Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সিরিজ বোমা হামলা: ১৬ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি ৪৩ মামলা

আরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৭ আগস্ট ২০২১ ১০:৪৩

ঢাকা: আজ ১৭ আগস্ট। ১৬ বছর আগের এইদিনে দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা চালায় জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) নামের একটি জঙ্গি সংগঠন। পরিকল্পিতভাবে দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৬৩ জেলার প্রায় পাঁচশ স্থানে একই সময়ে বোমা হামলা চালানো হয়। এতে প্রাণ হারান দুইজন। বোমার স্পিলিন্টারের আঘাতে আহত হন শতাধিক মানুষ। অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

ওই সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সারাদেশে মামলা হয়েছিল সর্বমোট ১৫৯টি। তদন্ত শেষে ১৬টি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয় ১৪৩ মামলার। এরমধ্যে নিম্ন আদালতে ১০০টি মামলার বিচারকাজ শেষ হয়েছে। বিচারাধীন আছে আরও ৪৩টি মামলা। এসব মামলার এজাহারে নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয় ২৪২ জনকে। আর চার্জশিটে আসামি করা হয় এক হাজার ১২১ জনকে। এরমধ্যে গ্রেফতার করা হয় ৯৮৮ জনকে। এসব মামলায় ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডসহ ২৬৩ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজার আদেশ দেন আদালত। খালাস পান ১২২ জন।

সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলায় মোট ১৭টি মামলা হয়। এরমধ্যে চারটি মামলার বিচার নিষ্পত্তি হয়েছে। পাঁচটি মামলা এখনো বিচারাধীন, বাকি আটটি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। বিচার নিষ্পত্তি হওয়া চার মামলায় ৩৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী মো. আবদুল্লাহ আবু সারাবাংলাকে জানান, ঢাকার আদালতে ১৭টি মামলা ছিল। এরমধ্যে কয়েকটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন ও কয়েকটির বিচার শেষ করে আসামিদের সাজা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পাঁচটি মামলা বিচারাধীন আছে। সেগুলোও সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। সাক্ষীরা আদালতে হাজির না হওয়ায় মামলার বিচার বিলম্বিত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে সাক্ষীদেরও পাওয়া যায়নি। পুলিশও চেষ্টা করছে সাক্ষীদের খুঁজে বের করতে। আবার করোনার কারণে বিচার বন্ধ ছিল। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছর এবং এ বছর অনেক দিন আদালত বন্ধ ছিল। কার্যক্রম স্বাভাবিক হতেই সাক্ষীদের হাজির করে বিচার শেষ করার চেষ্টা করবো।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ২০০৫ সালে দেশজুড়ে সিরিজ বোমা হামলাকে তারা ‘সাউন্ড ব্লাস্ট’ নামে আখ্যায়িত করেছে। যেসব জায়গায় সিরিজ বোমা হামলা হয়েছে, প্রতিটি জায়গায় তারা ‘ইসলামী আইন বাস্তবায়ন’ শিরোনামে লিফলেট ফেলে যায়। সিরিজ বোমা হামলার মাধ্যমেই মূলত নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দেয় জঙ্গি সংগঠন জেএমবি। এরপর তারা বিভিন্ন জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।

জেএমবির বিভিন্ন জঙ্গি হামলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন ফেলে ২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠিতে বিচারক সোহেল আহমেদ চৌধুরী ও জগন্নাথ পাড়ে হত্যার ঘটনা। ওই সময় বোমা হামলাকারী জেএমবি সদস্য ইফতেখার হাসান আল মামুন হাতেনাতে ধরা পড়ে। এ দুই বিচারক হত্যা মামলায় জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইসহ সাত জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ রাতে আল মামুন ছাড়া বাকি ছয় জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়।

২০০৫ সালে সিরিজ বোমা হামলার মাধ্যমে সারাদেশে নিজেদের নেটওয়ার্কের বিস্তৃতির তথ্য জানান দিলেও আরও আগে থেকেই জেএমবি জঙ্গি হামলা চালিয়ে আসছে। ২০০১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার গুড়পুকুরের রক্সি সিনেমা হল ও সার্কাস মাঠে বোমা হামলা চালায় তারা। এরপর থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত অন্তত অর্ধশত হামলায় জড়িত ছিল জেএমবি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানান, ২০১৬ সালে গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ ও শোলাকিয়ায় ভয়াবহ জঙ্গি হামলা চালিয়ে আতঙ্ক ছড়ায় জেএমবির নব্য ধারা (নব্য জেএমবি)।

এই দুই হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার মুখে সংগঠনটির শীর্ষ নেতা তামিম চৌধুরীসহ অন্তত ৭০ জঙ্গি নিহত হয়। অনেক শীর্ষ নেতা গ্রেফতার হয়ে এখন কারাগারে। সংগঠনটি দুর্বল হয়ে পড়লেও নিঃশেষ হয়ে যায়নি। কারাগারের বাইরে থাকা জঙ্গিরা এখনও গোপনে তৎপর হওয়ার চেষ্টা করছে।

সারাবাংলা/এআই/এএম

সিরিজ বোমা হামলা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর