‘হাসপাতালে ডিম-মুরগি সাপ্লাই দেওয়া রাজনীতিকের কাজ নয়’
১৬ আগস্ট ২০২১ ১৭:১২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ঘিরে কোনো ‘দালাল ও অপরাধীচক্রকে’ প্রশ্রয় না দেওয়ার জন্য প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি বলেছেন, হাসপাতালে ব্যবসা করা, ডিম-মুরগি সাপ্লাই দেওয়া কোনো রাজনীতিবিদের কাজ নয়।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সোমবার (১৬ আগস্ট) চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি উপমন্ত্রী নওফেল এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে ৪০টি মেডিকেল শয্যা ও ১০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার চমেক হাসপাতালকে দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবস্থা আগের চেয়ে পাল্টে গেছে। আগে এখানে দালাল, ওষুধ ব্যবসায়ী কিংবা তাদের লোকজন এসে ঝামেলা করত। অপরাধীরা বিভিন্ন সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করত। কিন্তু বর্তমান পরিচালক দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি এসব অন্যায়কে প্রশ্রয় না দেওয়ার কারণে পরিবেশ পাল্টে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে এখানে একটি চক্র নানাভাবে অপকর্ম করে গেছে। এখনও তারা বিভিন্নভাবে নানা সুযোগ নিতে মরিয়া হয়ে আছে। আমরা সবাই তাদের কাছ থেকে পরিত্রাণ চাই।’
কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আহ্বান জানাব- ক্ষুদ্রস্বার্থের জন্য আমরা যেন কোনো জঘন্য অপরাধীকে প্রশ্রয় না দিই। আমি প্রশ্রয় না দিলে হয়ত তারা আরেকজনের কাছে যাবে, তিনি না দিলে অন্যজনের কাছে যাবে। সুতরাং আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিই যে, ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে অথবা নিজের ব্যবসায়িক স্বার্থে কোনো জঘন্য অপরাধীকে আমরা প্রশ্রয় দেব না। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, এটা একটা সরকারি প্রতিষ্ঠান। সেখানে ব্যবসা করতে হবে, মুরগি সাপ্লাই দিতে হবে, ডিম সাপ্লাই দিতে হবে- রাজনীতিবিদ হিসেবে আমরা যেন এসবের মধ্যে ঢুকে না যাই। হাসপাতালে মুরগি সাপ্লাই দেওয়া, ডিম সাপ্লাই দেওয়া কোনো রাজনীতিবিদের কাজ নয়।’
‘আবার নিজে একজন রাজনীতিবিদ হয়েও কেউ কেউ চিকিৎসক সমাজকে ভয় দেখিয়ে, সরকারের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে একটা নোংরা পরিবেশ তৈরি করেছিল। আমি পরিচালককে ধন্যবাদ জানাই যে, তিনি দ্রুত প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে আমাদের মুক্ত করেছেন। রাজনৈতিক নেতাদের আহ্বান জানাব, ব্যক্তিগত স্বার্থে কিংবা নিজের কোনো ব্যবসায়িক স্বার্থে, এসব অপকর্মের যারা হোতা তাদের দয়া করে প্রশ্রয় দেবেন না। আমরা যার যার অবস্থান থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করছি, যতটুকু পারছি করছি। এই হাসপাতাল ঘিরে যে কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে, সেটা ধরে রাখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসালয়- এটা একটা সার্ভিস সেন্টার। সেখানে আমি ব্যবসা করব ঠিক আছে, কিন্তু সেই ব্যবসায় দক্ষতা থাকতে হবে, স্বচ্ছতা থাকতে হবে, পুঁজি বিনিয়োগ থাকতে হবে। কিন্তু রাজনীতির নামে নিয়ন্ত্রণমূলকভাবে ব্যবসা করাটা সমীচীন নয়।’
ক্যান্সার হাসপাতাল বানচালের চেষ্টার অভিযোগ করে সাংসদ নওফেল বলেন, ‘এখানে (চমেক হাসপাতাল) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি ক্যান্সার হাসপাতাল করার উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু আমরা দেখেছি, এখানে কাদা ছোঁড়াছুড়ি করে সেটাকেও বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা হয়েছে। আামদের সকলের প্রচেষ্টায় এবং সৎ সাহস থাকার কারণে সেটা পারেনি। তবে বিভ্রান্তিমূলক কথাবার্তা বলে সেটাকে বানচাল করার চেষ্টা হয়েছে।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবিরের সভাপতিত্বে এবং অবসরপ্রাপ্ত মেজর মোহাম্মদ এমদাদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী, স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক লিয়াকত হোসেন চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুন উর রশিদ, সহকারী মহাব্যবস্থাপক আরিফ আহমেদ এবং কোম্পানি সেক্রেটারি রাজীব সাহা, ব্যবস্থাপক মিনহাজ উদ্দিন চৌধুরী, চমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আফতাবুল ইসলাম, সহকারি পরিচালক ডা. রাজীব পালিত।
সারাবাংলা/আরডি/এসএসএ