প্রণোদনা বঞ্চিত দেশের আইটি খাত
১০ আগস্ট ২০২১ ১০:৩২
ঢাকা: করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলায় সরকার বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করলেও সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি তথা আইটি খাত। মাত্র ৩০টি কোম্পানি প্রণোদনার আওতায় ৪ কোটি টাকারও কম ঋণ বা মূলধনী সেবা পেয়েছে। জামানত দেখাতে না পারায় আইটি খাতের কোম্পানিগুলোকে প্রচলিত ব্যাংকিং সুবিধায় ঋণ পেতে বেগ পোহাতে হয়। একইভাবে ব্যাংকের সঙ্গে লেনদের তথ্য না থাকায় অনেক বড় বড় আইটি কোম্পানি আবেদন করেও প্রণোদনার আওতায় ঋণ সুবিধা পায়নি। খাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
জানতে চাইলে তথ্য প্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস ( বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা প্রণোদনা পাইনি। যা পেয়েছি দুটি ব্যাংকের সঙ্গে স্পেশাল ব্যবস্থায় পেয়েছি। বেসিস সদস্যরা প্রাইম ও ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ৫০ লাখ ও ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ক্যাপিটাল মানি বা ক্রেডিট সুবিধা পাচ্ছে। ৯ শতাংশ সুদে এ ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই ঋণ সুবিধা পেতেও বেসিসের চিঠি লাগে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রণোদনার জন্যে আবেদন করলেও পাব না। কারণ আমাদের কোনো ক্রেডিট রেকর্ড নেই, ঋণ নেওয়ার রেকর্ড নেই। কারণ আমরা জামানত দেখাতে পারি না। কারণ সফটওয়্যারের ভ্যালুয়েশন করার কোনো পথ নেই আমাদের দেশে। সফটওয়্যার ভ্যালুয়েশনের কোনো গাইডলাইন নেই দেশে। সেই কারণে আমরা ব্যাংক ঋণ পাই না। একইভাবে প্রণোদনার অনেকে আবেদন করতে গেছে। কিন্তু ব্যাংকের সঙ্গে কোন ক্রেডিট হিস্ট্রি না থাকায় তারা ঋণ পায়নি।’
বেসিস সভাপতি আরও জানান, প্রণোদনার আওয়াতায় ৩০টি কোম্পানি ৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ঋণ বা ক্রেডিট সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু তাও বেসিসের পক্ষ থেকে বিশেষভাবে ব্যবস্থা করা হয়েছে, সাধারণভাবে কেউ প্রণোদনা পায়নি।
এ প্রসঙ্গ বেসিসের সিনিয়র সহ সভাপতি ফারহান এ রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণ সময়েই আইটি কোম্পানিগুলো ব্যাংক লোন পায় না। কারণ জামানত দেখাতে পারে না। ফলে কোম্পানিগুলোর ব্যাংকের সঙ্গে তেমন লেনদেন নেই। করোনাকালেও তাই কোম্পানিগুলো প্রণোদনা পায়নি। কারণ তাদের ব্যাংকের সঙ্গে কোনো ক্রেডিট হিস্ট্রি নেই। বড় বড় কোম্পানিও আবেদন করে প্রণোদনা পায়নি। আবার করোনাকালেও আইটি খাত বা ডিজিটাল বাংলাদেশকে প্রাধান্য দিয়ে আলাদা কোনো ঘোষণা ছিল না। তেমন কোনো নীতি সহায়তাও ছিল না।’
জানতে চাইলে বেসিসের পরিচালক এবং ড্রিম ৭১ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশাদ কবির সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনা মহামারি শুরুর পর থেকেই বেসিস চেষ্টা করেছে মেম্বার কোম্পানিরর পাশে দাঁড়াতে। ব্যাংকগুলো অন্যান্য শিল্পগুলোকে লোন দিলেও আইটি কোম্পানিগুলি কখনই এই সুবিধা পায়নি, যেহেতু আমাদের কোম্পানিগুলো জামানত দিতে পারত না। এই প্রথম বেসিস দুইটি কমার্শিয়াল ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা স্বাক্ষর করে বেসিস মেম্বারদের জন্যে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন লোনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকার মূলত দরিদ্র মানুষকে টার্গেট করে প্রণোদনা দিয়েছে। করোনায় সবাইকে সহায়তা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আর ব্যবসায়ীদের যে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে তা মূলত ঋণ। এ ঋণের সুদের একটি অংশ সরকার পরিশোধ করবে। আমার মনে হয় আইটি খাতে যে ট্রেড বডিগুলো আছে তারা সম্ভবত প্রণোদনা নিয়ে ঠিকমতো মুভ করতে পারেনি। এফবিসিসিআই বা বিজিএমইএর মতো তাদের অবস্থান শক্ত ছিল না। তারা আইটি খাতের রফতানি আয় বা প্রণোদনা পাওয়ার ফ্যাক্ট হয়তো সরকারের কাছে হয়ত তুলে ধরতে পারেনি। এই তুলে ধরার কাজটি সঠিকভাবে করতে পারেনি। উপস্থাপন করতে না পারার কারণেই হয়তো তারা বঞ্চিত হয়েছে বলে আমার মনে হয়। একইভাবে তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের দায়িত্ব কিন্তু আইটি খাতের ভালো মন্দ দেখার। হয়তো তারাও বিষয়টি ভালোভাবে তুলে ধরতে পারেনি। এদিকে তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে কল করালেও তাকে পাওয়া যায়নি।’
প্রসঙ্গত, করোনা ভাইরাসের প্রকোপে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পকারখানা মালিক ও সেবা খাতের বড় ব্যবসায়ীদের জন্য গত বছর প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনার ঘোষণা দেয় সরকার। আর ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের ব্যবসায়ীদের ৪ শতাংশ সুদে দেওয়া হয় প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। মূলত এ সব ঋণের সুদ হার ছিল ৯ শতাংশ। বাকি সুদের টাকা ভর্তুকি দেয় সরকার। তবে আইটি খাতের জন্য আলাদা করে কোনো প্রণোদনার ঘোষণা দেওয়া হয়নি।
সারাবাংলা/ইএইচটি/একে