মানুষ বিদেশে গিয়েছে কম, ফেরত এসেছে বেশি। সরকারি প্রণোদনার কারণে হুন্ডি থেকে মানুষ ব্যাংকিং খাতে রেমিট্যান্স প্রবাহ পাঠিয়েছেন। এ অবস্থায় জাদু শেষ হয়ে যাচ্ছে কিনা সেটাই বোঝার বিষয় রয়ে গেছে।’
দেবপ্রিয় বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে করোনা মহামারির মধ্যে পিছিয়ে পড়া মানুষদের কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়। সেজন্য উন্নয়নশীল দেশে পিছিয়ে পড়া মানুষদের সহায়তায় সরাসরি অর্থের সাহায্য বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থের প্রবাহ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে। এছাড়া অতিমারির শুরুর পর থেকে পিছিয়ে পড়া ৮০ শতাংশ মানুষ খাদ্য ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে। তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘রফতানি আবার আগের জায়গায় ফিরে যেতে পারবে কি না সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। কর আদায়সহ সব সূচক যদি বিবেচনায় নেওয়া হয় তাহলে দেখবেন নতুন অর্থবছরের প্রাথমিক সংকেত ভালো না।’
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দুর্নীতি প্রতিরোধে বাজেটে সুস্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। আমি মনে করি, এ বছর বিব্রতকর, দুর্নীতিবান্ধব, বৈষম্যমূলক ও কালো টাকা সহায়ক বাজেট হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের বাজেটে পিছিয়ে পড়া গরিব ও অসহায় মানুষদের বাইরে রাখা হয়েছে। বাজেটে বরাদ্দের কথা বলা হলেও কীভাবে তা ব্যয় হবে, সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি কতটুকু থাকবে সে বিষয়টি দেখা যায়নি।’
সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম