ভ্যাকসিন নিবন্ধনের বয়সসীমা কমে এখন ১৮
২০ আগস্ট ২০২১ ০০:১৩
ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য নাগরিকের ন্যূনতম বয়সসীমা ২৫ বছর থেকে কমিয়ে ১৮ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) রাতে ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য নিবন্ধনের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম সুরক্ষায় বয়সসীমা কমিয়ে ১৮ বছর বা তদুর্ধ্ব ছাত্র-ছাত্রীদের ভ্যাকসিন প্রয়োগের সুযোগ উন্মুক্ত করা হয়েছে।
এর আগে, গত বছরের নভেম্বরে প্রথম ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনার জন্য চুক্তি করে সরকার। পরে এ বছরের ৫ জানুয়ারি প্রথম ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আসে বাংলাদেশে। ২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৬ জনকে পরীক্ষামূলকভাবে সেই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। ওই দিনই ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহীদের নিবন্ধনের জন্য ওয়েব প্ল্যাটফর্ম ‘সুরক্ষা’ চালু করা হয়। সেখানে নিবন্ধিতদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয় ৭ ফেব্রুয়ারি।
এদিকে, সিরামের কাছ থেকে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনা হলেও প্রথম চালানে ৫০ লাখের পর দ্বিতীয় একটি চালানে মাত্র ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আসে দেশে। এছাড়া ভারত সরকারের কাছ থেকে দুই দফায় উপহার পাওয়া যায় ৩২ লাখ ডোজ অক্সফোর্ডের কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন। এরপর ভারতে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হলে আর সিরামের কাছ থেকে ভ্যাকসিন পাওয়া যায়নি। কোভিশিল্ডের এক ডোজ নেওয়া প্রায় ১৫ লাখ মানুষ দ্বিতীয় ডোজ পাননি। এর মধ্যেই কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের মজুত শেষ হয়ে আসায় ২৬ এপ্রিল থেকে ভ্যাকসিন নিবন্ধন বন্ধ হয়ে যায়।
এরপর সরকারের নানামুখী তৎপরতায় ধীরে ধীরে ভ্যাকসিনের সংকট কাটতে শুরু করে। চীন ও রাশিয়া থেকে ভ্যাকসিন আনার উদ্যোগ নেয় সরকার। কোভ্যাক্সের আওতায় দেশে ফাইজারের এক লাখ ৬০০ ডোজ ভ্যাকসিন আসে। এরপর চীনের কাছ থেকে কেনা সিনোফার্মের আরও ৩০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন এবং কোভ্যাক্স থেকে পাওয়া মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন এরই মধ্যে দেশে এসেছে। এছাড়াও দেশে এ পর্যন্ত সিনোফার্মের ভ্যাকসিন এসেছে ১ কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার ডোজ। এছাড়াও কোভ্যাক্সের আওতায় পাওয়া গেছে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনও। দেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন এসেছে সর্বমোট এক কোটি ১৮ লাখ ৪৭ হাজার ৩০০ ডোজ।
এ অবস্থায় গত ৫ জুলাই ফের সুরক্ষা প্ল্যাটফর্ম উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহীদের জন্য। তবে শুরুতে ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য ন্যূনতম বয়সসীমা ৪০ করা হলেও সেবার বয়সসীমা কমিয়ে ৩৫ এরপর ৩০ এ আনা হয়। ২৯ জুলাই সেই বয়সসীমা ২৫ বছরে নামিয়ে আনা হয়। সবশেষ ১৯ আগস্ট ভ্যাকসিন নিবন্ধনের বয়সসীমা ১৮ করা হলো।
যেভাবে নিবন্ধন করা যাবে
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পেতে আগ্রহীরা সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে গিয়ে অথবা মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন।
অ্যাপটি ফ্রি ডাউনলোড করা যাবে (www.surokkha.gov.bd)। নিবন্ধনের পর সেখান থেকেই জানা যাবে, কবে কখন ভ্যাকসিন নিতে হবে। পরিচয় যাচাইয়ে এই অ্যাপে বেশ কয়েকটি ক্যাটাগরি আছে। যার একটি নির্বাচন করার পর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে নিবন্ধন শুরু করতে হবে।
জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর যাচাই করে সব ঠিক থাকলে স্ক্রিনে নিবন্ধনকারীর নাম দেখানো হবে বাংলা ও ইংরেজিতে। সেখানে একটি ঘরে একটি মোবাইল ফোন নম্বর চাওয়া হবে, যে নম্বরে তাকে পরবর্তীতে ভ্যাকসিন সংক্রান্ত তথ্য এসএমএস করা হবে।
কেন্দ্রে গিয়ে নিতে হবে ভ্যাকসিন
প্রথমে ভ্যাকসিন কার্ড সংগ্রহ করতে হবে। সুরক্ষা ওয়েব পোর্টাল বা অ্যাপের ‘টিকা কার্ড সংগ্রহ’ বাটনে ক্লিক করে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, জন্মতারিখ দিয়ে ‘যাচাই করুন’ বাটনে ক্লিক করতে হবে। এরপর নিবন্ধনের সময় দেওয়া মুঠোফোনের নম্বরে এসএমএসের মাধ্যমে ওটিপি (ওভার দ্য ফোন) কোড দিয়ে ‘ভ্যাকসিন কার্ড ডাউনলোড’ বাটনে ক্লিক করলে টিকা কার্ড ডাউনলোড হবে।
এসএমএসের মাধ্যমে পাওয়া ভ্যাকসিন নেওয়ার তারিখে নির্দিষ্ট কেন্দ্রে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে। এ সময় ভ্যাকসিন কার্ড ও জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের দু’টি ডোজ নেওয়ার পর সুরক্ষা ওয়েব পোর্টাল থেকে ভ্যাকসিন সনদ সংগ্রহ করা যাবে।
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম