Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

খালিদার কাছে তালেবানের উত্থান দুঃস্বপ্নের মতো

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৮ আগস্ট ২০২১ ১৪:২৫

আফগানিস্তান জাতীয় নারী ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক খালিদা পোপাল দেশটিতে উগ্রবাদী গোষ্ঠী তালেবানের উত্থানকে ‘দুঃস্বপ্নের মতো’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তার সাবেক বহু সতীর্থ তালেবানের আতঙ্কে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। বার্তাসংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব জানান খালিদা পোপাল।

খালিদা পোপাল জানান, তালেবানের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর অনেক সাবেক সতীর্থ তাকে জানিয়েছেন, তারা আফগানিস্তান থেকে নিরাপদে সরে যেতে পারবেন কি না তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

বিজ্ঞাপন

ফোনে সতীর্থদের তিনি পরামর্শ দেন বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে, যেসব প্রতিবেশী নারী ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে তাদের চিনে থাকেন তাদের এড়িয়ে চলতে। ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে তাদের অতীত ইতিহাস যতটা সম্ভব মুছে ফেলারও পরামর্শ দেন তিনি।

তিনি বলেন, “আমি আফগানিস্তান থেকে নারী ফুটবলারদের ফোন পাই। তারা কাঁদছে। তারা জানায়, বাড়ি থেকে পালাতেও পারছে না। তারা আতঙ্কিত। আসলে তাদের সকল স্বপ্ন উবে গেছে। এখনকার পরিস্থিতি তাদের কাছে দুঃস্বপ্নের মতো”।

উল্লেখ্য, ৩৪ বছর বয়েসী খালিদা পোপাল বর্তমানে ডেনমার্কে বাস করছেন। প্রবাসে থেকেও তিনি আফগানিস্তান নারী জাতীয় ফুটবল দলের পরিচালক হিসেবে দায়িত্বরত।

এপিকে তিনি বলেন, “আমার খেলোয়াড়রা আমাকে ভিডিও পাঠাচ্ছে, তারা বলছে, যাদের বিরুদ্ধে আমি এতদিন বলে আসছিলাম তারা এখন দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে। আমরা নিশ্বাস নিতে পারছি না”।

এপির প্রতিবেদনে থেকে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে তালেবান যখন কাবুলের দখল নিয়েছিল, সেবার রাজধানী ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন খালিদা পোপালের বাবা-মা। তারা সে সময় পাকিস্তানের এক শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেন। দুই দশক আগে তালেবান উৎখাত হলে কিশোরী পোপাল আফগানিস্তানে ফেরেন।

বিজ্ঞাপন

পোপাল জানান, আফগানিস্তানে ফিরে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী হয়েছিলেন তিনি। ভেবেছিলেন, তার দেশে নারীদের অধিকার অর্জিত হবে।

পোপাল এপিকে বলেন, “আমার প্রজন্মের আশা ছিল তারা দেশ গড়বে। তারা চায় পরবর্তী প্রজন্মের নারী পুরুষের জন্য পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে। আমি অন্য নারীদের সঙ্গে ফুটবলকে একটি ক্ষমতায়নের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছিলাম”।

তিনি বলেন, “২০০৭ সাল নাগাদ আফগানিস্তান নারী ফুটবল দলে খেলার মতো অনেক নারী যোগ দেয়। জাতীয় দলও শক্তিশালী হয়। আমরা জাতীয় দলের জার্সি পরে গর্ব বোধ করতাম। এটি ছিল এ পর্যন্ত সবচেয়ে সুন্দর ও সেরা অনুভূতি”।

তবে জাতীয় দলের নারী ফুটবলার হিসেবে পথ মসৃণ ছিল না তার। তালেবান ক্ষমতায় না থাকলেও তাদের উগ্রবাদীতা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পাপোলের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তিনি বলেন, “আমি বহু প্রাণনাশী হুমকি পেয়েছি, কারণ আমি জাতীয় টেলিভিশনে তালেবানকে আমাদের শত্রু বলে আখ্যায়িত করেছিলাম। আমার জীবন তখন ঝুঁকিতে ছিল”।

২০১১ সালে ফুটবলার হিসেবে অবসর নেনে তিনি। সে সময় তিনি আফগান জাতীয় নারী ফুটবল দলের সমন্বয়কের দায়িত্ব পান। খেলা ছাড়লেও তার প্রতি তালেবানের হুমকি অব্যাহত থাকে। ফলে ২০১৬ সালে তিনি ফের দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। ডেনমার্কে আশ্রয় চাইলে সেদেশে তাকে আশ্রয় দেওয়া হয়।

ডেনমার্কে গিয়েও তিনি আফগান নারী ফুটবল দলকে ত্যাগ করেননি। সেখান থেকে তিনি নারীদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তবে এখন তালেবানের নব উত্থানে তার ও তার সতীর্থদের সব আশা ও স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।

পোপাল এপিকে বলেন, “আমাদের মেয়েরা যে স্বপ্ন দেখেছিল তা এখন তিরোহিত। তারা ভয়েস মেসেজ পাঠিয়ে অভিযোগ করে বলে, ‘কেন আমাদের স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল। কেন আমাদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তোমরা এভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে এটা আগে জানায়নি কেন? অন্তত আমরা নিজেদের সুরক্ষায় ব্যবস্থা নিতে পারতাম”।

পাপোল বলেন, “নারী ফুটবলাররা বরাবরই নারী অধিকার সম্পর্কে উচ্চকণ্ঠ ছিল। তারা আফগান নারীদের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কথা বলতেন। দাবিদাওয়া উত্থাপন করতেন। এখন নারী ফুটবলাররা নিজেদের জীবন নিয়ে সংকটে”।

উল্লেখ্য, ২০০১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর কাছে পরাজিত হওয়ার পর পুনরায় কঠোর শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই শুরু করে তালেবান। দীর্ঘ ২০ বছর পর চলতি বছরে বিদেশি সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করার ঘোষণা আসার পর ফের দেশটির দখল নিতে তীব্র লড়াই শুরু করে উগ্রবাদী গোষ্ঠীটি। রোববার কাবুল দখল নেওয়ার মাধ্যমে গোটা আফগানিস্তানে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে তালেবানরা।

সারাবাংলা/আইই

আফগানিস্তান খালিদা পোপাল তালেবান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর