‘আমাদের শ্রম আইন আইএলও কনভেনশনের সঙ্গে অনেকটাই সাংঘর্ষিক’
৯ আগস্ট ২০২১ ১২:৩১
মঞ্জুর মঈন। বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মী, শ্রমিক আন্দোলনের সংগঠক। এছাড়াও তিনি গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক। তার মতে, বাংলাদেশ যেসব আইএলও কনভেনশনে অনুস্বাক্ষর করেছে সেগুলো প্রতিপালন করে না। আমাদের শ্রম আইন আইএলও কনভেনশনের সঙ্গে অনেকটাই সাংঘর্ষিক। বর্তমানে বাংলাদেশের শ্রমিকরা ন্যায্য বেতন পাওয়া তো দূরের কথা কোনোভাবে বেঁচে থাকার জন্য বাজার দর অনুযায়ী যা পাওয়ার কথা সেটাও পাচ্ছে না। দেশে শ্রমিক শোষণের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) সারাবাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়সহ করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরোধে ভ্যাকসিন প্রদানসহ সার্বিক বিষয় নিয়েও কথা বলেন তিনি। তার সঙ্গে আলাপচারিতায় ছিলেন সারাবাংলার স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট আজমল হক হেলাল।
সারাবাংলা: শ্রমিকরা কি তাদের ন্যায্য বেতন পাচ্ছে? বাংলাদেশ কি আইএলও শ্রম আইন মেনে চলছে? যদি না চলে তা হলে বিষয়টি নিয়ে আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে কোনো লড়াইয়ে যাচ্ছেন না কেন?
মঞ্জুর মঈন: শ্রমিকরা ন্যায্য বেতন দূরের কথা কোনোভাবে বেঁচে থাকার জন্য বর্তমান বাজার দরে যে বেতন দরকার সেটাই পাচ্ছে না। ধরেন মালিক হিসেবে আপনি সবচেয়ে স্বার্থপরও যদি হন, তাও আপনি চিন্তা করবেন শ্রমিক খেয়ে-দেয়ে যেন তার শ্রম শক্তিটুকু বাড়াতে পারে। শ্রম শক্তির পুনরুৎপাদন যাতে ঠিক থাকে। আমাদের দেশে শোষণের মাত্রা আজ এই জায়গায় পৌঁছেছে যে, শ্রমিক এতটুকুও মজুরি বা বেতন পাচ্ছে না। আমাদের মালিকরা এবং সরকার বিশ্বের সর্বাধিক রফতানির গৌরবগাঁথা প্রচার করেন। কিন্তু বিশ্বের সর্বনিম্ন মজুরি দেওয়ার লজ্জা তাদের স্পর্শ করে না।
বাংলাদেশ যেসব আইএলও কনভেনশনে অনুস্বাক্ষর করেছে সেগুলো প্রতিপালন করে না। আমাদের শ্রম আইন আইএলও কনভেনশনের সঙ্গে অনেকটাই সাংঘর্ষিক। আমরা শ্রম আইনের সংশোধনের জন্য দীর্ঘ্য দিন ধরে আন্দোলন করে আসছি। এর আগে কয়েকবার আইন সংশোধন হয়েছে। কিন্তু সরকার প্রতিবারই মালিকদের পক্ষ নিয়ে শ্রমিকদের ধোকা দিয়েছে। গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র বিশ্ব ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত। জাতিসংঘ সংশ্লিষ্ট ফোরাম এবং আইএলওসহ বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক প্লাটফর্মে বিশ্ব ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন আমাদের প্রতিনিধিত্ব করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যে ট্রেড ইউনিয়নগুলো আমাদের আদর্শিক মিত্র তাদের সঙ্গে আমাদের নিবিড় সম্পর্ক আছে।
আমাদের গার্মেন্ট শিল্প একটা বৈশ্বিক শিল্প। এই শিল্পের শ্রমিকপক্ষের আর্ন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে যথেষ্ট প্রভাব রাখার সক্ষমতা থাকা উচিত। তাই বিগত কয়েক বছরের প্রচেষ্টায় আমরা সারা পৃথিবীর গার্মেন্ট, টেক্সটাইল ও লেদার ইন্ডাস্ট্রির ট্রেড ইউনিয়নগুলোর সমন্বয়ে একটি ট্রেড ইউনিয়ন ইন্টারন্যাশনাল গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি। এই টিইউআই গড়ে তোলা এবং পরিচালনার কাজে বাংলাদেশ এবং গার্মেন্ট শ্রমিক টিইউসি’র নেতৃস্থানীয় ভুমিকা আছে। আইএলওসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে এদেশের গার্মেন্ট শ্রমিকদের স্বার্থের পক্ষে এই টিইউআই সর্বাত্মক লড়াই করতে বদ্ধ পরিকর।
সারাবাংলা: গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠনগুলো মুলত শ্রমিকদের দাবি আদায় করার চেয়ে নিজেদের আখের গোছানোর চেষ্টা করে বলে গুঞ্জন আছে। আপনি এ ব্যপারে কী বলবেন?
মঞ্জুর মঈন: সবধরনের শ্রমিক সংগঠনই গার্মেন্ট শিল্পে আছে। শ্রেণি সচেতন ট্রেড ইউনিয়ন আছে, আবার শ্রেণি সমন্বয়পন্থী অর্থাৎ ‘মালিক-শ্রমিক ভাই-ভাই’ স্লোগান দেওয়া ট্রেড ইউনিয়নও আছে। এসবের মধ্যে ঈমানদার ট্রেড ইউনিয়ন আছে, আবার মালিকদের ‘পকেট’ ট্রেড ইউনিয়নও আছে। আমাদের উপমহাদেশের বিরাট গৌরবোজ্জ্বল ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের ইতিহাস আছে। আমাদের ট্রেড ইউনিয়ন ঐতিহ্য অনেক পুরাতন। আমাদের দেশে যেমন ঐতিহ্যবাহী নেটিভ ধরণের ট্রেড ইউনিয়ন আছে, তেমনি ইদানিং আবার এনজিও ট্রেড ইউনিয়নও প্রচুর হয়েছে। যারা বিদেশের বিভিন্ন পক্ষের কাছ থেকে অর্থ পেয়ে তাদের রাজনীতি ও কৌশল অনুসারে এদেশে ট্রেড ইউনিয়ন পরিচালনা করে থাকে। আমি যখন নতুন নতুন ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনে যুক্তহই তখন এত এত সংগঠনের হাটবাজার আমার কাছে অস্বস্তিকর ছিল। বিশেষ করে আমি ভাবতাম এত এত ভেজালের ভিরে শ্রমিকরা তার শ্রেণি স্বার্থের প্রতিনিধিত্বকারী প্রকৃত সংগঠন খুঁজে পাবে কীভাবে। আমার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে এখন এটা জানি, শ্রমিকরা অনেক প্রতিকূলতার পরও আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তার ট্রেড ইউনিয়ন খুঁজে নিতে জানে।
সারাবাংলা: শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি কত হওয়া উচিত বলে মনে করেন আপনি?
মঞ্জুর মঈন: দেখেন ন্যায্য মজুরি আর বাঁচার মতো ন্যূনতম মজুরি দুটি ভিন্ন ধারণা। আমারা এই দেশে কিন্তু এখন পর্যন্ত শ্রমিকের জন্য ন্যায্য মজুরি কখনই দাবি করতে পারিনি। আমরা বিভিন্ন সময় বাজার পরিস্থিতি অনুসারে শ্রমিকের বাঁচার মতো ন্যূনতম মজুরি দাবি করেছি। সেই দাবিতে বিরাট বিরাট শ্রমিক আন্দোলন হয়েছে। যেমন- ২০১০ সালে ন্যূনতম বেসিক মজুরি ৫ হাজার টাকা, ২০১৩ সালে ন্যূনতম বেসিক ৮ হাজার টাকা, ২০১৬-১৭ সালে ন্যূনতম বেসিক মজুরি ১০ হাজার টাকা ও মোট মজুরি ১৬ হাজার টাকার দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলন করেছে। এই দাবি কিন্তু ন্যায্য মজুরির দাবি ছিলো না। ন্যায্য মজুরি সেটা ভিন্ন ব্যাপার, একজন শ্রমিকের অর্থনীতিক অবদানের মূল্যায়নসহ অন্যান্য আরও কিছু মানদণ্ড অনুসারে ন্যায্য মজুরি নির্ধারণ হয়। আমরা যা দাবি করি গার্মেন্ট শ্রমিকদের প্রাপ্য ন্যায্য মজুরি তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি। আমারা এখন পর্যন্ত দাবি করি, চলতি বাজারে কোনোরকমে বাড়ি ভাড়া দিয়ে, খেয়ে-পরে বাঁচতে হলে অর্থাৎ কেবলমাত্র শ্রম শক্তি পুনরুৎপাদন করতে কমপক্ষে যে পরিমাণ অর্থ না হলেই নয় সেই পরিমান মজুরি। সেটুকুও কিন্তু শ্রমিকরা দাবি করে পায় না। এই সামান্য পরিমাণ মজুরি দাবি করে সেটা আদায় করতে মজুরি আন্দোলনে হাজার হাজার শ্রমিকের চাকরি যায়। শ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের জেল খাটতে হয়, সীমাহীন জুলুম নির্যাতন সহ্য করে আন্দোলন চালাতে পারলে সামান্য কিছু মজুরি বৃদ্ধি সম্ভব হয়। কিন্তু শ্রমিককে ফাও খাটানোর টার্গেট পদ্ধতি ও বাজারে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি, বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে শ্রমিকের প্রকৃত মজুরি আসলে বাড়ে না। ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত আমরা গার্মেন্ট শ্রমিকদের নিম্নতম বেসিক মজুরি ১০ হাজার টাকা এবং সর্বমোট মজুরি ১৬ হাজার টাকা দাবিতে আন্দোলন করেছি। সেই মজুরি শেষ পর্যন্ত নির্ধারণ হয়েছে বেসিক ৪ হাজার ১০০ টাকা এবং সর্বমোট ৮ হাজার টাকা। বর্তমানে আমরা দেশের সব খাতের সবধরনের শ্রমিকের অর্থাৎ জাতীয় নিম্নতম মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি করে আসছি।
সারাবাংলা: ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্ষেত্রে শ্রমিকদের অগ্রাধিকার বিষয় নিয়ে সরকার এবং মালিক পক্ষের সঙ্গে আপনাদের আলোচনা হয়েছে কি না? হয়ে থাকলে তারা কী বলেছেন?
মঞ্জুর মঈন: কোভিড পরিস্থিতির শুরু থেকেই আমরা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তাসহ তাদের মহামারিকালীন অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিয়ে সরব ছিলাম। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মালিকরা ব্যস্ত ছিল বৈশ্বিক সংকটের কথা বলে সরকারের কাছ থেকে বড় অংকের আর্থিক প্রণোদনা আদায়ের নানান চেষ্টা-তদবিরে। খেয়াল করলে দেখবেন মালিকরা প্রথমে বলেছে অর্ডার নাই। এ কথা বলে বলে তারা শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন সরকারের কাছ থেকে আদায় করেছে। তার পরেই কারখানা খোলার ঘোষণা দিয়ে গণপরিবহন বন্ধ রেখেই শ্রমিকদের শত শত মাইল পথ পায়ে হাঁটিয়ে কর্মস্থলে এনেছে। সরকারের প্রণোদনা আদায়ের পর আর তাদের অর্ডার সংকট হয়নি। দেশের সব শ্রেণি পেশার মানুষ সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে যখন সাধারণ ছুটির আওতায় বাড়িতে ছিল তখন শ্রমিকরা কারখানায় উদয় অস্ত কাজ করেছে। গতবছর মালিকরা বলেছিল, শ্রমিকদের করোনা পরীক্ষা করানোর জন্য তাদের নিজস্ব উদ্যোগে চারটি পিসিআর ল্যাব স্থাপন করবেন। সেসব কথা মিথ্যা আশ্বাস ছিল মাত্র। আজ দেখবেন শতভাগ শ্রমিককে ভ্যাকসিন দেওয়ার দাবি মালিকরা করেন না। তারা নিজেদের আর্থিক সুবিধার জন্য সরকারের কাছে এত দেন-দরবার করেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমি কোনো মালিক নেতাকে বলতে শুনিনি, শ্রমিকদের ভ্যাকসিন দেওয়া দরকার। আমরা শুরু থেকেই শিল্প শ্রমিককে সামনের সারির করোনা যোদ্ধা বিবেচনা করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের ভ্যাকসিন দেওয়ার দাবি করে এসেছি। সম্প্রতি চীনা ভ্যাকসিন দেশে না আসা পর্যন্ত সরকার শ্রমিকদে প্রতি সেইটুকু দায়িত্ব দেখায়নি। ঈদের আগে গাজীপুরের কোনাবাড়িতে ১২ হাজার তিনশ’ শ্রমিককে ভ্যাকসিন দিয়ে উদ্বোধনের মতো কিছু একটা করা হয়েছে। আমরা আশা করি, দ্রুতই প্রায় ৫০ লাখ গার্মেন্ট শ্রমিককে ভ্যাকসিন প্রদানে কার্যকর উদ্যোগ নেবে সরকার।
সারাবাংলা: সরকারের সার্বিক কার্যক্রম আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
মঞ্জুর মঈন: সরকার মালিকপক্ষের হাতের পুতুলের মতো। নয়া উদারনীতিবাদী নীতিতে যে শাসন ও শোষণ চলে, সেখানে সরকার বহুজাতিক ও একচেটিয়া পুজির স্বার্থের অনুকূলেই তার সব নীতি ও পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। কেতাবে এমনটাই আমরা দেখতে পাই। বাস্তবে সরকারগুলো মুখে কল্যাণ রাষ্ট্রের কথা বলে থাকে, শ্রমিকসহ পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য কিছু সুরক্ষামূলক কর্মসূচি নেয়, মালিক-শ্রমিক স্বার্থগত দ্বন্দ্বে যতটা সম্ভব ‘নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি’ বজায় রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় আমাদের দেশে
মালিকরা একের পর এক জুলুম শ্রমিকের উপরের চাপিয়ে যাচ্ছে। আর তাদের প্রতি সরকারের সমর্থন ও পক্ষপাত খুবই খোলামেলা। ফলে মালিকরা এত আজ্ঞাবহ সরকার পেয়ে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
সারাবাংলা: শ্রম মন্ত্রণালয় ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের জন্য শেষ কর্মদিবস পর্যন্ত সময় দিয়েছিল এবং বলেছিল যারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বেতন-বোনাস পরিশোধ না করবে তাদের শাস্তি দেওয়া হবে। কতগুলো গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন দেয়নি। যারা বেতন-বোনাস দেয়নি সরকার কি তাদের শাস্তি দিয়েছে?
মঞ্জুর মঈন: মালিকদের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা কার আছে? সরকারের তো সেই ক্ষমতা একেবারেই নাই। এটি মালিকরা তো জানেই। এমনকি সরকারও বেশ ভালো করেই জানে। ফলে সরকার বহু কঠোর নির্দেশনা জারি করে। কিন্তু মালিকরা তার কিছুই মানেন না। পাওনা পরিশোধের জন্য শেষ কর্ম দিবস পর্যন্ত সময় বেঁধে দিলে কোনদিন সেই পাওনা আদায় হবে! এবার ঈদ হয়েছে মাসের শেষের দিকে। ফলে বেতনের সমস্যার চেয়ে বোনাসের সমস্যাটাই ছিল মুখ্য। মাসের প্রথম সাত কর্ম দিবসের মধ্যে আগের মাসের বেতন পরিশোধ করাই আইন। সরকারের এমন নির্দেশনার ফলে এবার অনেক মালিক বিলম্বে, মানে একেবারে শেষ সময়ে বেতন দিয়েছে। ফলে বোনাস না দিয়েই অথবা পাঁচশ বা হাজার টাকা বোনাসের নামে ধরিয়ে দিয়ে বহু কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। খুব অল্প কিছু কারখানা বাদে বেসিকের সমান বোনাস বেশিরভাগ কারখানাই পরিশোধ করেনি।
সারাবাংলা: হাসেম ফুড কারখানায় নিহত শ্রমিকদের পরিবারের অসহায়ত্ব ও পড়ালেখা না জানার সুযোগ নিয়ে কারখানা কতৃপক্ষ নাকি নামমাত্র টাকার বিনিময়ে ক্ষতিপুরণ ও হত্যার অপরাধের দায় থেকে মুক্তির শর্তলেখা স্ট্যাম্প এবং সাদা কাগজে সই নিয়েছে। এটি প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের শামিল। এ ব্যপারে আপনারা কি আইনি লড়াইয়ে নামবেন?
মঞ্জুর মঈন: শ্রমিক হত্যার বিচার আদায় এবং শ্রমিকের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের জন্য আমরা লড়াই চালিয়ে যাব। আগের এমন সকল শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের বিচার আদায়েও আমরা ওয়াদাবদ্ধ। আইনি লড়াইটা তো করতে হবে রাষ্ট্রের, এটাই দেশের আইন। সমস্যা হলো আমাদের রাষ্ট্রপক্ষ, অর্থাৎ সরকার তার উপর সংবিধান অর্পিত দায়িত্ব সততার সঙ্গে পালন করছে না। তাজরিন, রানা প্লাজা, টম্পাকো, মাল্টিফ্যাবস এমন কত শ্রমিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এই দেশে অদ্যাবধি কোনো বিচার সংগঠিত হয়নি। বিচার না হওয়ার কারণেই বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। মালিকের অবহেলাজনিত কারণে শেজান জুস কারখানায় এতগুলো শিশুসহ শ্রমিকরা পুড়ে কয়লা হয়ে গেলো। মালিক দুইদিনের মধ্যেই জামিন পায় কি করে? পেয়েছে কারণ, মামলার এজাহার ত্রুটিপূর্ণ ছিল। এই সব বিষয়ে সমাজের বিবেকবান মানুষদের সোচ্চার হওয়া দরকার। অনিরাপদ কর্মস্থলে শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের এসব বর্বরতম অপরাধগুলোর বিচার আমাদের আদায় করতেই হবে।
সারাবাংলা: গার্মেন্টস শ্রমিকরা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছে বলে কি আপনি মনে করেন? যদি করেন তা হলে তাদের জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত?
মঞ্জুর মঈন: গার্মেন্ট শ্রমিকদের কর্মস্থলে নিরাপত্তার বিষয়টি তাজরিন ও রানা প্লাজার ঘটনার পর অনেক আলোচিত হলেও পরিস্থিতির সন্তোষজনক উন্নতি হয়নি। শ্রমিকের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে প্রথমত বিচার এবং আইনের প্রয়োগ দৃশ্যমান করতে হবে। এখনও দুই দিন পর পর শ্রমিক কর্মস্থলে তথাকথিত দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে, পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে, পুড়ে এমন অঙ্গার হচ্ছে যে, স্বজনরা মৃতদেহ পর্যন্ত পাচ্ছে না। এত কিছুর বিনিময়েও কিন্তু আমরা বিচার আদায় করতে পারিনি। শ্রমিকের কর্মস্থলে নিরাপত্তার সবচেয়ে বড় বাধা এই বিচারহীনতা। কারখানার নিরাপত্তার জন্য মালিক থেকে শুরু করে সরকারি আমলা, পরিদর্শক যারাই দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে না পারলে শ্রম আইন কিংবা বিল্ডিং কোড কিছুই শ্রমিককে নিরাপত্তা দিতে পারবে না।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম