সিনোফার্মের ভ্যাকসিন দেশেই ‘প্রস্তুতে’ ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই
১৬ আগস্ট ২০২১ ২০:৪৩
ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিন প্রস্তুতির পথে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই হয়েছে বাংলাদেশ সরকার, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস ও চীনের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড (সিনোফার্ম)। এই চুক্তির আওতায় চীনের সিনোফার্ম থেকে পাঠানো বাল্ক থেকে পরিপূর্ণভাবে ভ্যাকসিন প্রস্তুত ও বিতরণের কাজ হবে বাংলাদেশে।
সোমবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর মহাখালী বিসিপিএস মিলনায়তনে এই চুক্তি সই হয়।
অনুষ্ঠানে চীনের সিনোফার্ম ভ্যাকসিন বাংলাদেশে যৌথভাবে উৎপাদনের লক্ষে সিনোফার্মের পক্ষে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, ইনসেপ্টা ভ্যাকসিনের পক্ষে সমঝোতা সই করেন ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড’র চেয়ারম্যান আব্দুল মুক্তাদির।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘চীন থেকে আমরা বাল্ক নিয়ে আসব। এখানে ফিনিশড প্রোডাক্ট তৈরি হবে। হয়তো একটু সময় লাগবে। কিন্তু আমরা বানাব এবং বিদেশেও রফতানি করব।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘সরকার বিদেশ থেকে অনেক টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন কিনে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটি বিনামূল্যে জনগণকে দেয়।’
সিনোফার্মের চেয়ারম্যান লিউ জিংযান বেইজিং থেকে যুক্ত হয়ে বলেন, ‘সিনোফার্ম তিন বিলিয়নেরও বেশি পরিমাণে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিভিন্ন দেশের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করেছে। সিনোফার্মের ভ্যাকসিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত চীনের প্রথম ভ্যাকসিন। সিনফার্ম বিশ্বের ৮৭টি দেশে ভ্যাকসিন পাঠিয়েছে। ৬০টিরও বেশি দেশের রাষ্ট্র প্রধানরা সিনফার্মের ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন। এই ভ্যাকসিন করোনাভাইরাসের বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে কার্যকর।’
তিনি বলেন, ‘১৬ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার দেশে করোনা পরিস্থিতি সামলানো একটু কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব। সেই লক্ষ্যে সিনফার্ম এক কোটি ৩০ লাখের মতো ভ্যাকসিন বাংলাদেশে সরবরাহ করেছে এবং আরও ৯০ লাখ ডোজ সরবরাহের জন্য প্রস্তুত আছে। সব মিলিয়ে সিনোফার্ম বাংলাদেশকে ছয় কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একই সময়ে আমরা ইনসেপ্টার সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি করেছি, যেখানে স্থানীয়ভাবে আধা প্রস্তুতকৃত উপাদান থেকে মূল ভ্যাকসিন প্রস্তুত এবং সরবরাহ করা হবে। চুক্তি সইয়ের পর বাংলাদেশে মাসে ৫০ লাখ ভ্যাকসিন প্রস্তুত এবং সরবরাহ করা হবে।’
ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন ও ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুল মুক্তাদির বলেন, ‘এই চুক্তি সইয়ের মাধ্যমে এক নতুন দ্বার উন্মুক্ত হলো। আমরা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না কবে নাগাদ উৎপাদন শুরু করতে পারব। কারণ এখানে কিছু টেকনিক্যাল বিষয় আছে এবং উৎপাদনের পর সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনার বিষয় আছে। তবে আমরা খুব শিগগিরই উৎপাদনে যাব।’
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা এ বি এম খুরশীদ আলম, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং প্রমুখ।
এছাড়া অনলাইনে যুক্ত ছিলেন চীনের বেইজিং থেকে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়ান অ্যাফেয়ার্স বিভাগের কাউন্সেলর জিরং, সিনোফার্মের চিফ ইঞ্জিনিয়ার ফু কুয়াং, চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুবুজ্জামানসহ দূতাবাসের কর্মকর্তারা।
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম