৭৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে হচ্ছে বিদ্যুৎ ক্যাপাসিটি ব্যাংক
৯ আগস্ট ২০২১ ১৬:২৬
ঢাকা: প্রায় ৭৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ক্যাপাসিটি ব্যাংক স্থাপন করবে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। বিদ্যমান গ্রিড উপকেন্দ্র ও সঞ্চালন লাইনের ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ ব্যাংক স্থাপন করা হবে। এ জন্য বিদ্যমান গ্রিড উপকেন্দ্র ও সঞ্চালন লাইনের ক্ষমতাবর্ধন শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিদ্যমান বিভিন্ন গ্রিড উপকেন্দ্রের ক্ষমতাবর্ধন ও পুরাতন সঞ্চালন লাইনগুলোর বিদ্যমান কন্ডাক্টর প্রতিস্থাপন, দ্বিতীয় সার্কিট স্ট্রিংগিংয়ের মাধ্যমে দেশব্যাপী বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ এবং মানসম্পন্ন ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকরণ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘বাংলাদেশের বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং উৎপাদিত বিদ্যুৎ নির্ভরযোগ্য ও নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিতে উচ্চমাত্রার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন এবং উপকেন্দ্রের ক্ষমতাবর্ধনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। দেশব্যাপী লাইনের ক্ষমতাবর্ধনের জন্য প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে।’
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৭৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৭২৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ৪৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। প্রকল্পটি ৭টি বিভাগের ২৫টি জেলার মোট ৩০টি উপজেলা এবং ৫টি সিটি করপোরেশন এলাকায় বাস্তবায়ন করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বও প্রথম পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে একনেকে উপস্থাপনের আগে পিজিসিবিকে প্রকল্পটির ওপর পরিবেশ ছাড়পত্র নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়।
প্রকল্পটির অনূকুলে গত বছরের ৬ জুলাই পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। পরবর্তীতে প্রকল্প প্রস্তাবটি হালনাগাদ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা যাচাইয়ের মাধ্যমে নতুনভাবে রিভিউ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেওয়ায় গত বছরের ২২ জুলাই পরিকল্পনা মন্ত্রীর অনুমোদন নেওয়া হয়। এ জন্য চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় এটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর হতে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে পাওয়ার গ্রীড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) লিমিটেড।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান ২০১৬ অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৪০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীতকরণের জন্য নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে পাওয়ার জেনারেশন হাবে রূপান্তর করা হবে। এই কেন্দ্রগুলো থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ নিরবচ্ছিন্ন ও নির্ভরযোগ্য উপায়ে সারাদেশে সরবরাহের জন্য পিজিসিবির বিদ্যমান গ্রিড উপকেন্দ্র ও সঞ্চালন লাইনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা আবশ্যক। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পিজিসিবি জাতীয় গ্রিডের সক্ষমতা পর্যালোচনার জন্য ২০২০ সালের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদার চেয়ে ১০ শতাংশ, ২০ শতাংশ এবং ৩০ শতাংশ অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন বিবেচনা করে একটি সমীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। সমীক্ষা প্রতিবেদনে নির্ভরযোগ্য উপায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকরণের জন্য ওভারলোডেড লাইন ও উপকেন্দ্রগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্ষমতাবর্ধন করা প্রয়োজন।
এ জন্য ১০টি উপকেন্দ্রের সক্ষমতা বৃদ্ধি, ১৩২ কেভি আটটি সঞ্চালন লাইনের রিকন্ডাক্টরিং, একটি লাইনের স্ট্রিংগিং ও দুটি নতুন লাইন নির্মাণসহ ১৭টি উপকেন্দ্রে ক্যাপাসিটর ব্যাংক স্থাপনের জন্য প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে— বিদ্যমান ৫টি উপকেন্দ্রে নতুন ১০টি উচ্চক্ষমতার ট্রান্সফর্মার পুরাতন ট্রান্সফর্মার প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে মোট ১ হাজার ২০৪ এমভিএ ক্ষমতাবর্ধন, বিদ্যমান ৫টি উপকেন্দ্রে নতুন ৫টি ট্রান্সফর্মার স্থাপনের মাধ্যমে ৯৮৫ এমভিএ ক্ষমতাবর্ধন, ১৭টি উপকেন্দ্রে ৩৩ কেভি ভোল্টেজ লেভেলের ৬৩০ মেগাভার ক্যাপাসিটর ব্যাংক স্থাপন, বিদ্যমান ১৩২ কেভি ১৫১ কিলোমিটার ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন রিকন্ডাক্টরিং, বিদ্যমান ১৩২ কেভি ৩৬ কিলোমিটার সিঙ্গেল সার্কিট সঞ্চালন লাইন রিকন্ডাক্টরিং, বিদ্যমান ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা ১৩২ কেভি ৪০ কিলোমিটার সিঙ্গেল সার্কিট সঞ্চালন লাইনে দ্বিতীয় সার্কিট স্ট্রিংগিঙ প্রভৃতি। এ ছাড়া ১৩২ কেভি ৬ কিলোমিটার নতুন সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে।
সারাবাংলা/জেজে/একে ওে