‘বাংলাদেশকে মৌলবাদীদের দেশ হতে দেব না’
১৪ আগস্ট ২০২১ ২২:৫৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: খুলনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির-বসতঘরে হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক মো. শাহআলম বলেছেন, আমরা একাত্তর সালে মানুষের মুক্তির জন্য অস্ত্র হাতে নিয়েছিলাম। কোনো ধর্ম বা সম্প্রদায়ের কথা মাথায় রেখে মুক্তিযুদ্ধ করিনি। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে মৌলবাদের কোনো ঠাঁই হবে না। আমরা যারা মুক্তিযোদ্ধা, আমাদের বুকে শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত বাংলাদেশ মৌলবাদীদের দেশ হতে দেব না।
খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার শিয়ালি গ্রামে হামলার প্রতিবাদে শনিবার (১৪ আগস্ট) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর চেরাগি মোড়ে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
শাহআলম বলেন, ‘আমরা মুসলিম সাম্প্রদায়িকতা চাই না, হিন্দু সাম্প্রদায়িকতাও চাই না, বৌদ্ধ সাম্প্রদায়িকতা চাই না, খ্রিস্টান সাম্প্রদায়িকতা চাই না। আমরা মানুষের মুক্তির জন্য লড়াই করি। এজন্যই আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। বিভক্তির রাজনীতি দিয়ে মানুষের মুক্তি হবে না। আপাতত মৌলবাদিরা বিজয় অর্জন করতে পারে, কিন্তু শেষ জয় হবে মানুষের।’
সাম্প্রদায়িক হামলার নেপথ্যে রাষ্ট্রের ইন্ধনের অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে, দুর্নীতি চলে, নারীদের ওপর নির্যাতন হয়, দেশের টাকা বাইরে চলে যায়- এগুলো নিয়ে কোনো কথা নেই। শুধু ধর্মের নামে মানুষে-মানুষে বিভক্তি। এখানে হিন্দুদের ওপর হামলা চলে, আমি বলতে চাই- ভারতের ২০ কোটি মুসলমান যদি বাংলাদেশে ঠেলে দেয়, আপনারা কোথায় যাবেন? একজন আরেকজনকে ধ্বংস করতে পারেন, তারপর কোথায় যাবেন? ভারত হিন্দুরাষ্ট্র হলো, তারপর কী? ইউরোপে খ্রিস্টান রাষ্ট্র হলো- তারপর কী? বাংলাদেশ মুসলিম রাষ্ট্র হলো- তারপর কোথায় যাবেন? হিন্দু, মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টান- বিভক্তির রাজনীতি দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না।’
‘আমরা ১৯৭১ সালে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র পাকিস্তানকে পরাজিত করেছি। দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে গঠিত পাকিস্তান আমরা মেনে নিইনি। কিন্তু ভারত বিভক্তির যে বিষ, সেই বিষবৃক্ষের ফল আমরা ভোগ করছি। ভারত যদি সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে ভাগ না হতো, তাহলে হিন্দু-মুসলিমের এই বিভক্তি থাকত না।’
শাহআলম আরও বলেন, ‘হিন্দুরা ধর্মীয় সংখ্যালঘু হতে পারে, কিন্তু জাতিগত সংখ্যালঘু নয়। আমরা সবাই বাঙালি। ১৯৭১ সালে আমরা বলেছিলাম, ধর্ম হবে যার যার-রাষ্ট্র হবে সবার। পাকিস্তান আমলে আমরা ২৪ বছর ধর্মীয় রাজনীতি দেখেছি। ধর্মের নামে কীভাবে বৈষম্য হয়েছে এটা আমরা দেখেছি। কিন্তু আমরা প্রতিরোধ করেছি, আমরা এইদেশ স্বাধীন করেছি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত ছিল অসাম্প্রদায়িক ভারত। সেই ভারত এখন আর নেই। সেই ভারতে এখন সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জয় জয়কার। পাকিস্তান আজন্ম পাপ, একটি মৌলবাদী-জঙ্গিগোষ্ঠী। আর বাংলাদেশেও জঙ্গিবাদ বারবার হানা দিচ্ছে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’
সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল নবীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মৃণাল চৌধুরী, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, উত্তম চৌধুরী, নুরুচ্ছাফা ভূঁইয়া, অমৃত বড়ুয়া, প্রমোদ বড়ুয়া, ফরিদুল ইসলাম, প্রদীপ ভট্টাচার্য, নারীনেত্রী রেখা চৌধুরী, রাহাতউল্লাহ্ জাহিদ, অমিতাভ সেন প্রমুখ।
সমাবেশে সিপিবি নেতারা বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে মদদ দেওয়া হচ্ছে। সরকার সাম্প্রদায়িক অপশক্তির পরামর্শ মেনে চলছে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে নিষিদ্ধ না করে সরকার নিজের স্বার্থে কাজে লাগাতে চায়। সর্বত্র সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে দেশ আজ ভয়াবহ বিপদের মুখোমুখি। সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। দেশ ও মানুষ বাঁচাতে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম