Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘দুবাইয়ে উইঘুরদের জন্য গোপন জেল বানিয়েছে চীন’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৬ আগস্ট ২০২১ ২০:০২

চীনের এক নারীকে দুবাইয়ের একটি গোপন বন্দিশালায় আট দিন আটক রাখার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী ওই নারীই অভিযোগ করে বলেছেন, তার সঙ্গে সেখানে উইঘুর সম্প্রদায়েরও দুজন বন্দী ছিলেন। এ ঘটনায় প্রমাণ হতে পারে যে, নিজ দেশের বাইরেও গোপন বন্দিশালা (ব্ল্যাক সাইট) পরিচালনা করছে চীন। খবর আলজাজিরা।

২৬ বছর বয়সের ওই নারীর নাম উ হুয়ান। তার হবু স্বামী সরকার বিরোধী হওয়ার অভিযোগে তাকে দেশে ফিরিয়ে বিচারের মুখোমুখি করতে চেয়েছিল চীন। সেই বিচার এড়াতেই তিনি পালিয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

উ হুয়ান সংবাদমাধ্যম এপি’কে বলেন, তাকে দুবাইয়ের একটি হোটেল থেকে অপহরণ করা হয়েছিল। এরপর চীনের সরকারি কর্মকর্তারা তাকে আটকে রেখেছিল। এ কাজের জন্য একটি বাগানবাড়িকে কারাগারে রূপান্তরিত করা হয়। সেখানে তিনি আরও দুইজন উইঘরের বন্দীর কথা শুনেছিলেন ও দেখেছিলেন।

তিনি আরও বলেন, তাকে আটক অবস্থায় অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এমনকি তার হবু স্বামী ওয়াং জিংগু (১৯) তাকে হেনস্তা করেছে— এই মর্মে একটি অভিযোগপত্রে স্বাক্ষার করার জন্য হুয়ানকে হুমকি দেওয়া হয়। অবশেষে গত ৮ জুন তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। তিনি এখন নেদারল্যান্ডে আশ্রয় চাইছেন।

উ হুয়ান বলেন, গত ২৭ মে হোটেলে চীনা কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং পরে দুবাই পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে গিয়ে তিনদিন আটকে রাখে। তৃতীয় দিনে একজন চীনা নাগরিক তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। ওই ব্যক্তি নিজেকে লি জুয়াং নামে পরিচয় দিয়েছিলেন এবং তিনি দুবাইয়ে চীনা কনস্যুলেটে কাজ করেন বলেও তাকে জানিয়েছিলেন। ওই ব্যক্তি তার কাছে জানতে চান— চীনের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য উ হুয়ান বিদেশি কোনো গোষ্ঠীর কাছে টাকা নিয়েছিলেন কি না?

বিজ্ঞাপন

দুবাইয়ে চীনা কনস্যুলেটের ওয়েবসাইটের তালিকায় লি জুয়াংকে কনসাল জেনারেল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে তার মন্তব্য জানতে সরাসরি দেখা করতে চেয়ে এবং একাধিক ফোন করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

হুয়ান বলেন, তার চোখ বেঁধে একটি কালো গাড়িতে তোলা হয়। এর ৩০ মিনিট পর তাকে সাদা তিনতলা একটি বাগানবাড়িতে নেওয়া হয়। সেখানাকার রুমগুলোকে পৃথক পৃথক কারাকক্ষে রূপান্তরিত করা হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, তার নিজ কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘরটির দরজার লোহার দিয়ে তৈরি। সেখানে একটি বেড, একটি চেয়ার ও একটি সাদা আলোর লাইট ছিল, যা দিন-রাত জ্বলত। সেখানে তাকে বেশকয়েকবার চীনা ভাষায় জিজ্ঞাসাবাদ ও হুমকি দেওয়া হয়েছিল।

উ হুয়ান আরও বলেন, তিনি একবার বাথরুম ব্যবহার করতে গিয়ে একজন উইঘুর নারী বন্দীকে দেখতে পেয়েছিলেন। দ্বিতীয়বার তিনি আরেকজন উইঘুর নারীর চীনা ভাষায় চিৎকার শুনেছিলেন। তিনি বলছিলেন— ‘আমি চীনে ফিরে যেতে চাই না, আমি তুরস্কে ফিরে যেতে চাই।’

তারা যে উইঘুর নারী তা তিনি (উ হুয়ান) কিভাবে শনাক্ত করলেন— এর জবাবে হুয়ান বলেন, তিনি তাদের স্বতন্ত্র চেহারা ও উচ্চারণ শুনে বুঝতে পেরেছেন।

চীনে ‘ব্ল্যাক সাইট’ একটি প্রচলিত বিষয়, সেখানে উ হুয়ানের ঘটনা একটি উদাহারণ বলে উল্লেখ করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, যা চীন অন্য দেশে তৈরি করেছে। এই ধরনের ‘ব্ল্যাক সাইট’গুলো দেখায় যে, চীন কীভাবে তার প্রভাব খাটিয়ে বিদেশ থেকে ভিন্নমতাবলম্বী, দুর্নীতির জন্য সন্দেহভাজন ও উইঘুরদের মতো জাতিগত সংখ্যালঘুদের দেশে ফিরিয়ে নিতে সক্ষম।

এ বিষয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিং বলেন, ওই নারী যেসব ঘটনার কথা বলছে তা সত্য নয়, তাহলে কেন আমি এ বিষয়ে উত্তর দিব। এদিকে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য দুবাইয়ের সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

সারাবাংলা/এনএস

উইঘুর গোপন জেল চীন দুবাই

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর