Thursday 28 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আমিও বাবার মতো রক্ত দিতেই বাংলাদেশে পা রেখেছি: শেখ হাসিনা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৬ আগস্ট ২০২১ ২০:৫৫

ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা রক্ত দিয়ে গেছেন এদেশের মানুষের জন্য। রক্ত দিয়ে গেছেন আমার মা, আমার ভাইয়েরা। আমিও বাবার মতো সেই রক্ত দিতেই বাংলাদেশে পা রেখেছি। মৃত্যুকে সামনসামনি দেখেছি। কিন্তু কোনোদিন আমি ভীত হইনি। আমার একটাই চাওয়া এবং একটাই প্রতিজ্ঞা- যে আদর্শ নিয়ে বাবা এই দেশ স্বাধীন করেছেন, স্বাধীনতার সেই আদর্শ বাংলার মানুষের পৌঁছে দেবো।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৬ আগস্ট) জাতীয় শোক দিবস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৪৬তম শাহাদাত বার্ষিকীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জাতির পিতা বাংলাদেশকে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। তিনি বলেন, ১৯৭২ সালে ফিরে এসেছেন, সংবিধান দিয়েছেন। ৭৩ সালে নির্বাচন দিয়েছেন। পৃথিবীর কোনো দেশে এরকম একটা যুদ্ধ বা বিপ্লবের পর কখনোই এধরনের ঘটনা ঘটে না। কিন্তু তিনি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন, অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন। মানুষের মাঝে বৈষম্য দূর করবেন এমন চিন্তা করতেন। এইভাবেই তিনি একটা গণতান্ত্রিক পথে যখন হেঁটে যাচ্ছিলেন, তখন চক্রান্তও চলছিল। তিনি সমস্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে একটা পথেই হাঁটছিলেন- উৎপাদন বাড়াতে হবে, দারিদ্র দূর করতে হবে, মানুষকে উন্নত জীবন দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী যারা দেশের ভিতরে-বাইরে বা ছিল, যাদেরকে আমরা যুদ্ধে পরাজিত করেছি এবং তাদের দোসররা এটা মেনে নিতে পারেনি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে তো আরও গরীব হবে, এটাই তাদের চাওয়া ছিল। আর সেটা না হয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, সে কারণেই তারা প্রতিশোধটা নিতে চেয়েছিল। আর সেই প্রতিশোধের কারণ হচ্ছে ১৫ আগস্ট। বঙ্গবন্ধুর রক্তের কেউ যেন না আর না থাকে এটাই চেয়েছিল।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, অনেক বাধা আসার পরেও অনেক সমস্যা অনেক কিছুই আমাকে পার করতে হয়েছে। কিন্তু আমি সেইগুলোকে খুব বেশি গুরুত্ব না দিয়ে আমার চলার পথ ঠিক রেখে চলেছি। আমি সবসময় ভেবেছি আমার বাবা এই দেশ স্বাধীন করেছেন। এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে পারে না। এই দেশ সফল হবে, আর এই সফলতা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত একটা গ্রামের মানুষের কাছেও পৌঁছাবে। তাদের জীবন উন্নত হবে। এই একটা প্রতিজ্ঞা নিয়েই সমস্ত বাধা বিপত্তি যা কিছু এসেছে সব কিছু আমি অতিক্রম করার চেষ্টা করেছি।

বিজ্ঞাপন

দীর্ঘ এই পথচলায় দলের নেতাকর্মীদের সহযোগিতা পাওয়ার কথা স্মরণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, হ্যাঁ মানুষ মাত্রই আছে যে তাৎক্ষণিক কিছু পাওয়ার জন্য যারা অস্থির হয়ে পড়ে। তারা যেকোনো দুঃসময় দেখলে ঘাবড়ে যায়, ভয় পেয়ে যায়। আর সেটা আসে তাদের মধ্যে যাদের মধ্যে অর্থের লোলুপতা থাকে। যারা রাজনীতির মধ্য দিয়ে ব্যাপক সম্পদ কামাই করে, শুধু ওই অর্থের লোলুপতা নিয়েই বাঁচে, তারা দুঃসময়ে দাঁড়াতে পারে না। তারা আত্মসমর্পণ করে। আর যারা এর ঊর্ধ্বে উঠতে পারে, তারা যেকোনো বাধা আসুক তা অতিক্রম করতে পারে; এই কারণে যে সততাই শক্তি। আর এই সততা দিয়েই এগিয়ে যাওয়া যায়। আর সেটাই সম্পদ, বড় সম্পদ। ধন-দৌলত কারো চিরদিন থাকে না।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে আজকে সারাবিশ্ব তোলপাড়। এই টাকা-পয়সা, অর্থ-সম্পদ তো কাজে লাগছে না। একটা অদৃশ্য অসুখ যার এখনও তেমন কোনো হদিস করা যায়নি, অথচ সেটাই সারাবিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছে। এটা মাথায় রাখতে হবে। এখানে কারো সম্পদও কাজে লাগছে না। অস্ত্রও কাজে লাগছে না। একটা অদৃশ্য শক্তি যে আল্লাহ আছে, আল্লাহ সেটাই মাঝে মাঝে মনে হয় মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয়। তোমার কোনো শক্তি, তোমার অস্ত্রের শক্তি, তোমার অর্থের শক্তি, ধন-সম্পদের শক্তি, কোনো শক্তিই কাজে লাগবে না। সময়ে এমন অবস্থা হতে পারে; এটাই শিক্ষাই দিয়েছে।

এসময় করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সবাইকে সাবধান থাকার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ১৫ আগস্টে এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা হবে, বঙ্গবন্ধুর রক্ত কখনো বৃথা যায়নি, বৃথা যাবে না, বৃথা যেতে আমরা দেবো না। এদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুঁটিয়ে আমার বাবা-মা ভাইয়ের আত্মা যেন শান্তি পায়; সেটাই আমি চাই এবং দেশবাসীর দোয়া চাই।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে ঘরবন্দী অবস্থার করোনার জন্য নেতাকর্মীদের সঙ্গে সামনাসামনি দেখা হচ্ছে না বলে দুঃখ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কারো সঙ্গে দেখা না হওয়াটা আরও কষ্টের। কারণ মা-বাবা-ভাই সব হারিয়ে এই আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী আর বাংলাদেশের মানুষকেই তো আমার আপনজন হিসাবে পেয়েছিলাম।

সভার শুরুতে ১৫ আগস্ট নিহত সকল শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে যুক্ত ছিলেন। গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুল সোবহান গোলাপ। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ প্রান্তে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্মরণ সভায় সূচনা বক্তব্য করেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ধর্ম সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, কেন্দ্রীয় সদস্য পারভীন জামান কল্পনাসহ ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।

সারাবাংলা/এনআর/এসএসএ

শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আবার একসঙ্গে দুই খান
২৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:৩৪

আরো

সম্পর্কিত খবর