‘টিকটক অর্থ উপার্জনের লোভ দেখিয়ে তরুণ প্রজন্মকে বিপথগামী করছে’
১২ আগস্ট ২০২১ ০০:০৩
ঢাকা: টিকটক থেকে অর্থ উপার্জনের প্রলোভন দেশের তরুণ প্রজন্মকে বিপথগামী করছে জানিয়ে অবিলম্বে এ ধরণের লোভনীয় ক্যাম্পেইন বন্ধের দাবি জানিয়েছে টেলি কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টিক্যাব)।
বুধবার (১১ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানান টিক্যাবের আহ্বায়ক মুর্শিদুল হক।
মুর্শিদুল হক বলেন, ‘সম্প্রতি টিকটক বাংলাদেশে এর ব্যবহারকারীদের একটি ইউনিক ইনভাইট কোড ব্যবহার করে নতুন ইউজার সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষ ১০০ থেকে ১০ হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত দিচ্ছে। এমনকি টিকটক অ্যাপের লিডারবোর্ড নামক একটি অপশনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শীর্ষ দশজন ইনভাইটকারীকে ৩০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা দেওয়ার মতো লোভনীয় অফার দিচ্ছে। এছাড়াও ভিডিও দেখা ও ভিডিও বানিয়েও ইনকামের সুযোগ দিচ্ছে। স্ন্যাক ভিডিও নামের আরেকটি অ্যাপও একই ধরণের ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে। আর এইসব লোভনীয় ক্যাম্পেইনের প্রলোভনে পরে দেশের তরুণ সমাজ টিকটকের প্রতি আরও বেশি আসক্ত হয়ে পড়ছে। দৈনন্দিন সময়ের একটি বড় অংশ তারা টিকটকের পেছনে ব্যয় করছে। যদিও ব্যয় করা সময় ও মেধার তুলনায় প্রাপ্ত অর্থ অতি নগন্য। করোনা ভাইরাসের ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এ প্রবণতা আরও বেড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘টিকটক মূলত একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও তৈরির অ্যাপ্লিকেশন, যেখানে ৩ থেকে ১৫ সেকেন্ডের ছোট মিউজিক ভিডিও, ডায়ালগ ও কমেডি ভিডিও তৈরি করে থাকেন এর ব্যবহারকারীরা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় বিনোদনের নামে আসলে টিকটক জুড়ে চলছে অশ্লীলতা ও ভিনদেশি সংস্কৃতির সাথে চরম বেহায়াপনা। টিকটকের পূর্বের নাম ছিল মিউজিক্যাল.লি এবং সম্প্রতি একটি চীনা সংস্থা ‘ডুইন’ মিউজিক্যাল.লি’র সাথে একীভূত হয়ে নাম দিয়েছে টিকটক। আমাদের দেশের তরুণদের মাঝে অ্যাপটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। গড়ে উঠেছে টিকটকভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপ। আর এসব গ্রুপ নিয়মিতই একসঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ট্যুর ও পার্টি প্লান করছে। ঘটছে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। সম্প্রতি ধর্ষণ ও নারী পাচারের মতো কার্যক্রমে টিকটিকারদের নাম আসায় সাধারণ মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টিকটক বন্ধের দাবি জানায়। কিন্তু এসব নেতিবাচক ঘটনার ফলে যেখানে টিকটক থেকে মানুষের মুখ ফিরিয়ে নেয়ার কথা উল্টো সেখানে এ ধরণের লোভনীয় ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে টিকটক আমাদের তরুণ প্রজন্মকে আরও বেশি আসক্ত করে ফেলছে।’
টিক্যাব আহ্বায়ক বলেন, ‘গেল বছরের ২৯ জুন আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত তাদের স্বাধীনতা, অখণ্ডতা ও নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর অবহিত করে টিকটক নিষিদ্ধ করে। এমনকি চীনের ঘনিষ্ট বন্ধু পাকিস্তানও গেল বছরের ১১ অক্টোবর থেকে অনৈতিক ও অশ্লীল ভিডিও প্রচারের অভিযোগে টিকটক নিষিদ্ধ করে। যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা টিকটকের উপরে নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে চীন নিজেও নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তাদের দেশে টিকটকের গ্লোবাল ভার্সন ব্লক করে রেখেছে। সেখানে টিকটকের ক্র্যাক ভার্সন চলছে। এ অবস্থায় আমরা আশঙ্কা করছি আমাদের দেশের ব্যবহারকারীও যথেষ্ট নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন।’
মুর্শিদুল হক বলেন, ‘টিকটকের উপকারিতার চেয়ে অপকারিতাই বেশি। অশ্লীলতা, আজে বাজে ডায়ালগ, বিদেশি মিউজিক, কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি টিকটকের ফলোয়ার বাড়ানো ও ভাইরাল হওয়ার প্রধান কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছেন বেশির ভাগ ব্যবহারী। এসব ভিডিও দেশের সংস্কৃতি ও নৈতিক মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক। আমাদের শোবিজ তারকারাও বিভিন্ন সময় দেশীয় বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখতে দর্শকদের অনুরোধ জানালেও টিকটকে এসে তারাও নীতি নৈতিকতা ভুলে বিদেশি মিউজিক ও রুচিহীন ডায়ালগে ভিডিও বানাচ্ছেন। এ অবস্থায় দেশের তরুণ সমাজকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে টিকটক, লাইকি, স্ন্যাক ভিডিওসহ এ ধরণের অ্যাপগুলো অবিলম্বে বন্ধ অথবা বন্ধ না হলেও কমপক্ষে অশ্লীলতা ও অপরাধ প্রবণতা বন্ধে কার্যকর নজদারি চালাতে সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি নিজেদের ছেলেমেয়ে ও কাছের বন্ধু-বান্ধবদের টিকটক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে দেশের সচেতন নাগরিকদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম