ঢাকা: মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামির আপিল শুনানির সময় বিচারপতি জানতে পারলেন, আসামির বাড়ি নিজের পাশের গ্রামে। এ কারণে আপিল শুনানির জন্য গঠিত বেঞ্চ থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান।
মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চে কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার ছিলনী গ্রামের বাসিন্দা মকবুল হোসেন ওরফে মকবুল হাসানের আপিল শুনানি চলছিল। শুনানির সময় আসামি মকবুলের গ্রামের নাম শুনে বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান বলেন, ‘এর বাড়ি আমার পাশের গ্রামে। এ মামলার শুনানিতে আমি থাকতে চাই না।’
প্রধান বিচারপতির তাৎক্ষণিক অনুমতিক্রমে বিচারপতি নুরুজ্জামান মামলার শুনানির বেঞ্চ থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন।
মামলার শুনানিতে আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন ফজলুর রহমান ও উম্মে কুলসুম বেগম রেখা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।
এ বিষয়ে আইনজীবী ফজলুর রহমান বলেন, মামলাটি আজ আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ছিল। সকালে শুনানি শুরু হলে মামলায় আসামির ঠিকানা দেখে বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান নিজেকে শুনানি থেকে প্রত্যাহার করে নেন। মামলার রায়ের ক্ষেত্রে যেন কোনো ধরনের প্রভাব না পড়ে কিংবা নিজের অজান্তে কোনো সহানুভূতি (সিমপ্যাথি) চলে না আসে, সেই বিবেচনা থেকেই তিনি মামলার শুনানি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন।
পরে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, আইনের কথা তো কেবল ন্যায় বিচার নয়, ন্যায় বিচারকে দৃশ্যমান করতে হবে। আজ বিচারপতি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটি সঠিক সিদ্ধান্ত। তিনি সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি। এখন আদালতের রায়ে যদি আসামির সাজা বা খালাস হলে জনমনে প্রশ্ন উঠতে পারে যে আসামি বিচারপতির এলাকার বলে বিশেষ কোনো বিবেচনা করা হয়েছিল কি না। তাই ন্যায় বিচারের স্বার্থেই বিচারপতি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, আসামি মকবুল হোসেন ওরফে মকবুল হাসানের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার ছিলনী গ্রামে। কাজের জন্য তিনি ঢাকার সবুজবাগ থানার উত্তর মুগদাপাড়া এলাকায় থাকতেন। ২০০৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর ওলিউল্লাহ নামে এক ব্যক্তি খুন হয়। সেই মামলায় আসামি করা হয় মকবুল হোসেনকে।
২০০৬ সালে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল মকবুল হোসেনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন। এরপর ডেথ রেফারেন্স হিসেবে মামলাটি হাইকোর্টে আসে। আসামিও আপিল করেন। হাইকোর্ট ২০১২ সালে আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।
পরে এ রায়ের বিরুদ্ধেও আপিল দায়ের করেন মকবুল হোসেন। ওই আপিলটি শুনানির জন্য মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) আপিল বিভাগের কার্যতালিকার এক নম্বরে ছিল।