গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন: ৭ বছর পর ‘যুবলীগ ক্যাডার’ গ্রেফতার
১৬ আগস্ট ২০২১ ০১:১৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে চাঁদা না দেওয়ায় এক ঠিকাদারকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্মমভাবে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত এক ‘যুবলীগ ক্যাডারকে’ প্রায় সাত বছর পর গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, ঘটনার পর ওই সন্ত্রাসী দিব্যি এলাকায় অবস্থান করলেও এতদিন পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেনি। তবে পুলিশের দাবি, ঘটনার পর থেকে ওই সন্ত্রাসী নাম-পরিচয় পাল্টে আত্মগোপনে ছিল।
শনিবার (১৪ আগস্ট) গভীর রাতে নগরীর ছোটপোলের ইসলামিয়া ব্রিকফিল্ড এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে ডবলমুরিং থানা পুলিশ।
গ্রেফতার জমির হোসেন (৩৬) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার কুটি পূর্বপাড়া বিল্লাল মিয়ার বাড়ির মৃত আনোয়ার আলীর ছেলে। আর ঘটনার শিকার মাইফুল ইসলাম সাগরের বাসা নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায়। তিনি গণপূর্ত বিভাগের তালিকাভুক্ত একজন ঠিকাদার ছিলেন।
মাইফুল ইসলাম সাগর সারাবাংলাকে জানান, ২০১৪ সালে পরিবেশ অধিদফতরের কার্যালয়ে ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি গভীর নলকূপ স্থাপনের জন্য দরপত্র জমা দেওয়ার উদ্যোগ নেন তিনি। সার্বিক বিষয় জানতে তিনি ওই বছরের ২৬ অক্টোবর নগরীর আগ্রাবাদের সিজিএস কলোনিতে গণপূর্ত বিভাগের অফিসে গিয়েছিলেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে অফিস থেকে বের হওয়ার পর সুমন-জমিরের নেতৃত্বে ৮-১০ জন সন্ত্রাসী তাকে আটকে সিজিএস কলোনির একটি সরকারি ভবনের পেছনে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা আমাকে প্রথমে কোনো টেন্ডার জমা না দেওয়ার নির্দেশ দেয়। আমি রাজি না হওয়ায় তারা বলে, টেন্ডার জমা দিতে হলে আগে তাদের তিন লাখ টাকা দিতে হবে। আমি বললাম, টেন্ডার আমি জমা দেব, কিন্তু এক টাকাও কাউকে দিতে পারব না। তখন তারা আমাকে একটি গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে। এরপর ধারালো কিরিচ, পেরেকসহ কাঠের বাটাম, লাঠি, লোহার রড দিয়ে আমাকে প্রায় আধাঘণ্টা ধরে পিটিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় এনে ফেলে রাখে। স্থানীয় লোকজন আমাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। তিন মাস চিকিৎসার পর আমি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসি।’
সেই নির্যাতনের পর পরিবারের চাপে তিনি ঠিকাদারি ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানান সাগর। এদিকে ঘটনার পর সাগরের স্ত্রী জামেনা বেগম বাদি হয়ে সুমন-জমিরসহ নয় জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে হত্যাপ্রচেষ্টা মামলা দায়ের করেন। সাগর জানিয়েছেন, আসামিরা সবাই এলাকায় নিজেদের যুবলীগের নেতাকর্মী হিসেবে পরিচয় দেন। তারা নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন বাচ্চুর ছবি দিয়ে বিভিন্ন দিবসে ব্যানার লাগায় বিভিন্ন সরকারি অফিসের সামনে। এরপর টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধ করে।
সাগরের অভিযোগ, ঘটনার পর ডবলমুরিং থানায় মামলা নেওয়া হয়নি। এরপর আদালতে মামলা হলেও প্রায় সাতবছর পুলিশ আসামিদের গ্রেফতারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বরং তারা প্রকাশ্যে আগ্রাবাদ এলাকায় এবং বিভিন্ন সরকারি অফিসে গিয়ে প্রভাব বিস্তার করেছে।
জানতে চাইলে ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আদালতে মামলা দায়েরের পর আসামিরা সবাই পালিয়ে গিয়েছিল। জমির নিজে নাম-পরিচয় পাল্টে আত্মগোপনে ছিল। তাই এতদিন তাদের ধরা যায়নি। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত (শনিবার) রাতে আমরা জমিরকে গ্রেফতার করি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকি আসামিদের গ্রেফতারের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম