আসছে শীতে রাজনীতির মাঠ গরম করবে বিরোধী ‘প্ল্যাটফর্ম’
১৯ আগস্ট ২০২১ ১১:১৭
ঢাকা: ভোটাধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, নির্বাচনকালীন তদারকি সরকার গঠন ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে কয়েকটি রাজনৈতিক দল। এদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বাম ধারার রাজনৈতিক দলগুলো। তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো— নিজ নিজ দল বা জোটের স্বাতন্ত্র্য অক্ষুন্ন রেখে রাজপথে শক্তিশালী যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলা। বৈশিক মাহমারি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই তারা দৃশ্যমান কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে। সূত্র মতে, আগামী শীত মৌসুমে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামবে তারা। ওই সময় তারা রাজপথ উত্তপ্ত করার চেষ্টা করবে। আন্দোলনের প্রস্তুতি হিসেবে প্রতিদিনই চলছে তাদের ভার্চুয়াল আলোচনা। আলোচনায় উঠে এসেছে- এই আন্দোলন কি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে, না কি আলাদা প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে হবে? তবে এ বিষয়ে এখনও কেউ সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে কার্যকর করার জন্য এর আগে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পুরানো ভুলত্রুটির বিষয়গুলো আলোচনায় উঠে আসায় সে উদ্যোগ আর এগোয়নি। কারণ, বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখবে কি রাখবে না, সে বিষয়ে পরিষ্কারভাবে কিছু বলছে না। তাদের মনোভাব একলা চলো নীতি। ফলে বাম ধারার কয়েকটি রাজনৈতিক দলসহ অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দল আলাদা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কার্যকরের চিন্তা-ভাবনা নিয়ে সামনে এগোচ্ছে। এক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ হলে আলাদা একটি মোর্চা কিংবা প্ল্যাটফর্ম গঠন করবে। জাসদ সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বিদেশ থেকে ফিরলেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, যুগপৎ আন্দোলনের বিষয় নিয়ে বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে বাম ধারার রাজনীতিদলগুলোসহ অন্যান্য দলের ভার্চুয়াল আলোচনা হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কার্যকর করার ক্ষেত্রে বিএনপি উৎসাহ দেখাচ্ছে না। তারা একলা চলার পথ বেছে নিয়েছে। সেক্ষেত্রে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতির জোনায়েদ সাকি, বাম ধারার কয়েকটি রাজনৈতিক দল এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, ন্যাপ, জাসদ আব্দুর রব, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরামসহ অন্যান্য কয়েকটি দল নিয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন হতে পারে। এ বিষয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি আওয়ামী লীগের বাইরে যাবে না। অন্যান্য বামদলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে পারে।’
এসব বিষয় নিয়ে নাগরিকঐক্যের আহ্বায়ক মাহামুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মৌলিক দাবিগুলো আদায়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে শক্তিশালী আন্দোলনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আন্দোলনের দানা বাঁধলে তখন বিএনপিসহ অন্যান্য যেসব দল চুপ করে আছে তারাও মাঠে নামবে। তবে এই মুহূর্তে আলাদা কোনো মোর্চা গঠন কিংবা প্ল্যাটফর্মের চিন্তা-ভাবনা করছি না। সময় বলে দেবে মোর্চা গঠন, নাকি আলাদা প্ল্যাটফর্ম।’
এ প্রসঙ্গে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে চরম কর্তৃত্ববাদী, ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রাজপথে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য বিরোধীদলগুলোকে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলা দরকার। এই ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে আহ্বান রয়েছে, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নিজ নিজ দল এবং জোটের স্বাতন্ত্র্য অক্ষুন্ন রেখে ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়, নির্বাচনকালীন তদারকি সরকার গঠন এবং বর্তমান সরকারের পদত্যাগ দাবিতে রাজপথে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলা।’
এ প্রসঙ্গে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি সারাবাংলাকে বলেন, ‘জনগণকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সূচনা করতে চাচ্ছি। সেই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রক্রিয়া হিসেবে কাজ করছি। আমরা মানুষের ভোটাধিকার চাই এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য অন্তরবর্তীকালীন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের মধ্যে স্থায়ীভাবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম করা প্রয়োজন। যেখানে মানুষের ভোটাধিকার ও সাংবিধানিক অধিকারগুলো সুরক্ষিত থাকবে। তার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতার ভারসাম্য থাকতে হবে। এই দাবি আদায়ে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে শক্তভাবে মাঠে নামার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর জন্য মোর্চা না প্লাটফর্ম গঠন হবে তা সময় বলে দিবে। আমাদের কর্সূচি প্রতিদিনই আছে। তবে সামনে শক্তিশালী দৃশ্যমান করমর্সুচি শুরু হবে।’
এসব বিষয় নিয়ে ড. কামাল হোসেন অংশের গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিউল্লাহ জানান, ‘গণফোরাম কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল বলে জানি। তবে এই উদ্যোগ সুফল বয়ে আনেনি। আমি মনে করি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কার্যকর করতে হলে অতীতের ভুল-ত্রুটি মূল্যায়ন করে অগ্রসর হতে হবে। তবে যুগপৎ আন্দোলনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শক্তভাবে মাঠে নামা প্রয়োজন।’
গণফোরাম এই অংশের অপর নেতা মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘বিএনপির জোরে বা শক্তিতে আন্দোলন করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে না। জাসদ রব, গণফোরাম, গণসংহতি, বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টিসহ অন্যান্য দলগুলো নিয়ে রাজপথে নামার প্রস্তুতি চলছে।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম
আন্দোলনের প্রস্তুতি বাম ধারার রাজনৈতিক দল বিরোধী প্ল্যাটফর্ম শীতে রাজনীতির মাঠ গরম