‘তরুণদের চলচ্চিত্র নির্মাণে উৎসাহিত করতেন তারেক মাসুদ’
১৩ আগস্ট ২০২১ ২১:৪৭
ঢাবি: প্রয়াত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের সহধর্মিণী ক্যাথরিন মাসুদ বলেছেন, তরুণ প্রজন্ম তাদের মাঝে তারেক মাসুদকে পায়। তারেক মাসুদ সবসময় পরবর্তী প্রজন্মের জন্য চিন্তা করতেন। তরুণ নির্মাতাদের তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণে উৎসাহিত করতেন।
শুক্রবার (১৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় গুণী নির্মাতা তারেক মাসুদ এবং চিত্রগ্রাহক মিশুক মুনীরের স্মরণে আয়োজিত এক স্মৃতিচারণামূলক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের (ডিইউএফএস) আয়োজনে অনুষ্ঠানটি ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের ফেসবুক পেজে এটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
‘জীবন যার চলচ্চিত্র’ শিরোনামে অনুষ্ঠিত স্মৃতিচারণামূলক এই অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন তারেক মাসুদের ভাই নাহিদ মাসুদ ও মিশুক মুনীরের সহধর্মিনী মঞ্জুলী কাজী।
বরেণ্য চল্লচিত্রকার তারেক মাসুদের স্মৃতিচারণ করে অনুষ্ঠানে ক্যাথরিন মাসুদ বলেন, ‘তারেক মাসুদ আমাকে প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মিলনায়তনে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি আমাকে তাঁর অন্তরঙ্গ বন্ধু মিশুক মুনীরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। আমি মুগ্ধ হয়েছি সেদিন। দশবছর হয়ে গেলো তারেক মাসুদ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তিনি আমাদের মাঝে নানাভাবে আছেন।’
তারেক মাসুদের সঙ্গে সম্পর্ক হওয়ার ক্ষেত্রে আহমেদ ছফার ভূমিকা প্রসঙ্গে ক্যাথরিন মাসুদ বলেন, ‘তাঁর সঙ্গে ১৯৮৬/৮৭ তে পরিচয় হয়। তখন তিনি ছফা ভাইয়ের সঙ্গে ফার্মগেটে একটি বাসায় থাকতেন। সেটিকে পাগলা ঘর বলা হতো। সেখানেই তারেকের সঙ্গে আমার পরিচয়। অবশ্য তার আগেই ছফা ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় হয় আমার। একদিন তারেক আমাকে একটি শর্ট ফিল্মের কাজের ব্যাপারে ডাকলো। এইভাবেই তার সঙ্গে আমার যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে আমরা বুঝতে পারলাম, একসঙ্গে আমাদের অনেক কিছু করার আছে। এরপর ২৪ বছর তাঁর সঙ্গে ভালো স্মৃতি আছে আমাদের।’
তারেক মাসুদের ছোট ভাই নাহিদ মাসুদ বলেন, ‘তারেক ভাই অডিয়েন্সের প্রতিক্রিয়া নিয়ে সচেতন ছিলেন। তাই তিনি প্রদর্শনীতে থাকতেন। তিনি বুঝতে চাইতে, দর্শকের সঙ্গে তিনি ঠিকঠাক কমিউনিকেট করতে পারছেন কি না।’
‘মুক্তির গান’ চলচ্চিত্র প্রসঙ্গে নাহিদ মাসুদ বলেন, ‘তারেক ভাইয়ের সঙ্গে আমি যখন জয়েন করি, তখন তিনি আমেরিকা থেকে মুক্তির গান চলচ্চিত্রের কাজ শেষ করে এসেছেন। তিনি আশা করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এই চলচ্চিত্রটি সিনেমা হলগুলোতে দেখানো হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি হয়নি।’
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মিশুক মুনীরের স্ত্রী মঞ্জলী মুনীর বলেন, ‘মিশুকের কিন্তু বরাবরই ফটোগ্রাফির প্রতি ঝোঁক ছিলো। সাংবাদিকতায় পড়ার সময় তার বড় ভাই একটি ক্যামেরা কিনে দেন। সে সাংবাদিকতা পড়েছে ঠিক কিন্তু তার আসল ঝোঁক ছিলো ক্যামেরায়। ক্যামেরা হাতে পেলে সে বাচ্চাদের মতো হয়ে যেতো।’
মিশুক মুনীর ‘ছবির মানুষ’ ছিলেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সময়ও তিনি দেশি-বিদেশি অনেক মিডিয়ায় উনি কাজ করেছেন। উনার মেইন ফোকাসই ছিলোই ছবি তোলা। উনি একজন ছবির মানুষ ছিলেন।’
এর আগে, সন্ধ্যা ৬টার দিকে গুণী এই দুই ব্যক্তির স্মরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলসংলগ্ন সড়কদ্বীপে সড়ক দুর্ঘটনা স্মৃতি স্থাপনায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ (ডিইউএফএস)।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের আজকের দিনে (১৩ আগস্ট) ‘কাগজের ফুল’ সিনেমার শুটিং স্পট দেখে মানিকগঞ্জের শালজানা থেকে ঢাকা ফেরার পথে নির্মাতা এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীর, প্রডাকশন সহকারী ওয়াসিম, জামাল ও চালক মুস্তাফিজুর রহমান নিহত হন।
সারাবাংলা/আরআইআর/এমও