Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মুম্বাইয়ের রাজ কুন্দ্রার মতোই ঢাকায় পর্নোগ্রাফির জগৎ ছিল রাজের

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১২ আগস্ট ২০২১ ১১:৫২

ঢাকা: র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) ভাষ্যমতে, ভারতীয় চিত্রনায়িকা শিল্পা শেঠীর স্বামী রাজ কুন্দ্রার মতোই পর্নোগ্রাফির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ। ইতোমধ্যেই পর্নোগ্রাফির বিষয়ে র‌্যাবকে তথ্য দিয়েছেন চিত্রনায়িকা পরীমনির এই ঘনিষ্ঠজন।

৪ আগস্ট সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বনানীর সাত নং সড়কে নজরুল ইসলাম রাজের বাসায় ও তার অফিসে অভিযান চালায় র‌্যাব। তার অফিস থেকে পর্নোগ্রাফি তৈরি ও বিকৃত যৌনাচার করার সরঞ্জামাদি জব্দ করে র‌্যাবের আভিযানিক দল।

বিজ্ঞাপন

নজরুল ইসলাম রাজের বিষয়ে জানতে চাইলে তার সঙ্গে রাজ কুন্দ্রাকে মিলিয়ে র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাজ কুন্দ্রা পর্নোগ্রাফির অভিযোগে মুম্বাই পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। এ ঘটনায় ভারতসহ বিশ্ব মিডিয়ায় আলোচনা-সমালোচনা চলছিল। ঠিক তার কয়েকদিন পরই গ্রেফতার করা হয় বাংলাদেশের নজরুল ইসলাম রাজকে। দুজনের নামেই রয়েছে রাজ শব্দটি। দুজনেই অবৈধ পর্নোগ্রাফির সঙ্গে যুক্ত। দুজনেই পর্নোগ্রাফি তৈরির রাজা। দুজনেই প্রায় কাছাকাছি সময়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন।

রিমান্ডে থাকা রাজ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে জানিয়েছেন, কীভাবে পর্নোগ্রাফির জগতে প্রবেশ করলেন তিনি। কীভাবে কাদের দিয়ে এই পর্নোগ্রাফি তৈরি করতেন। দেশে-বিদেশে কোন হোটেলে থাকতেন, কোন কোন মডেলকে কীভাবে ব্যবহার করা হতো, সবই বলেছে রাজ।

অভিযান সম্পর্ক জানতে চাইলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সারাবাংলাকে বলেন, অভিজাত এলাকাকেন্দ্রিক এসব চক্রের মূল হোতা রাজ। তার মোবাইলে অনেক পর্ন ভিডিও পাওয়া গেছে। বিকৃত যৌনাচারের কিছু উপকরণও তার বাসা থেকে জব্দ করা হয়। এ ছাড়া রাজের ছায়াতলে থাকা অন্যদের ব্যাপারেও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

তদন্ত সংশ্নিষ্ট একটি সূত্র জানায়, উঠতি মডেলদের নানা টোপ দিয়ে ভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার মূল হোতা হলেন প্রযোজক রাজ ও রয়েল খান। রাজ গ্রেফতার হলেও রয়েল এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। সুন্দরী উঠতি কোনো মডেলের দিকে নজর পড়লেই তারা প্রলোভনের ফাঁদ পাততেন। এরপর তাদের রাতারাতি দামি গাড়ি ও গহনাসহ বিলাসবহুল জিনিসপত্র উপহার পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতেন। বিনিময়ে তাদের কথা মতো ওই প্রভাবশালীদের সঙ্গে একান্তে সময় কাটানোর প্রস্তাব দেন। অনেকেই এই ফাঁদে পা দিতেন।

জানা গেছে, মডেলদের বিদেশে নিয়ে অনৈতিক কারবারে জড়ানোর হোতাদের তালিকায় আরও আছেন জুনায়েদ করিম জিমি ও শরফুল হাসান ওরফে মিশু। এই চক্রটিকে অর্থ দিয়ে বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করতেন চা শিল্পের সঙ্গে জড়িত এক শিল্পপতি। র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসান তাদের ম্যানেজ করতেন। কাকে কোথায় পাঠাতে হবে তার দায়িত্বও ছিল জিসানের।

গোল্ড মাফিয়া রফিকুলের সঙ্গেও রাজের সখ্য: রাজ জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানিয়েছে অবৈধপথে স্বর্ণ চোরা কারবারি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম ওরফে সোনা রফিকের সঙ্গে তার সখ্য রয়েছে। রফিকের সঙ্গে রাজের সম্পর্কের সূচনা বছর ছয়েক আগে।

‘সোনা রফিকের’ উত্থান হয় গোল্ডেন মনিরের হাত ধরে। এরা দুজনই বিমানবন্দরের পাচার হয়ে আসা স্বর্ণ লুট ও অবৈধভাবে সোনা নিয়ে এসে তা বিক্রি করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যান।

সোনা চোরাকারবারি করে অঢেল অর্থ উপার্জনের পর রংধনু ক্রিয়েশনস নামে একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন রফিক। সেই রংধনু ক্রিয়েশনসের অফিসে উঠতি বয়সী তরুণীদের এনে নানাভাবে নির্যাতন করা হতো বলে তথ্য দিয়েছেন রাজ। নির্যাতিত তরুণীদের কেউ কেউ সহযোগিতার জন্য রাজের দ্বারস্থ হতেন। কিন্তু রাজের সঙ্গে রফিকুলের সম্পর্ক যে গলায় গলায় তা বুঝতেন না ভুক্তভোগী তরুণীরা। ফলে সোনা রফিকের খপ্পড়েই থাকতে হতো তাদের।

জানা গেছে, বেশ কয়েকজন নারীকে সোনা রফিকের খপ্পরে পড়ে খারাপ খারাপ দৃশ্যে শ্যুটিং করতে হয়েছে। আইনি জটিলতায় না জড়ানোর শর্তে ওই নারীদের কেউ কেউ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তথ্য দিতে শুরু করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, রাজ যেসব উঠতি মডেলকে টোপ দিয়ে ফাঁসিয়েছেন, তার একটি তালিকাও গোয়েন্দারা হাতে পেয়েছেন। সেখানে দুই শতাধিক নাম রয়েছে। ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে তিনি পর্নো ভিডিও তৈরি করছিলেন কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া তার আন্ডারওয়ার্ল্ড কানেকশনে শটগান সোহেল ওরফে সোহেল শাহরিয়ার নামে আরেকজনের ব্যাপারেও চলছে অনুসন্ধান।

সারাবাংলা/ইউজে/এএম

নজরুল ইসলাম রাজ রাজ কুন্দ্রা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর