ভাই হত্যার দায় ভাইয়ের ওপর চাপানো: ২ কর্মকর্তাকে হাজিরের নির্দেশ
১১ আগস্ট ২০২১ ২০:৫৪
ঢাকা: বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় আট বছর বয়সী ছোট ভাইকে হত্যার দায় ১২ বছর বয়সী বড় ভাইয়ের ওপর চাপানোর ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে দুই তদন্ত কর্মকর্তাকে সশরীরে হাজিরের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ২১ আগস্ট তাদের হাজির হতে বলা হয়েছে।
ওই মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন সারিয়াকান্দির থানার উপপরিদর্শক বর্তমানে নাটোরে সিআইডির পরিদর্শক নয়ন কুমারকে হাজির হয়ে এ ঘটনার লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। অপরদিকে বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা বগুড়ার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) উপপরিদর্শক মো. মনসুর আলীকে মামলার নথি (সিডি) নিয়ে হাজির থাকতে বলা হয়েছে।
নয়ন কুমার ওই শিশুকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দিয়েছিলেন। আর মনসুর আলী ওই শিশুকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন দুই আসামিকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেন।
বুধবার (১১ আগসট) বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. বশির উল্লাহ।
এর আগে গত ২৯ জুন হাইকোর্ট তাদেরকে ৩ আগস্ট হাজির হতে বলেছিলেন। কিন্তু ওইদিন করোনার কারণে আদালত বন্ধ থাকায় শুনানি হয়নি।
গত ২০ জুন বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় আট বছর বয়সী ছোট ভাইকে হত্যার দায় ১২ বছর বয়সী বড় ভাইয়ের ওপর চাপানোর ঘটনায় আদালত বলেছিলেন, ‘এটা তো দুঃখজনক। যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে এবং এটি যদি সত্য হয়, তাহলে সেটি আমাদের দেশের জন্য দুঃখজনক। আমরা এখনও জানি না কী ঘটেছে।’ এ সময় রাষ্ট্রপক্ষকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার জন্য বলেন আদালত।
‘পুলিশের ভুলে ১২ বছরের শিশুর ঘাড়ে ছোট ভাই হত্যার দায়’ শিরোনামে একটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদ যুক্ত করে হাইকোর্টে আবেদন করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মো. শিশির মনির।
পত্রিকায় প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২৫ আগস্ট ৮ বছরের শিশুর মরদেহ উদ্ধারের একদিন পর সারিয়াকান্দি থানায় মামলা করেন তার বাবা মহিদুল। ওই বছরের ২৯ নভেম্বর হঠাৎ করেই স্থানীয় থানার একদল পুলিশ তার বাড়িতে যায়। জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা বলে ১২ বছরের বড় ছেলেকে নিয়ে যায় তারা। ‘আমরা পুলিশের সঙ্গে থানায় যাই। কিন্তু মামলাটির তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা নয়ন কুমার আমাকে ছেলের সঙ্গে দেখা করতে দেননি’- অভিযোগ করেন মহিদুল।
তিনি বলেন, ‘ছেলেকে দেখতে না পেলেও আমরা তার চিৎকার শুনতে পাই। কিছুক্ষণ পর পুলিশ আমাদের বাড়ি চলে যেতে বলে এবং পরদিন আদালতে ছেলের সঙ্গে দেখা করতে বলে।’ পরদিন ৩০ নভেম্বর পুলিশ বড় ছেলেকে বগুড়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে। সেখানেই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় সে। বাবা-মা ছোট ভাইকে তার চেয়ে বেশি ভালোবাসায় তাকে খুন করেছে বলে জানায় বড় ছেলে।
অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার কারণে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন এবং পরিবারের সঙ্গে থাকার অনুমতি দেন। কিন্তু, সন্দেহভাজন হিসেবে প্রতিটি শুনানিতেই উপস্থিত থাকতে হয়েছে ওই শিশুকে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১২ বছর বয়সী শিশুটিকে শুধু ভাই হত্যা মামলায় গ্রেফতারই দেখানো হয়নি, তার কাছ থেকে জোরজবরদস্তি করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ দিনমজুর মহিদুলের।
তিনি বলেন, ‘খুনিরা প্রভাবশালী। পুলিশ তাদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছে। আমার ছোট ছেলেকে খুনের স্বীকারোক্তি দিতে বড় ছেলেকে বাধ্য করা হয়েছে।’
বড় ছেলের জবানবন্দি রেকর্ড করার পর তাকেই একমাত্র অভিযুক্ত দেখিয়ে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। কিন্তু মহিদুল এতে নারাজি দিলে, ২০১৭ সালে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেন আদালত।
পিবিআইয়ের চার বছরের তদন্তে বড় ছেলে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছে। পিবিআই খুনের সঙ্গে জড়িত দুজনকে গ্রেফতারও করতে পেরেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের কর্মকর্তারা।
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম