‘আন্দোলনের নামে সহিংসতা সৃষ্টিই বিএনপির রাজনীতি’
১৮ আগস্ট ২০২১ ২০:১৪
ঢাকা: বিএনপির আন্দোলনের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আন্দোলনের নামে সহিংসতা সৃষ্টি করাই হচ্ছে বিএনপির রাজনীতি। সে রাজনীতি তারা গতকাল করেছে। বিনা উস্কানিতে অহেতুক পুলিশের উপরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। চন্দ্রিমা উদ্যানের ঘটনা প্রমাণ করে আন্দোলনের নামে বিএনপির সহিংসতা কোন পর্যায়ে এসে ঠেকেছে।
বুধবার (১৮ আগস্ট ) বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রশমনে বঙ্গবন্ধু দর্শন ও বর্তমান প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক আলোচনা সভা এবং করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সামগ্রীর বিতরণ কর্মসূচির অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জনবিচ্ছিন্ন বিএনপি যতই ষড়যন্ত্র করুক, দেশের জনগণ সেটা মেনে নেবে না। এখানে কোনো ষড়যন্ত্রকারী ঠাঁই নেই। সব ষড়যন্ত্র মাড়িয়ে জনগণের ভালোবাসা, সমর্থন নিয়ে উন্নয়ন সমৃদ্ধির চলমান দরজা এগিয়ে যাবে, অদম্য গতিতে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘গতকাল তাদের ঢাকা মহানগরের নবগঠিত কমিটির নেতারা শক্তির জানান দিতে স্বাস্থ্যবিধিকে চরমভাবে উপক্ষা করে শীর্ষ নেতৃত্বকে খুশি করতে চন্দ্রিমা উদ্যানে যাওয়ার পথে তাণ্ডব চালায়, পুলিশের উপরে হামলা করে। বিএনপির আন্দোলন মানেই হলো ভাংচুর। পরিকল্পনা সচিবের গাড়িটিও ভেঙে ফেলল। বেশ কতগুলো গাড়ি ভাঙচুর এবং পুলিশের উপরে অহেতুক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা- এটাই হলো বিএনপির রাজনীতি।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি জনগণের পাশে না দাঁড়িয়ে শুধু সরকারের অন্ধ সমালোচনায় ব্যস্ত। করোনা সংকটকালেও তাদের কাজ হচ্ছে অপপ্রচার করে জনগণের মাঝে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করা। করোনা নিয়ে বিভ্রান্তি, ভ্যাকসিন নিয়ে বিভ্রান্তি- সবকিছুতেই তারা রাজনৈতিক ইস্যু খুঁজে বেড়ানোর চেষ্টা করে। ইস্যু খুঁজে পেতে যখন যা প্রয়োজন তাই তারা করে। অন্যদের গড়ে তোলা সামাজিক আন্দোলন, উগ্র-সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর তাণ্ডব, সবকিছুর উপরে তারা ভর করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করে। তারা নিজেরাই নিজেদের নেতিবাচক রাজনীতির জন্য জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। তাদের পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে। সে কারণে আজ তারা পরনির্ভর আন্দোলনে ভর করে।’
‘সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই’- বিএনপির মহাসচিবের এই বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার নয়, প্রকৃত পক্ষে বিএনপির পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে বিএনপির ভরাডুবি, আন্দোলনের ব্যর্থতাই প্রমাণ করে জনগণের মাঝে বিএনপির ঠাঁই নেই। যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় যেতে উদগ্রীব বিএনপি। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করে, ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।’
বিএনপির চেয়ারপারসনের জন্মদিন প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘খালেদা জিয়ার জন্মদিন নিয়ে আমি হাওয়া থেকে পাওয়া তথ্য দিইনি। আমি বেগম খালেদা জিয়ার জীবন থেকে পাওয়া তথ্য উত্থাপন করেছি জাতির সামনে। তার ছয়টি জন্মদিবস। এটা হাওয়া থেকে পাওয়া নয়। খালেদা জিয়ার জীবনী থেকে নেওয়া এ তথ্য। সে তথ্যে কী আছে- মেট্রিকুলেশন সার্টিফিকেটে একটা জন্মদিবস, ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের একটা, তারপরে দেখা গেলো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর আরেকটা, তারপরে দেখা গেলো পাসপোর্টে একটা, তারপরে ১৯৯৫ সাল থেকে হঠাৎ করে ১৫ আগস্ট তার জন্মদিন। এরপর সর্বশেষ দেখা গেলো, করোনার টেস্টে তার জন্মদিন ৮ মে।’
১৫ আগস্টে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ভুয়া জন্মদিনের কর্মসূচি পালন বিএনপি অব্যাহত রেখেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘কেবল কর্মসূচিটা পাল্টেছে। কেক কাটেনি, ফুল পাটিয়েছে, মিলাদ-মাহফিল করেছে। ফখরুল সাহেব প্রতিদিনই এদিক-সেদিক টালবাহানা করেন। সাংবাদিকদের মাধ্যমে তাকে জিজ্ঞেস করতে চাই, এই ছয়টি জন্মদিবসের মধ্যে খালেদা জিয়ার প্রকৃত জন্মদিবস কোনটা? এটা জাতি জানতে চায়?’
আফগানিস্তানে তালেবানদের ক্ষমতা দখল নিয়েও কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘যড়যন্ত্র চলছে। দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশে ক্ষমতার পালাবদলে অনেকেই স্বপ্ন দেখছে। মনে রাখবেন এটা বাংলাদেশ। রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছি, ষড়যন্ত্র করে এখানে ১৫ আগস্ট ঘটনো হয়েছে, ২১ আগস্ট ঘটানো হয়েছে। ষড়যন্ত্র মোকাবিলা আমাদের করতে হবে। কোনো সাম্প্রদায়িক অপশক্তির আস্ফালন সোনালি অর্জন যাতে নস্যাৎ করতে না পারে সেজন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনসহ ত্রাণ উপকমিটির সদস্য ডা. হেদায়েতুল ইসলাম বাদল, আখলাকুর রহমান মাইনু, আমিনুল ইসলাম খান আবু, হারুনুর রশিদ, মিজানুর রহমান, আব্দুল বারেক, মাহবুবুর রশিদ প্রমুখ।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম