Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘জিয়াকে মহিমান্বিত করে লেখা রয়ে যায় আ.লীগ ক্ষমতায় আসার পরও’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৫ আগস্ট ২০২১ ২১:১৪

চট্টগ্রাম ব্যুরো: আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরও ১০ বছর ধরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পাঠ্যপুস্তক থেকে জিয়াউর রহমানকে মহিমান্বিত করে লেখাগুলো বাদ দেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি বলেছেন, পাঠ্যপুস্তকে জিয়াউর রহমানকে এমনভাবে গ্লোরিফাই করা হয়েছিল, পড়ে মনে হবে তিনি বোধহয় বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।

রোববার (১৫ আগস্ট) বিকেলে নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় উপমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরও, এমনকি ১০-১১ বছর ক্ষমতায় থাকার সময়ে আমাদের পাঠ্যপুস্তকে জিয়াউর রহমানকে গ্লোরিফাই (মহিমান্বিত) করে লেখাগুলো বাদ দেওয়া হয়নি। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর বেছে বেছে সেগুলো বাদ দিই। পাঠ্যপুস্তকে জিয়াউর রহমানকে এমনভাবে গ্লোরিফাই করা হয়েছিল যে, পড়লে মনে হবে জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। যারা এই কাজ করেছে, তারা কিন্তু বেঁচে আছে। সরকারে, প্রশাসনে, দলে সর্বত্র তারা ছড়িয়ে আছে। সিভিল সার্ভিসের রন্ধ্রে রন্ধ্রে তারা আছে।’

আওয়ামী লীগের তরুণ কর্মীদের রাষ্ট্র প্রশাসনে আসার জন্য মেধার প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র প্রশাসন কিন্তু রাজনীতিবিদরা চালায় না, চালায় প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা। প্রজাতন্ত্রে যদি আমাদের আদর্শের কর্মীরা, আওয়ামী লীগের নেতাদের সন্তানরা আসতে না পারে, তাহলে রাষ্ট্র প্রশাসনের মাধ্যমে আমাদের আদর্শের প্রতিফলন হবে না। আমাদের মানসিকতার বাইরের যারা আছে, তারা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছে না- এটা তো আমরা সিভিল সার্ভিসে দেখতে পাচ্ছি। আমাদের দলীয় মানসিকতার একজন কর্মচারী যেভাবে কাজটা দায়িত্ব নিয়ে সুন্দরভাবে করেন, অন্যরা সেটা করেন না। সুতরাং আমাদের তরুণ কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে যে, তারা যেন রাষ্ট্র প্রশাসনে আসেন। মেধার প্রতিযোগিতায় তারা যেন আসেন।’

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আওয়ামী লীগকে বিভক্ত করার ইতিহাস বই আকারে প্রকাশের আহ্বান জানিয়ে নওফেল বলেন, ‘জাতির জনককে হত্যার পর এই জাতির ইতিহাস পাল্টে দেওয়ার চক্রান্ত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাল্টে দেওয়ার ঘৃণ্য অপচেষ্টা হয়েছে। এরপর ঘাতকচক্র আওয়ামী লীগের ভেতরে বিভ্রান্তি-বিভাজন তৈরি করেছে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর দলের নেতাদের কার কী ভূমিকা ছিল, আওয়ামী লীগ-মিজান, আওয়ামী লীগ-মালেক, এ ধরনের কত দল যে গড়ে তোলা হয়েছিল, সেগুলো আমাদের লিখতে হবে। পরবর্তী সময়ে এরশাদ সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে, জিয়াউর রহমান সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে যারা ‍খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে, খুনিদের সমাবেশে কারা কারা উপস্থিত ছিল আর কারা প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করেছে, সেগুলো আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখি, কিন্তু সেগুলো পুস্তক আকারে বের করে নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে।’

‘এভাবে আওয়ামী লীগকে খণ্ডবিখণ্ড করে দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল যাতে জাতির পিতাকে হত্যার বিচারের দাবি জোরালো না হয়, কোনোভাবেই যাতে বিচার না হয় এবং তার কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাতে রাষ্ট্রক্ষমতায় না আসতে পারে। এসব বিষয় আমাদের নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে এবং এজন্য আমাদের অভিজ্ঞ নেতাদের ‍গুরুদায়িত্ব আছে। আমরা উনাদের কাছ থেকে সেগুলো শুনতে চাই, পড়তে চাই, নতুন প্রজন্মকে জানাতে চাই।’

উপমন্ত্রী নওফেল আরও বলেন, ‘নতুন প্রজন্মকে এজন্য জানাতে হবে যে, আমাদের নতুন প্রজন্মের অনেকেই মনে করে- রাজনীতি মানে হচ্ছে উপদলীয় কোন্দল করা। রাজনীতির যে লক্ষ্য সেটা আমরা অনেকেই ভুলে যাই। উপদলীয় কোন্দল করা রাজনীতির লক্ষ্য-আদর্শ নয়। বঙ্গবন্ধুর যে রাজনৈতিক লক্ষ্য ছিল সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটানো সেটাই আমাদের রাজনৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু আমরা মনে করি, আমার কেন মূল্যায়ন হল না, আমি কীভাবে আমার নিজের সম্পদ বাড়াব, অবস্থা ভালো করব- সেটা চিন্তা করি। আদর্শের রাজনীতির জন্য নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এজন্য পঁচাত্তর পরবর্তী ঐক্য বিনষ্টের ইতিহাস লিখতে হবে, জানান দিতে হবে। আমাদের একতা, আমাদের ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।’

নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন চসিকের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, চসিকের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, চন্দন ধর, ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, মশিউর রহমান চৌধুরী, কাউন্সিলর শহীদুল আলম, জহরলাল হাজারী।

প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় উপাচার্য একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ড. অনুপম সেন বলেন, ‘১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হলেও এদেশের জনগণ স্বাধীনতা পায়নি। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত তাদের অর্থনৈতিক মুক্তি ছিল না। বাজেটের সিংহভাগ ব্যয় হতো পশ্চিম পাকিস্তানে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ কারণে ১৯৬৬ সালে ছয় দফা ঘোষণা করেন। এই ছয় দফা ছিল এদেশের জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির দলিল। ছয় দফার পথ ধরে সূচিত হয় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, অর্জিত হয় স্বাধীনতা। অথচ সেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র। এটি বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশের ইতিহাসের এক কলঙ্কিত অধ্যায়।’

প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন ড. তৌফিক সাঈদের সভাপতিত্বে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত আলোচনা সভায় সঞ্চালনা করেন সহকারী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন মুন্না। আরও বক্তব্য দেন প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার একেএম তফজল হক, স্থাপত্য বিভাগের চেয়ারম্যান সোহেল এম. শাকুর, গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান ইফতেখার মনির ও ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান টুটন চন্দ্র মল্লিক এবং রেজিস্ট্রার খুরশিদুর রহমান।

সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম

জাতীয় শোকদিবস উপলক্ষে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর কমিটির উদ্যোগে আলোচনা সভা হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আলম মন্টুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন সংগঠনের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি ডা.সরফরাজ খান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বেদারুল আলম চৌধুরী বেদার, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজল আহমদ, ডা. জাহিদ হোসেন শরীফ, ফোরকান উদ্দিন আহমেদ, বাদশা মিয়া, সেলিম চৌধুরী, ইফতেখার রাসেল, সাইফুন নাহার খুশী, পলাশ বড়ুয়া।

বক্তারা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত‍্যা কোনো নিছক খুন নয়। এটা পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে মর্মস্পর্শী ও জঘন্য ঘটনা। এই হত্যাকাণ্ড শুধু একজন মানুষ হিসেবে শেখ মুজিবকে হত্যা করা নয়, এর পেছনে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি, মুক্তিযুদ্ধের সময় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ যে শক্তি নানাভাবে চক্রান্ত ষড়যন্ত্র করেছে সেই শক্তি, সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সুগভীর চক্রান্ত আছে। একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন করে হত‍্যাকান্ডের পূর্বাপর ষড়যন্ত্র ও জেনারেল জিয়াসহ নেপথ‍্য কুশীলবদের স্বরূপ জাতির সামনে তুলে ধরা হোক।

চান্দগাঁও থানা ছাত্রলীগ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎবার্ষিকীতে আলোচনা সভা, এতিমদের মাঝে খাবার বিতরণসহ নানা আয়োজন ছিল নগরীর চান্দগাঁও থানা ছাত্রলীগের। সংগঠনের সভাপতি মো. নূরুন নবী সাহেদ ও সাধারণ-সম্পাদক মোহাম্মদ শহীদুল আলম শহীদের নেতৃত্বে নেতাকর্মীদের মধ্যে সাজ্জাদুল আলম, মোহাম্মদ মহসিন ফয়সাল, আরাফাত হোসেন, মো. শাহীন, সাগর দাশ, আব্দুল্লাহ ফয়সাল, মোহাম্মাদ মনিরুল আলম, আফতাব উদ্দিন তাহসিন, জোনায়েদ জামী, কাজী তফসীর, আফতাব উদ্দিন গালিব, ফারহান লাবিব জুয়েল এসব কর্মসূচিতে অংশ নেন।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

১৫ আগস্ট জিয়া টপ নিউজ বঙ্গবন্ধু মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর