Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যুদ্ধ শেষ, উড়ছে তালেবানের পতাকা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৬ আগস্ট ২০২১ ১১:০৬

ঢাকা: আফগানিস্তানে যুদ্ধ শেষ হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তালেবান। তালেবানের একজন মুখপাত্র বলেছেন, আমরা দেশের স্বাধীনতা এবং জনগণের মুক্তি চেয়েছিলাম, সেই লক্ষ্যে পৌঁছে গেছি।

সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়।

আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ নায়েম বলেন, ‘আফগান জনগণ ও মুজাহিদিনদের জন্য আজ একটা মহান দিন। ২০ বছরের ত্যাগ ও চেষ্টার ফল দেখতে আজ তারা দেখতে পাচ্ছে। আল্লাহকে ধন্যবাদ, দেশে যুদ্ধ শেষ হয়েছে।’

মোহাম্মদ নায়েম জানান, আফগানিস্তানের সব রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে আলোচনায় বসতে তালেবান প্রস্তুত। তালেবান বিচ্ছিন্নভাবে থাকতে চায় না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে চায় তালেবান।

এদিকে তালেবানের হাতে কাবুল দখলে যাওয়ার পর এরইমধ্যে সব সরকারি ভবন খালি হয়ে গিয়েছে। সেই সব ভবনের মাথায় উড়ছে তালেবানের পতাকা। গোটা শহর জুড়ে ক্ষমতা বদলের ছবি স্পষ্ট। রাজপথের দখল নিয়েছে তালেবান। চলছে উল্লাস।

যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনে ২০০১ সালে ক্ষমতা হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়া তালেবান রোববার (১৫ আগস্ট) বিনা রক্তপাতে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়। পুরো আফগানিস্তান এখন তাদের দখলে। কাবুলে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের নিয়ন্ত্রণও নিয়েছে তারা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর গত ১০০ দিনে একের পর এক শহর দখল করে সর্বশেষ কাবুল কবজায় নেওয়ার মধ্য দিয়ে ১৯৯৬ সালের পর দ্বিতীয় পর্বের উত্থান ঘটাল তালেবান।

বিজ্ঞাপন

ছবিতে তালেবানের রাজনৈতিক মুখপাত্র

এর আগে ২০০১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর হামলায় ক্ষমতাচ্যুত হয় তালেবান। তবে মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাওয়া শুরু করতেই ক্ষমা প্রদর্শন করে একের পর এক এলাকার দখল নেয় তালেবান।

রোববার কাবুলের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে প্রবেশ করে তালেবান।

এরপরই তালেবান মুখপাত্র মুহাম্মদ নাইম আফগান যুদ্ধ অবসানের ঘোষণা দিয়ে বলেন, তাদের শাসন পদ্ধতি ও কাঠামো শিগগিরই স্পষ্ট করা হবে।

তিনি বলেন, কোনো কূটনৈতিক কাঠামো কিংবা তাদের কোনো কার্যালয়কে টার্গেট করা হয়নি। সব কূটনীতিক মিশন এবং নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

অস্ত্র হাতে তালেবান সদস্যদের মহড়া

তালেবানের কলকাঠি কারা: তালেবানদের শক্তির উৎস কারা সে বিষয়টি বেশ রহস্যজনক। এমনকি ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যখন এই গোষ্ঠীটি ক্ষমতায় ছিল; তখনও এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা মেলেনি। তবে তালেবানের শীর্ষে থাকা কয়েকজনের নাম জানা যায়। এদের মধ্যে একজন হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদা, তালেবানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা। তালেবানের রাজনৈতিক, সামরিক ও ধর্মীয়সহ যে কোনো বিষয়ে তার রায়ই চূড়ান্ত।

২০১৬ সালে মার্কিন ড্রোনের আঘাতে তালেবানের তৎকালীন প্রধান আখতার মনসুর মারা যাওয়ার পর নেতৃত্ব হাতে তুলে নেন আখুনজাদা। এর আগে ১৫ বছর ধরে পাকিস্ততানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শহর কুচলাকের একটি মসজিদে শিক্ষকতা ও ধর্মপ্রচার করতেন তিনি। ২০১৬ সালে তালেবানকে নেতৃত্ব দেওয়া শুরু করেন তিনি।

মোল্লা আবদুল গনি বারাদার মোল্লা ওমরের অন্যতম বিশ্বস্তত সহচর ছিলেন এই বারাদার। এ ছাড়া তালেবানের অন্যতম সহপ্রতিষ্ঠাতা তিনি। তালেবানের রাজনৈতিক বিষয়ের প্রধান বারাদার তার সাম্প্রতিক সময়ের বলিষ্ঠ ভূমিকার জন্য বেশ আলোচিত।

বিজ্ঞাপন

কাতারের রাজধানী দোহায় যুদ্ধবিরতি এবং আফগানিস্ততানে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠায় একটি রাজনৈতিক চুক্তির জন্য যে আলোচনা হয়েছে, তাতে তালেবানের পক্ষে অন্যতম প্রতিনিধি ছিলেন তিনি।

তালেবানদের আরেক শীর্ষ নেতা হলেন সিরাজউদ্দিন হাক্কানি। তিনি ‘হাক্কানি নেটওয়ার্ক’-এর প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। আফগানিস্ততানে আত্মঘাতী বোমা হামলার সূত্রপাতের জন্য এই হাক্কানিদের দায়ী করা হয়।

তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব। তালেবানের সামরিক বিভাগের দেখাশোনা করেন তিনি। তাকে তালেবান গোষ্ঠীর সামরিক প্রধানও বলা যায়। ইয়াকুব বর্তমানে আফগানিস্ততানের ভেতরেই আছেন।

সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট বারদার: আব্দুল গনি বারদার সাবেক তালেবান প্রধান মোল্লা ওমরের একান্ত বিশ্বাসভাজন ও ব্যক্তিজীবনে তার বোনের স্বামী। ২০০১ সালে আমেরিকার হামলার মুখে পতনের পর মোল্লা ওমরের সামরিক প্রধান ছিলেন তিনি। ২০১০ সালে মার্কিন-পাকিস্তান যৌথ অভিযানে তিনি করাচিতে গ্রেফতার হন। তারপর থেকেই মার্কিনীদের সমঝোতা শুরু হয় তালেবানদের সাথে। মাত্র দুবছরের আলোচনা ও সমঝোতার পর মার্কিন হস্তক্ষেপে তিনি মুক্তি পান। তিনি হতে পারেন আফগানিস্তানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট।

রক্তপাত এড়াতে পালিয়েছেন আশরাফ গনি: দেশের মানুষকে তালেবানের হুমকির মুখে ফেলে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি বলেছেন, আফগানিস্তানে রক্তের বন্যার এড়াতেই তিনি পালিয়ে গেছেন। এছাড়া তার হাতে আর কোন বিকল্প ছিল না।

আশরাফ গণি ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, ‘আজ আমি এক কঠিন পরিস্থিতি পার হয়ে এসেছি। ২০ বছর ধরে আমি নিজেকে আমার দেশের জন্যই উৎসর্গ করেছি। আমি যদি কাবুলে থেকে সশস্ত্র তালেবানদের সঙ্গে লড়াইয়ে নামতাম, তাহলে কাবুল ধ্বংস হয়ে যেত। অনেক দেশপ্রেমিক নাগরিক শহীদ হতেন। পরিণামে নেমে আসত ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। খবর বিবিসি, গার্ডিয়ান ও আল-জাজিরার

আত্মপক্ষ সমর্থন করে তিনি আরও লিখেছেন, তালেবান আমাকে সরিয়ে দিতে পেরেছে। তারা কাবুলে ঢুকে পড়েছে এখানকার বাসিন্দাদের ওপর হামলা চালাতে। এমন অবস্থায় রক্তের বন্যা এড়াতে প্রাসাদ থেকে চলে আসাটাই আমি শ্রেয় মনে করেছি।

দীর্ঘ ২১ বছর পর আফগানিস্তানে ক্ষমতায় আসা তালেবান এখন ‘ঐতিহাসিক পরীক্ষার’ সম্মুখীন হবে বলে মন্তব্য করেন আশরাফ গনি।

বাংলাদেশ সময় রোববার রাত দুইটার দিকে আল-জাজিরার এক সাংবাদিকের টুইট উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানায়, আশরাফ গনি তার স্ত্রীসহ এরই মধ্যে তাজিকিস্তানে পৌঁছে গেছেন। সঙ্গে তার জাতীয় নিরাপত্তা উদেষ্টা ও চিফ অব স্টাফ রয়েছেন।

বাইডেনের পদত্যাগ চান ট্রাম্প: আফগানিস্তান ফের তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

তালেবানে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখলের পর এক বিবৃতিতে তিনি এ আহ্বান জানান বলে আল–জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

ট্রাম্পের অভিযোগ, বাইডেনের কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীকে আফগানিস্তান থেকে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে।

এ ছাড়া তিনি ক্ষমতায় থাকলে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার আরও সফলতার সঙ্গে করা হতো বলেও মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প।

সারাবাংলা/একে

আফগানিস্তান কাবুল তালেবান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর