১৫ আগস্টের শিক্ষায় ১/১১’র বিশ্বাসঘাতকদের মুখোশ উন্মোচনের দাবি
১৪ আগস্ট ২০২১ ১৭:১৬
ঢাকা: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে থেকে যারা কলকাঠি নেড়েছে তাদের আজ পর্যন্ত মুখোশ উন্মোচন করা হয়নি বলেই ১/১১-এর সময়ও শেখ হাসিনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তাদেরকেও আমরা চিহ্নিত করতে পারিনি।
শনিবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মহিলা শ্রমিক লীগের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে প্রতিরোধ-প্রতিবাদের ডাকের অভাব ছিল- সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরে নানক বলেন, ‘আমরা যখন ঘুরে বেরিয়েছি চাতক পাখির মতো, এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ-প্রতিরোধের আহ্বানের প্রত্যাশায়, তখন প্রতিবাদের আহ্বান আসেনি। অনেক কথা বলার সময় এখনও আসেনি। তাই অনেক কথা বলা যাবে না।’
নানক বলেন, ‘সেদিন কে যে কাক আর কে কোকিল, কে আমাদের পক্ষে আর কে আমাদের বিপক্ষে- তা বোঝা যায়নি। খুনি মোশতাক যখন বঙ্গবভনে সংসদ সদস্যদের ডাকল, তখন আমরা এমপিদের বাড়ি বাড়ি চিঠি নিয়ে গিয়ে হুমকি দিয়েছি। চিঠি দিয়ে আমরা বলেছি, বঙ্গভবনে মোশতাকের ওই সংসদীয় সভায় উপস্থিত হওয়া যাবে না। তারপরও কিন্তু অনেকেই সেই সভায় অংশ নেন। বিভ্রান্ত করা হয় দেশের মানুষকে। বিভ্রান্ত করা হয় বিশ্ববাসীকে।’
সেই প্রেক্ষাপটের কথা তুলে সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার দুই তৃতীয়াংশ মন্ত্রী সেদিন খন্দকার মোশতাকের মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শপথ নেন। সেদিন সেনাবাহিনী প্রধান, বিমানবাহিনী প্রধান, নৌবাহিনীর প্রধান ও পুলিশের আইজি বাংলাদেশ বেতারে গিয়ে সেই সরকারের প্রতি আস্থা জানিয়েছিল। একথা কিন্তু আমরা ভুলিনি।’
সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একটু প্রতিবাদ চেয়েছিলাম। বাঙালি একটি প্রতিবাদের ডাক চেয়েছিল। বাঙালি একটি প্রতিরোধের দুর্গ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছিল। সেদিন নেতৃত্বের দুর্বলতা, কাপুরুষতা, ভীরুতা ও আত্মসমর্পণের কারণে আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিরুদ্ধে, ওই খুনি শাহরিয়ার-নূর-ডালিম-রশিদসহ খুনি মোশতাকদের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগরে প্রতিরোধ গড়তে পারিনি।’
নানক বলেন, ‘১৫ আগস্টে দৃশ্যমান যারা খুনি তাদের আমরা চিনেছি মাত্র। কিন্তু অদৃশ্য যারা পেছন থেকে কলকাঠি নেড়েছে তাদের আজও বের করা হয়নি। তাদের মুখোশ উন্মোচন করা হয়নি। তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। তাদের উন্মোচন করিনি বলে ১/১১’র সময়ও শেখ হাসিনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আমরা তাদেরকেও চিহ্নিত করতে পারিনি।’
তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্টের এই নেপথ্যদের যদি খুঁজতে যাই তাহলে একাত্তরকে খুঁজে বের করতে হবে। একাত্তরকে জানতে হবে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধচলাকালীন কারা বিরোধিতা করেছিল? কারা আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করেছে? জিয়াউর রহমানের মতো লোকেরা আইএসআইয়ের অনুচর হিসেবে গোয়েন্দার দায়িত্ব পালন করেছে। তাদেরকেও আমরা চিহ্নিত করতে পারিনি। আর চিহ্নিত করতে পারিনি বলেই সবসময় একটি অজগর সাপ, একটি জাতিসাপকে নিয়ে পথ চলেছি।’ আর সেই জাতিসাপ-অজগর সাপ সময়ের অপেক্ষায় ছিল বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
নানক বলেন, ‘রণাঙ্গণের যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে পাকিস্তানি চীন-মার্কিন শক্তি পরাজিত হলো এবং এদেশীয় রাজাকার-আলশামস-আলবদররা পরাজিত হলো, আত্মসমপর্ণ করল আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে, সেই তাদেরকেও আমরা চিহ্নিত করতে পারিনি। তাই আমরা যারা রাজনীতি করি, আমাদেরকেই এসব খুঁজে বের করতে হবে। একাত্তরে কারা পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশন করতে চেয়েছিল, কেন তাদের আমরা চিহ্নিত করতে পারিনি, কেন তাদের স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারিনি- এসব আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।’
১৫ আগস্টের ঘটনায় নেপথ্যের নাটের গুরু তথা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নাটেরগুরুদেরও মুখোশ উন্মোচন করতে না পারার প্রসঙ্গ তোলেন নানক। তিনি বলেন, ‘সেই কারণে আমরা শত্রু-মিত্রকে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছি। তাই জিয়াউর রহমান ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর উপপ্রধান থাকাকালীন সে তার দায়িত্ব পালন করেনি। সেদিন যারা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিল তারা কিন্তু জয় বাংলা স্লোগানের বদলে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ স্লোগান দিয়ে পাকিস্তানি কায়দায়, পাকিস্তানি প্রেতাত্মা হিসাবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিল।’
দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দলীয় সভাপতি হিসেবে হাল ধরার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন এবং তাকে সভাপতি নির্বাচিত করার মধ্য দিয়ে সেদিন প্রত্যাশার লাল সূর্য উদিত হয়েছিল বলে দাবি করেন নানক। আয়োজকদের সাংগঠনিক শৃঙ্খলার প্রশংসা করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দিয়ে সংগঠনকে আদর্শিকভাবে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের এই নেতা।
মহিলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সুরাইয়া আক্তারের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও সংগঠনের কার্যকরি সভাপতি শামসুন নাহার এমপি বক্তব্য দেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রহিমা আক্তার সাথী সভা পরিচালনা করেন।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম