তালেবানের উন্নয়ন ও জনসেবার আশ্বাসেও কমেনি আতঙ্ক
১৬ আগস্ট ২০২১ ১৬:৩৭
ঢাকা: অনেক তো হলো। গত ২০ বছর ধরে শক্তিপরীক্ষা, যুদ্ধ ও সংঘাত। গৃহযুদ্ধ ও রক্তক্ষয়ের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল আফগানিস্তানের রাজনীতি, অর্থনীতি। ফলে আফগান জনমনে চছিলো অনিশ্চয়তা ও ভয়। এর মধ্যে মার্কিন সেনারা দেশ ত্যাগ করায় মাথাচাড়া দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে তালেবান। একের পর বিভিন্ন প্রদেশের দখল নিয়ে রাজধানীও নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে তারা। তালেবানের এই রক্তপাতহীন উত্থানের পর জনমনে কমেনি সেই পুরোনো আতঙ্ক। ফলে নিজের বসতভিটা ছেড়ে পালাতে চাইছেন সামরিক-বেসমারিক নাগরিকরা। তালেবানের ভয়ে পালিয়েছেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশারাফ গানিও।
তবে এত কিছুর পর তালেবান থেকে ঘোষণা এসেছে, তারা আফগান জনগণের অধিকার রক্ষার কাজ করবেন। জনসেবা করবেন, উন্নয়ন করবেন। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে দেশ চালাবেন।
আশ্বাসের পরও আফগানিস্তান তালেবানের অধিকারে যাওয়ার পর দেশটির সাধারণ নাগরিকের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে অনেকে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন। বিদেশি দূতাবাসগুলোও খালি হতে শুরু করেছে।
সোমবার (১৬ আগস্ট) কাবুলে বিমানবন্দরে দেশ ছাড়ার উদ্দেশে বিমানে উঠার সময় হুড়োহুড়ি-হট্টগোল দেখা দেয়। এ সময় মার্কিন সেনারা গুলি ছুড়লে পাঁচজন নিহত হন।
এরমধ্যেই জাতির উদ্দেশে দেওয়া নতুন একটি ভিডিওবার্তায় তালেবান নেতারা আফগানিস্তানের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এক ভিডিও বার্তায় তালেবানের উপপ্রধান নেতা মোল্লা বারাদার আখুন্দ বলেছেন, এখন সময় হয়েছে আফগানিস্তানের মানুষের সেবা আর তাদের জীবনমান উন্নয়নের।
তালেবানের উপপ্রধান আরও বলেন, ‘আমরা সবচেয়ে ভালো সেবা দেব, জনগণের জীবনমান উন্নয়নের জন্য যতদূর করা দরকার আমরা তাই করব।’
এদিকে তালেবান মুখপাত্র ইয়ালদা হাকিম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের অপেক্ষায় আছি।’
তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তানের মানুষের ওপর কোনো ধরনের প্রতিশোধ নেওয়া হবে না। আমরা আফগানিস্তানের জনগণ, বিশেষ করে কাবুলের বাসিন্দাদের আবারও আশ্বস্ত করতে চাই যে, তাদের জানমাল নিরাপদে আছে। কারও ওপর কোনো প্রতিশোধ নেওয়া হবে না।’
ইয়ালদা হাকিম আরও বলেন, ‘আমরা আফগানিস্তানের জনগণ, বিশেষ করে কাবুলের বাসিন্দাদের আবারও আশ্বস্ত করতে চাই যে, তাদের জানমাল নিরাপদে আছে। কারও ওপর কোনো প্রতিশোধ নেওয়া হবে না।’
প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান তালেবানের শাসনে ছিল। তালেবানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ ওঠার পর ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোট সেখানে যৌথ অভিযান চালায়, যার মাধ্যমে তালেবান শাসনের অবসান ঘটে।
রাজধানী কাবুল দখলের পর আফগানিস্তানে যুদ্ধ শেষ করার ঘোষণা দিয়েছে তালেবান। দেশটির রাজধানী কাবুলে প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেস দখল এবং প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির দেশ ত্যাগের মধ্য দিয়ে যুদ্ধের সমাপ্তি হয়েছে।
আফগানিস্তানে যুদ্ধ শেষ হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তালেবান। আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ নায়েম বলেন, ‘আফগান জনগণ ও মুজাহিদিনদের জন্য আজ একটা মহান দিন। ২০ বছরের ত্যাগ ও চেষ্টার ফল দেখতে আজ তারা দেখতে পাচ্ছে। আল্লাহকে ধন্যবাদ, দেশে যুদ্ধ শেষ হয়েছে।’
মোহাম্মদ নায়েম জানান, আফগানিস্তানের সব রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে আলোচনায় বসতে তালেবান প্রস্তুত। তালেবান বিচ্ছিন্নভাবে থাকতে চায় না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে চায় তালেবান।
এদিকে তালেবানের হাতে কাবুল দখলে যাওয়ার পর এরইমধ্যে সব সরকারি ভবন খালি হয়ে গিয়েছে। সেই সব ভবনের মাথায় উড়ছে তালেবানের পতাকা। গোটা শহর জুড়ে ক্ষমতা বদলের ছবি স্পষ্ট। রাজপথের দখল নিয়েছে তালেবান। চলছে উল্লাস।
যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনে ২০০১ সালে ক্ষমতা হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়া তালেবান রোববার (১৫ আগস্ট) বিনা রক্তপাতে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়। পুরো আফগানিস্তান এখন তাদের দখলে। কাবুলে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের নিয়ন্ত্রণও নিয়েছে তারা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর গত ১০০ দিনে একের পর এক শহর দখল করে সর্বশেষ কাবুল কবজায় নেওয়ার মধ্য দিয়ে ১৯৯৬ সালের পর দ্বিতীয় পর্বের উত্থান ঘটাল তালেবান।
ঘানি বলেছেন, রক্তপাত এড়াতে তার হাতে আর কোনো বিকল্প ছিল না।
রাতে এক ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, লাখো মানুষ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ‘সংঘাত এড়ানোর জন্যই’ আমি কাবুল ছেড়েছি। খবর: বিবিসি, রয়টার্স, আলজাজিরা।
সারাবাংলা/একে