‘দিল্লি কা লাড্ডুর মতো তালেবান লাড্ডুরও স্বপ্ন দেখে লাভ নেই’
১৮ আগস্ট ২০২১ ১৭:৪০
ঢাকা: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, দিল্লি কা লাড্ডুর মতো আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর ‘আমরা আছি’- এরকম জানান দিয়ে কোনো লাভ নেই। ধর্মনিরপেক্ষতার বাংলাদেশে কোনো সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সুযোগ নেই।
বুধবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীতে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দারুস সালাম থানা আয়োজিত ১৫ আগস্ট শহিদদের মাগফিরাত কামনা ও করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। পরে উপস্থিত অসহায় দুঃস্থ মানুষের মাঝে ১০ নম্বর ওয়ার্ড কমিউনিটি সেন্টারে ত্রাণ বিতরণ করা হয়।
২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ রক্তাক্ত করার কথা বিএনপি মহাসচিবকে স্মরণ করিয়ে দেন তৎকালীন যুবলীগ চেয়ারম্যান নানক। তিনি তার উদ্দেশে বলেন, ‘সেই আগস্ট মাসে গতকাল আকস্মিক কর্মসূচি দিলেন। হঠাৎ কর্মসূচি দিলেন, তখনই বুঝেছিলাম ডাল মে কুচ কালা হ্যায়?’
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আমরা কিন্তু ভুলি নাই। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসেই একাত্তরের পরাজিত সাম্প্রদায়িক শক্তি জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে একশ দিনের কর্মসূচি দিয়েছিলেন। সেই একশ দিনের কর্মসূচি ছিল আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করার, তাদের বাড়ি-ঘর লুটপাট করা, তাদের উপর অকথ্য নির্যাতন চালানোর। আপনাদের কিন্তু সেই দিনের কথা ভুলে গেলে চলবে না।
বিএনপির সেই শাসনামলে সাবেক সাবেক অর্থমন্ত্রী এস এম কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টার, মঞ্জুর ইমামসহ সারাদেশে অনেক নেতাকর্মীদের হত্যাকাণ্ড ঘটানোর প্রসঙ্গ তুলে ধরে সেই দিনের সেই ঘটনার জন্য মির্জা ফখরুল ইসলামের কাছে তার জবাব চান আওয়ামী লীগ সভাপতিণ্ডলীর সদস্য নানক।
তিনি মির্জা ফখরুল ইসলামের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনি বলেছেন, আমাদের সহযোগী সংগঠন উচ্ছৃঙ্খল হয়ে গেছে? তারা কারও বাধা মানে না। যদি তাই হতো তাহলে গতকাল তেজগাঁও’র ডিসি সাহেব আপনাদের আক্রমণে আহত হতে পারত না। গতকাল যদি আমাদের সংগঠন মোতায়েন করতাম তাহলে এই ২৭ জন পুলিশ আহত হতো না।’
নানক বলেন, ‘ভারতের নির্বাচনে মোদি সাহেব যখন জয়লাভ করলেন, তখন রসগোল্লা খেলেন এবং রসগোল্লা বিলালেন। ভাবখানা যেন দিল্লির মসনদে বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে, বিজেপি নেতা মোদি এসেছে, কাজেই খালেদা জিয়াকে সুন্দর সাজুগুজু করে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। সেইদিনও আপনারা উল্লাস করেছিলেন। আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর গতকাল আপনারা জানান দিয়েছেন, আমরা আছি। এই জানান দিয়ে কোনো লাভ নেই। এই বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ, এই বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষতার বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ খ্রিস্টান সকলের বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশে কোনো সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করা যাবে না।’
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসাবে দুর্নীতিমুক্ত নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তাহলেই সম্ভব মৌলবাদী জামায়াত-বিএনপির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার ৩৪ মন্ত্রীর মধ্যে ২৩ জন শপথ নিয়েছিল। যারা সৎ তারা কিন্তু মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দেন নাই। জীবন দিয়েছেন, রক্ত দিয়েছেন। কিন্তু মোশতাকের কাছে আত্মসমর্পণ করেন নাই। তাই আজ আমাদের যদি অসৎ নেতৃত্ব থাকে, তখন যেকোনো দুর্যোগ সামনে এলে হয় তারা আত্মসমর্পণ করবে, নয়তো দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবে। তাই মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার মধ্যে সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবিএম মাজহারুল আনামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, সংসদ সদস্য আগা খান মিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, দফতর সম্পাদক উইলিয়াম প্রলয় সমদ্দার, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন দারুসসালাম থানার সাধারণ সম্পাদক কাজী ফরিদুল হক হ্যাপী।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম