বিদিশা-এরিকসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা
১৬ আগস্ট ২০২১ ১৬:০২ | আপডেট: ১৬ আগস্ট ২০২১ ২০:১২
ঢাকা: হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের ফ্ল্যাটের মালিকানা নিয়ে সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক এবং ছেলে এরিকসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলার দায়ের করা হয়েছে।
সোমবার (১৬ আগস্ট) ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক কাজী মুশফিক মাহবুব রবিনের আদালতে এ মামলার আবেদন জমা দেন সাবেক হুইপ এস এম গোলাম রেজা ও তার স্ত্রী জিন্নাতুল নাহার শিমু।
মামলার অপর বিবাদীরা হলেন, এরিক ওয়েন হুইসন; আরমান এরশাদ; এরিক এরশাদ; গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সচিব, মহা পুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি), অতিরিক্ত মহা পুলিশ পরিদর্শক, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, উপ-পুলিশ কমিশনার, স্পেশাল ব্রাঞ্চের ইমিগ্রেশন পুলিশ সুপার ও গুলশান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)।
মামলাটির গ্রহণযোগ্যতা শুনানির জন্য আগামী ৬ সেপ্টম্বর দিন ধার্য করেছন আদালত।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২০ সালের ২১ আগস্ট ১ নম্বর বিবাদী বিদিশা সিদ্দিক সাবেক স্বামী এ এইচ এম এরশাদের নিষেধাজ্ঞা অমান্য ও অবজ্ঞা করে প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসায় ওঠেন এবং ২নম্বর বিবাদী শাহাতা জারাব এরশাদকে (এরিক) নিজের গর্ভজাত সন্তান হিসাবে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন অপকর্মে এবং বাদী ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র চালিয়ে আসছে। ১ নম্বর বিবাদী বিদিশা সিদ্দিক বারিধারাস্থ প্রেসিডেন্ট পার্কের ফ্ল্যাটটি ২ নম্বর বিবাদী শাহাতা জারাব এরশাদের (এরিক) মর্মে দাবি করছেন এবং গত ৭ জুন ফ্ল্যাটটি বাদীকে খালি করে দেওয়ার জন্য বলেছেন। মামলায় আরও বলা হয়, যেহেতু তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী ২ নম্বর বিবাদী শাহাতা জারাব এরশাদ (এরিক) ১ নম্বর বিবাদী বিদিশা সিদ্দিকের গর্ভজাত সন্তান নয়। তাই ২ নম্বর বিবাদীকে ১ নম্বর বিবাদী বিদিশা সিদ্দিকের মর্মে ঘোষণা করা প্রয়োজন।
মামলায় বলা হয়, জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিকের দুই পুত্র সন্তানের জন্ম তারিখ ও পিতার পরিচয় নিয়ে বড় ধরনের গোলক ধাঁ ধাঁ দেখা দিয়েছে। জন্মনিবন্ধন সনদে দেখা গেছে, দুই পুত্র শাহাতা জারাব এরশাদ (এরিক) এবং এরিক ওয়েন হুইসনের জন্ম ২০০১ সালের ১১ মার্চ। জন্মস্থান ঢাকা। অর্থাৎ দুই সন্তানের জন্ম হয়েছে একইদিনে। অথচ শাহাতা জারাব এরশাদের (এরিক) পিতার নাম লেখা হয়েছে এইচএম এরশাদ এবং এরিক ওয়েন হুইসনের পিতার নামের ঘরে লেখা আছে পিটার স্টুয়ার্ট হুইসন। পিতা দুজন হওয়ায় বড় ধরনের প্রশ্ন সামনে উঠে এসেছে। আর জন্ম নিবন্ধনে দুই পুত্রের জন্ম ঢাকায় বলা হলেও বিদিশার পাসপোর্টের বিদেশ সফরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তিনি ওইদিন ছিলেন সিঙ্গাপুর। এছাড়া শুধু সন্তান নয়, বিদিশা তার নিজের জন্ম তারিখ নিয়েও দু’রকম তথ্য দিয়েছেন।
মামলায় আরও বলা হয়, এইচ এম এরশাদ ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই মারা যাওয়ার ৪ মাসের মাথায় নভেম্বরে বিদিশা ও ২ নম্বর বিবাদী প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসায় ওঠেন। শাহাতা জারাব এরিকের পিতৃপরিচয় নিয়ে এরকম চাঞ্চল্যকর তথ্য অমীমাংসিত থাকা অবস্থায় ওই বাসায় বিদিশা সিদ্দিক অনেকটা নির্বিঘ্নে সময় পার করছেন।
আরও বলা হয়, ২০০৫ সালের ৩ জুন বিদিশাকে তালাক নোটিশ পাঠান এরশাদ। অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের তালাকসংক্রান্ত সালিশি কেস নম্বর ১৬৬৫/২০০৫। এ সালিশের মাধ্যমেই তালাক কার্যকর হয় ওই একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর। সে সময় এরশাদ-বিদিশার ছাড়াছাড়ি হলেও শিশুসন্তান শাহাতা জারাব এরিককে নিজের জিম্মায় রাখেন এরশাদ। কিন্তু এটা মেনে নিতে পারেননি বিদিশা। তালাকের ৫ বছর পর অর্থাৎ ২০০৯ সালে শাহাতা জারাব এরিককে নিজ জিম্মায় নিতে পারিবারিক আদালতে মামলা করেন বিদিশা।
সে মামলার জেরায় বিদিশা বলেছেন, বাংলাদেশে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন বিদিশা। তার প্রথম বিয়ে হয় ১৯৮৩ সালে। স্বামীর নাম পারভেজ আহমেদ। বিদিশার জন্মস্থান ভারত হলেও পাসপোর্টে উল্লেখ করা হয় বাগেরহাট। তার জন্ম ১৯৬৭ সালের ১ জুলাই। মাত্র ১৭ বছর বয়সে ১৯৮৪ সালে নাবালিকা অবস্থায় তার প্রথম বিয়ে হয় গ্রিন রোড কাজী অফিসে। এরপর দ্বিতীয় বিয়ে করেন বাবার বন্ধু সিঙ্গাপুরের নাগরিক পিটার স্টুয়ার্ট হুইসনকে। এ বিয়ের সুবাদেই সিঙ্গাপুরে গিয়ে বেশ কিছুদিন স্থায়ী বসবাস করেন তিনি। ওই ঘরে তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে হয়। ১৯৮৭ সালের ২৩ নভেম্বর তার প্রথম ছেলে উইলিয়াম জেমস হুইসনের জন্ম হয়। ১৯৯০ সালের ১৬ জুলাই জন্ম নেন তার মেয়ে ইসাবেল ইমা হুইসন।
মামলায় এরশাদ কতৃক বিষয়ে বিষয়ে বলা হয়, ২০০০ সাল থেকেই এরশাদ-বিদিশার প্রেম কাহিনী টক অব দি কান্ট্রিতে পরিণত হয়। আলোচনা গড়ায় খোদ জাতীয় সংসদে। তখন আলোচিত এ জুটির সম্পর্ক নিয়ে চারদলীয় জোট সরকারের সময় জাতীয় সংসদে প্রশ্ন তোলেন তৎকালীন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। যিনি এক সময় এরশাদ সরকারের উপ-রাষ্ট্রপতি ছিলেন। ২০০০ সালের ২৩ নভেম্বর রাজনৈতিক কারণে জাতীয় নির্বাচনের আগে জনতা টাওয়ার মামলায় কারাবন্দি হন এরশাদ। এরশাদ কারাগারে থাকাবস্থায় ২০০১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সিঙ্গাপুরে চলে যান বিদিশা। তখন তার পাসপোর্টে স্বামীর নাম ছিল পিটার স্টুয়ার্ড হুইসন।
২০০১ সালের ১১ মার্চ এরিক ওয়েন হুইসন নামে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন বিদিশা। অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনে এরিক হুইসনের জন্মনিবন্ধন করা হয়েছে ২০০১ সালের ১০ এপ্রিল। সেখানে জন্মস্থান ঢাকা এবং পিতার নাম বলা আছে পিটার স্টুয়ার্ড হুইসন। এদিকে একই তারিখ দেখিয়ে (১১ মার্চ ২০০১) অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনে শাহাতা জারাব এরশাদ এরিকের জন্ম নিবন্ধনও করা হয়েছে। সেখানে পিতা এইচএম এরশাদ। মাতা বিদিশা এরশাদ। একই দিনে জন্ম দেখানো হলেও দুই সন্তানের পিতা দেখানো হয়েছে দুজন।
এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। কীভাবে এক গর্ভে একই সময়ে দুই পিতার সন্তানের জন্ম হয়েছে তা নিয়ে এরশাদও তখন বিক্ষুব্ধ ছিলেন। যে কারণে প্রকৃত পিতার পরিচয় উদ্ঘাটনে খোদ এরশাদও বিদিশার বিরুদ্ধে আদালতে একটি ব্যাভিচারের মামলা করেন। মামলা নম্বর ১৬২/২০০৫। তবে জীবদ্দশায় লোকলজ্জার ভয়ে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের আশঙ্কায় এ মামলা আর চালাননি এরশাদ।
এদিকে, মামলায় বিদিশার দুটি জন্ম তারিখের কথা বলা আছে। এরশাদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর আগে তিনটি পাসপোর্টে তার জন্ম তারিখ ছিল ১৯৬৭ সালের ১ জুলাই। জন্মস্থান দেখানো আছে বাগেরহাট। চার নম্বর পাসপোর্টে তার জন্ম তারিখ উল্লেখ করা ১৯৭১ সালের ৬ মার্চ। আর জন্মস্থান দেখানো হয় ঢাকা।
সারাবাংলা/এআই/একেএম/পিটিএম