গণটিকার নামে গণহয়রানি— অভিযোগ বাম গণতান্ত্রিক জোটের
৮ আগস্ট ২০২১ ২২:৪৩
ঢাকা: দেশব্যাপী গণহারে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন দেওয়ার নামে জনগণকে গণহয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। এ অবস্থায় জনগণকে হয়রানিমুক্তভাবে করোনার ভ্যাকসিন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন জোটের নেতারা। একইসঙ্গে ক্রমবর্ধমান করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু ঠেকাতে অবিলম্বে দৈনিক কমপক্ষে ২ লাখ নমুনা পরীক্ষা, গ্রাম-ইউনিয়ন পর্যায়ে নমুনা সংগ্রহ করা, উপজেলা পর্যায়ে করোনা টেস্ট ল্যাবরেটরি ও ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণ করে বিনামূল্যে টেস্ট ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং কর্মহীন-শ্রমজীবী মানুষকে খাবার ও নগদ অর্থ সহয়তার পাশাপাশি গ্রাম-শহরে রেশনিং ব্যবস্থা চালুর দাবিও জানান তারা।
রোববার (৮ আগস্ট) বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের এক অনলাইন সভায় জোট নেতারা এসব দাবি জানান। বাম জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ এতে সভাপতিত্ব করেন।
সভার এক প্রস্তাবে বলা হয়, ভ্যাকসিন নিয়ে সরকার নানা তুঘলকি কাণ্ড করছে। শুরুতেই সরকার কেবল ভারতের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। চীনকে সিনোভ্যাকের তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালের অনুমতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু এখন সিনোভ্যাক থেকেই সাত কোটি ডোজ টিকা কেনার কথা বলা হচ্ছে। ওই সময় সিনোভ্যাকের ট্রায়াল হলে এবং যৌথভাবে উৎপাদনে গেলে এত দিনে দেশের প্রায় সবার ভ্যাকসিন নিশ্চিত করা যেত। এখন আবার ভ্যাকসিন প্রয়োগেও নানা অনিয়ম দেখা যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি, জনবল নিয়োগ ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাবে এবং দলীয়করণের ফলে গণটিকা গণহয়রানিতে পরিণত হয়েছে।
সভায় বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা বলেন, করোনা কেউ একা বা এক দেশের পক্ষে মোকাবিলা করা সম্ভব না। তা গত দেড় বছরে গোটা বিশ্ব বুঝলেও আমাদের দেশে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা অবৈধ সরকার যৌথভাবে সমন্বিত উদ্যোগে সবাইকে করোনা মোকাবিলায় যুক্ত করেনি। তারা সবকিছুর মতোই করোনা সংকটেও দলীয়করণ ও দলীয় সংকীর্ণতায় এককভাবে চলতে গিয়ে পরিস্থিতি লেজেগোবরে করে ফেলেছে। এর নিকৃষ্টতম শিকার হচ্ছে সাধারণ জনগণ।
সভার আরেক প্রস্তাবে বলা হয়, বাম জোট ২০২০ সালের এপ্রিল থেকেই সর্বদলীয় সভা করে করোনাকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা এবং একে মোকাবিলায় সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। বাম জোট দাবি করেছিল— দৈনিক কমপক্ষে ১ লাখ নমুনা পরীক্ষা বিনামূল্যে করানো হোক, ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণ করে বিনামূল্যে সবার করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক, বেসরকারি হাসপাতাল অধিগ্রহণ করে করোনা চিকিৎসা করা হোক, পর্যাপ্ত সাধারণ ও আইসিইউ শয্যা বাড়ানো হোক, কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ, পর্যাপ্ত হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা ও ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করা হোক। কিন্তু টাকা বরাদ্দ থাকলেও দেড় বছরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এটি শুধু সরকারে অদক্ষতা ও চরম ব্যর্থতাই নয়, জনগণের প্রতি দায়িত্বহীনতা ও গুরুতর অপরাধ।
সভার এক প্রস্তাবে বলা হয়, করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। করোনা মোকাবিলায় মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানা জরুরি। সংক্রমণ বেড়ে গেলে লকডাউন, কারফিউ দিতেও দেখা গেছে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে। আমাদের দেশে সাধারণ ছুটি, লকডাউন ইত্যাদি ঘোষণা করলেও শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের খাবার ও নগদ অর্থ ব্যবস্থা না করে ঘরে থাকতে বললে যে তা কার্যকর হবে না, এটি বাম জোট ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে বলা হলেও সরকার সে পথে হাঁটেনি। ফলে যা হওয়ার, তাই হয়েছে। লকডাউন সফল হয়নি। তাছাড়া একদিকে লকডাউনের ঘোষণা অন্য দিকে গার্মেন্টস কারখানা খোলা রাখার মতো দ্বিচারিতায় করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু ক্রমেই বাড়ছে। দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। অথচ আগেই ভারতের পরিস্থিতি যখন ভয়াবহ, তখনই সতর্ক হওয়ার সুযোগ পেয়েও সরকার তা গ্রহণ না করে জনগণকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে।
বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান খালেকুজ্জামান, সিপিবি সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশ ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা শিশু, বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মানস নন্দী, ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবীর জাহিদ, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদক কমরেড মনিরুদ্দিন পাপ্পু, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড রাজকুজ্জামান রতন, সিপিবি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল্লাহ আল কাফী রতন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য আকবর খান, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির শহীদুল ইসলাম সবুজ, ইউসিএলবি’র সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার ও গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদক বাচ্চু ভুইয়া এই অনলাইন সভায় যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর