Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১৫ আগস্ট কামানের গোলায় ১৩ জন নিহত, ২৫ বছরেও শেষ হয়নি বিচার

আরিফুল ইসলাম,  স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৫ আগস্ট ২০২১ ১৬:৫৪

ফাইল ছবি

ঢাকা: ১৯৭৫  সালের ১৫ আগস্ট ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রমণের সময় সেনা সদস্যরা কামানের গোলা ছুড়লে মোহাম্মদপুরের শেরশাহ সুরী রোডে গিয়ে পড়লে  শিশু ও নারীসহ ১৩ জনের মৃত্যু হয়। প্রায় ৪০ জনের মত আহত হন। ওই ঘটনার ২১ বছর পরে ১৯৯৬ সালে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

একই দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার শেষ হলেও একইদিন কামানের গোলায় ১৩ জন নিহতের মামলায় ২৫ বছরেও এখনো শেষ হয়নি বিচারকার্য। দীর্ঘ সময় ধরে আদালতে সাক্ষী না আসায় অনেকটা থমকে আছে মামলাটির বিচারকার্য।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে মামলাটি ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা আল মামুনের আদালতে মামলাটি এখন সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। তবে রাষ্ট্রপক্ষের সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা জানিয়েছেন করোনাভাইরাসের পাদুর্ভাব কমে আসলে মামলাটির দ্রুত বিচার শেষ করতে পারবেন।

২০০৬ সালের ১ নভেম্বর এ মামলায় ১৭ জনের বিরুদ্ধে প্রায় ১৪ বছর আগে চার্জগঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। ২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি আতিকুল রহমানের এক ব্যক্তি সাক্ষ্য দেন। এরপর থেকে আদালতে আর কোনো সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়নি। এর মধ্যে সাক্ষ্যগ্রহণের কয়েকটি তারিখ ধার্য থাকলেও আদালতে আরও কোন সাক্ষী উপস্থিত হয়নি। এরপরে মহামারি করোনার কারণে আদালতের সাধারণ ছুটিতে থাকায় আর কোনো কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়নি। সাধারণ ছুটি শেষে আগামী ২৫ আগস্ট মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য রয়েছে।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটরই সাইফুল ইসলাম হেলাল জানান, করোনাসহ বিভিন্ন কারণে গত দেড় বছর ধরে আদালতে কোনো সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। আমরা সাক্ষীদের একাধিকবার সমন পাঠিয়েছি। আইজিপি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবের মাধ্যমে সমন দেওয়া হলেও কোনো সাক্ষী আসে নাই। এই মামলায় একটু ডিফেক্ট আছে বলা যায়। বঙ্গবন্ধু হত্যার মামলার যারা আসামি ছিলেন তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত তারা সকলেই এই মামলার আসামি। পলাতক ১২ জন আসামির মধ্যে ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এই ছয়জনের মৃত্যুদণ্ডের গেজেট দিতে হয়, সেটা এখনো সরকার থেকে দেওয়া হয়নি। এই গেজেট মন্ত্রণালয় থেকে একাধিকবার চেয়েও পাওয়া যায়নি। মামলায় রায়ের সময় যাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে সেই স্ট্যামেন্ট লাগবে মামলার নথিতে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেয়নি। মামলাটিতে রায় দিতে এগুলো উল্লেখ করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, একদিকে লকডাউন আবার কিছুদিন বিচারক ছুটিতে থাকায় কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে। আবারও নতুন বিচারক এসেছে। করোনার জন্য দেড় বছর ধরে মামলাটির বিচারকার্য থমকে ছিল। বিচারিক কার্যক্রম আবারও শুরু হয়েছে। আশা করি দ্রুত মামলাটির বিচারকার্য শেষ করতে পারবেন আদালত।

এদিকে মামলার বাদী মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী অসুস্থ হয়ে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে বলে জানা গেছে।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রমণের সময় সেনা সদস্যরা কামানের গোলা ছুড়লে তা গিয়ে মোহাম্মদপুরের শেরশাহ সুরী রোডর ৮ ও ৯ এবং ১৯৬ ও ১৯৭ নম্বর বাড়ির (টিনশেড বস্তি) ওপর পড়ে। ছোড়া কামানের গোলার বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। মুহূর্তের মধ্যেই ধুলায় মিশে যায় ওই বস্তিটি। ওই ঘটনায় নারী ও শিশুসহ ১৩ জন মারা যায়। প্রায় ৪০ জন আহতের মধ্যে কয়েকজন পুরুষ সারাজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করে।

১৯৯৬ সালের ২৯ নভেম্বর মোহাম্মদপুর থানায় ওই ঘটনায় ৮ নম্বর বাড়ির মালিক মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) আদালতে ২০০১ সালের এপ্রিলে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর ২০০৬ সালের ১ নভেম্বর এ মামলায় ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারিতে ১৭ আসামির মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এরা হলেন— লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহিউদ্দিন আহমেদ, মেজর (অব.) বজলুল হুদা ও মেজর (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ। এরপর ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদেরও ফাঁসিও কার্যকর হয়।

পলাতক ১২ আসামিরা মধ্যে যারা রয়েছে তারা হলেন— লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) শরিফুল হক ডালিম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (বরখাস্ত) খন্দকার আবদুর রশিদ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) এসএইচএমবি নূর চৌধুরী ইবি, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) এএম রাশেদ চৌধুরী, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) আহমদ শরিফুল হোসেন ওরফে শরিফুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) মো. কিসমত হাসেম, ক্যাপ্টেন (অব.) নাজমুল হোসেন আনসার, রিসালদার (অবসরপ্রাপ্ত) মোসলেম উদ্দিন ওরফে মোসলেহ উদ্দিন, এলভি মো. আলী হোসেন মৃধা ও দফাদার মারফত আলী। আসামিরা সকলেই পলাতক রয়েছেন।

পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রথেকে নিযুক্ত আইনজীবী মাহফুজুর রহমান চৌধুরী জানান, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে। সাক্ষীও হয়েছে। তবে ওখানে কোনো  প্রত্যেক্ষ সাক্ষী নেই। এই মামলার ফৌজদারি কার্যবিধি আইনে ১৬৪ ধারায় কোনো জবানবন্দি নেই। কোনো কিছুই নেই। মামলাটি অনেক সেনসেটিভ। আশা করি মামলার রায়ে আসামিরা ন্যায় বিচার পাবে।

সারাবাংলা/এআই

১৯৭৫  সালের ১৫ আগস্ট কামানের গোলায় ১৩ জন নিহত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর