স্ত্রীর সঙ্গে সম্মতিবিহীন যৌন মিলনও ধর্ষণ
১২ আগস্ট ২০২১ ১৬:৩০
নারী-পুরুষের মধ্যে যৌন মিলনের ক্ষেত্রে সম্মতি থাকতেই হবে। বিবাহিতদের ক্ষেত্রেও আইন একইরকম থাকবে। ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় কেরালা রাজ্যের হাইকোর্ট এমন রায় ঘোষণা করেছে।
এই মামলার আবেদনে এক নারী বলেছিলেন, তিনি অসুস্থ থাকলেও তার স্বামী তাকে নিয়মিত যৌন মিলনে বাধ্য করতেন। কেরালা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি কওসার এডাপ্পাগাথ এবং বিচারপতি এ মুহাম্মদ মুস্তাক তাদের রায়ে বলেন, স্ত্রীর সম্মতি ছাড়া স্বামীর এই কর্মকান্ড বৈবাহিক ধর্ষণের পর্যায়ে পড়ে।
'Marital Rape A Valid Ground For Divorce': 15 Key Observations In The Kerala High Court Judgment https://t.co/KRzdYXmksi
— Live Law (@LiveLawIndia) August 6, 2021
রায়ে আরও বলা হয়, এই বৈবাহিক ধর্ষণ বিবাহ বিচ্ছেদের ন্যায়সঙ্গত কারণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
এতদিন পর্যন্ত, ভারতে বৈবাহিক ধর্ষণ অর্থাৎ যেখানে ধর্ষণের শিকার এবং ধর্ষকের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক থাকে, সেটাকে কোনো অপরাধ বলে গণ্য করা হতো না।
এ ব্যাপারে নারী অধিকার কর্মী ও অধ্যাপক শ্বাশ্বতী ঘোষ মনে করছেন, ভারতীয় উপমহাদেশের পটভূমিতে এই রায় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এখানে যৌন মিলনের ক্ষেত্রে স্ত্রীর সম্মতিও যে জরুরি, সেই স্বীকৃতিটারই প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়নি।
বিবিসিকে তিনি বলেন, এই বিশেষ মামলায় স্ত্রী অভিযোগ করেছেন ১২ বছর ধরে তিনি স্বামীর অন্যায় যৌন আকাঙ্ক্ষা মেটাতে গিয়ে ক্লান্ত। কিন্তু এর বিরুদ্ধে দুইবার পারিবারিক আদালতে গিয়েও তিনি কোনো প্রতিকার পাননি।
মামলার বিবরণী উল্লেখ করে শ্বাশ্বতী ঘোষ আরও বলেন, যৌন মিলনে বাধ্য করার সময় তার স্বামী খেয়ালই করতেন না যে স্ত্রী অসুস্থ কি-না।
এমনকি তার স্ত্রীর মা যেদিন মারা যান, সে দিনও তিনি তাকে যৌন মিলনে বাধ্য করেছেন। নিজেদের মেয়ের সামনেও মিলিত হয়েছেন। এমন চরম নৃশংসতাও আইনের চোখে এতদিন অপরাধ ছিল না, এটাই আক্ষেপের, বলেন অধ্যাপক শ্বাশ্বতী ঘোষ।
ভারতের নারী অধিকার কর্মীরা প্রায় এক সুরেই বলছেন, ভারতসহ এ অঞ্চলের পাকিস্তান, বাংলাদেশ সব দেশেই সামাজিকভাবে একটা ধারণা প্রচলিত আছে যে বিবাহিত স্ত্রীরা বৈবাহিক ধর্ষণের বিরুদ্ধে মুখ খুললে পরিবারের ধারণাই ভেঙে পড়বে।
কেরালা হাইকোর্টের রায় সেই ধারণাকে কিছুটা হলেও পাল্টাতে সাহায্য করবে বলে তাদের অনেকেই আশা করছেন।
কেরালা হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায় ভারতীয় সমাজ ও পরিবার ব্যবস্থার সেই ‘ট্যাবু’ বা নিষিদ্ধ বিষয়কে অন্তত আলোচনা ও চর্চার কেন্দ্রে আনবে বলেই অ্যাক্টিভিস্টরা আশা করছেন।
সারাবাংলা/একেএম