Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘নায়িকা ও মডেলদের গ্রেফতারের গোটা আয়োজন প্রশ্নবিদ্ধ’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৯ আগস্ট ২০২১ ২৩:৫৩

ঢাকা: দেশে করোনাভাইরাস মহামারির এই সংকটকালে কয়েকদিন ধরে চিত্রনায়িকা ও মডেলসহ কয়েকজন নারীকে গ্রেফতার ও একে জাতীয় ইস্যুতে পরিণত করার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন শ্রমজীবী নারী মৈত্রীর সভাপতি বহ্নিশিখা জামালী ও সাধারণ সম্পাদক রাশিদা বেগম। যেভাবে এই ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছে, সেটি গোটা আয়োজনকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

শ্রমজীবী নারী মৈত্রীর নেতারা বলেন, তাদের গ্রেফতারের আয়োজন দেখে মনে হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ বাহিনীর সদস্যরা যেন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে গ্রেফতার করছে। গোটা ঘটনা গ্রেফতারের উদ্দেশ্যকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। নির্দিষ্ট কোনো পরোয়ানা ছাড়া মাদক রাখাসহ যেসব অভিযোগে তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে, তার আইনি ভিত্তি কতটুকু সেটিও বিবেচনার বিষয়। এসব অভিযোগে নারীদের আটক করতে হলে তো কেবল ঢাকা শহরের অভিজাত এলাকাগুলোরই কয়েক হাজার বাড়িতে অভিযান চালাতে হবে।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৯ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বহ্নিশিখা জামালী ও রাশিদা বেগম এসব কথা বলেন। এসব ঘটনা বিশেষ কারও মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে ঘটানো কি না, সে বিষয়েও সন্দেহ পোষণ করেন তারা।

নারী মৈত্রীর নেতারা ক্ষোভের সঙ্গে উল্লেখ করেন, এসব নারীদের আটকের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তাদের যেভাবে চিত্রিত করেছেন ও তাদের সম্পর্কে যেসব আপত্তিকর বিশেষণ ব্যবহার  করেছেন, তা তাদের পেশাগত এখতিয়ার বহির্ভূত, বেআইনি, অশোভন ও নারীদের জন্য অপমানজনক। আদালতে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার আগেই যেভাবে এই নারীদের ক্যামেরা ট্রায়াল হয়ে যাচ্ছে তা একদিকে অভিযোগের নিরপেক্ষ সুষ্ঠু তদন্তকে প্রভাবিত করছে, অন্যদিকে বিচারের আগেই তাদের বিচার হয়ে যাচ্ছে। এসব ঘটনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পেশাদারি দায়িত্বকে গুরুতরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

বিজ্ঞাপন

তারা বলেন, আমাদের বাহিনীর কোনো কোনো সদস্য ক্ষমতাবান বিশেষ কোন কোটারিদের দ্বারা প্রভাবিত কি না, নাগরিকদের মধ্যে এসব নিয়েও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা এই প্রশ্ন  আরও জোরদার করেছে।

বিবৃতিতে নারী নেতারা বলেন, দেশের অধিকাংশ গণমাধ্যম নায়িকা ও মডেলদের এসব গ্রেফতারের ঘটনা দেশের মানুষের কাছে যেভাবে হাজির করছে তা দেশের  নারীদের জন্য অসম্মান ও অমর্যাদাকর। গত কয়েকদিনের এসব বিষয়  সমাজে নারীদের ক্ষমতায়ন, অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কেও ভুল বার্তা দিচ্ছে। দেশের চলচ্চিত্রসহ সাংস্কৃতিক জগৎ সম্পর্কেও ভুল ধারণা তৈরি হবে। এমন তৎপরতা সমাজে নারীর সম্মান ও অধিকারবিরোধী বিকৃত ধর্মান্ধ প্রচারণাকে আরও জোরদার করবে।

তারা বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ রাষ্ট্র ও সমাজের চরম পুরুষতান্ত্রিক আচরণকেও দৃষ্টিকটুভাবে সামনে নিয়ে এসেছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কেননা আটক এই নারীদের সঙ্গে রাষ্ট্র ও সমাজের যেসব বিত্তবান ও ক্ষমতাবান পুরুষরা যুক্ত, তারা কোথায়? তাদের কেন এখনো আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না? জিজ্ঞাসাবাদে এই নারীরা ক্ষমতাবান যাদের নাম বলেছেন, তাদের কি আইনের আওতায় আনা হবে?

তারা আরও বলেন, আমাদের সমাজে অধিকাংশ নারী, এমনকি পেশাজীবী নারীরাও নানা দিক থেকে বিপন্ন, অসহায় ও নিরাপত্তাহীন থাকেন। তাই মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত যে রাষ্ট্রের অঙ্গীকার নারী-পুরুষের সমতাবিধান, সেই রাষ্ট্রকে তার বাহিনীদের দিয়ে নারীদের বিরুদ্ধে আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সতর্ক ও সংবেদনশীল হওয়া দরকার। আদালতে অপরাধ প্রমাণ হলে গ্রেফতার নারীরা নিশ্চয় দণ্ড ভোগ করবেন। কিন্তু তার আগেই তাদের প্রশাসনিক ও সামাজিকভাবে নিগৃহীত ও দণ্ডিত করার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। এ বিষয়ে সবাইকে এবং একইসঙ্গে গণমাধ্যমগুলোকেও দায়িত্বশীল হতে অনুরোধ জানান শ্রমজীবী নারী মৈত্রীর শীর্ষ দুই নেতা।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

বহ্নিশিখা জামালী শ্রমজীবী নারী মৈত্রী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর