Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ই-অরেঞ্জের অনিয়মের খোঁজে সিআইডি

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২০ আগস্ট ২০২১ ১১:৩৪

ঢাকা: এক দুই টাকা নয়। প্রায় ১১ শত কোটি টাকা কোথায় গেলো? ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে এই বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। থানায় মামলাও করেছে এক গ্রাহক। গ্রেফতার হয়েছেন এমডি চেয়ারম্যান ও সিওও।

এই বিপুল পরিমাণ টাকা মূলত কী করা হয়েছে, দেশেই আছে নাকি বিদেশে পাচার করা হয়েছে তা খুঁজতেই মাঠে নেমেছে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)।

বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) সিআইডির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

সিআইডি জানিয়েছে, প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় যে মামলা করা হয়েছে তার অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এ মামলার আসামিসহ বেশ কয়েকজনের তথ্য-ব্যাংক হিসাব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ই-অরেঞ্জ বা ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকের কোনো অ্যাকাউন্ট থেকে বিদেশে টাকা পাচার হয়েছে কি-না সে বিষয়েও তদন্ত করা হচ্ছে।

সিআইডির ওই কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে সিআইডি মূলত মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টি অনুসন্ধান করছে। পাশাপাশি তারা কী কারণে, কেন হঠাৎ করে (১ জুলাই) মালিকানা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিলো সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এছাড়াও অনুসন্ধানে তাদের মানি লন্ডারিংয়ের প্রমাণ পাওয়া গেলে নতুন করে মামলা হবে। মামলার তদন্তভার সিআইডিতে নেওয়ার জন্য আবেদন করা হবে।

সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির বলেন, সম্প্রতি কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক ও ই-কমার্স সাইটের লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সেগুলো ধরেই তারা অনুসন্ধান করছেন। বর্তমানে তারা ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, সিরাজগঞ্জ শপসহ বেশ কয়েকটি সাইটের লেনদেন নিয়ে অনুসন্ধান করছেন। মানি লন্ডারিংয়ের প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, অগ্রিম মূল্য পরিশোধের পরও মাসের পর মাস পণ্য ডেলিভারি না দিয়ে চুপচাপ থাকে ই-অরেঞ্জ। এরপর মালিকানা বিক্রি করে দেওয়া হয়। পণ্য না পেয়ে তাহেরুল ইসলাম নামে একজন গ্রাহক গুলশান থানায় মামলা করেন। তাহেুরুলের মামলায় সাক্ষি হয়েছেন অন্তত ৩৭ গ্রাহক। তারা সবাই ই-অরেঞ্জের প্রতারণার শিকার বলে উল্লেখ করেছেন।

মামলার এজাহারে তাহেরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, তিনি চলতি বছরের ২১ এপ্রিল পণ্য কেনার জন্য ই-অরেঞ্জে অগ্রিম টাকা দেন। তারা নির্ধারিত তারিখে পণ্য সরবরাহ করেনি, টাকাও ফেরত দেয়নি। নিজেদের ফেসবুক পেজে বারবার নোটিশ দিয়ে সময় চেয়েছে। কিন্তু পণ্য ও টাকা দেয়নি।

সর্বশেষ সোমবার (১৭ আগস্ট) গুলশান-১ এর ১৩৬/১৩৭ নম্বর রোডের ৫/এ নম্বর ভবনে অবস্থিত ই-অরেঞ্জের অফিস থেকে পণ্য ডেলিভারির কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি।

এছাড়া ই-অরেঞ্জ বিভিন্ন আউটলেটের গিফট ভাউচার বিক্রি করেছিল, সেগুলোর টাকা আটকে রাখায় আউটলেটগুলো ভাউচারের বিপরীতে পণ্য দিচ্ছে না।

তাহেরুল ইসলাম আরও বলেন, এই করোনাকালে কষ্টার্জিত অর্থ ফেরত পাচ্ছেন না। বরং প্রতিষ্ঠানের মালিকানা পরিবর্তন নিয়ে নতুন নতুন তথ্য পাচ্ছেন। কোনো পণ্য ডেলিভারি না দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি এক লাখ ভুক্তভোগীর প্রায় ১১শ কোটি টাকা প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাৎ করেছে ই-অরেঞ্জ কর্তৃপক্ষ।

গ্রাহকদের অভিযোগ, গণমাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে সাত দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারির দেওয়ার কথা থাকলেও মাসের পর মাস গ্রাহকদের হয়রানি করে আসছে ই-অরেঞ্জ।

মেসেজের রিপ্লাই না করা, ফোন না ধরা। এমনকি অফিসে যোগাযোগ করলেও কারো সঙ্গে কথা বলা যায় না। তারা এখন লাভ চান না বা কোনো পণ্যও চান না। তারা যে টাকা দিয়েছেন সেই টাকা ফেরত চান।

বিজ্ঞাপন

ভুক্তভোগী তাহেরুল গুলশান থানায় মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলেন- মাসুকুর রহমান, আমানউল্ল্যাহ, বিথী আক্তার, কাউসার আহমেদ, সোনিয়া মেহজাবিনসহ ই-অরেঞ্জের সব মালিক।

বুধবার (১৮ আগস্ট) তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত।

এর আগে, গত মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) মামলার পর অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবুবকর সিদ্দিকের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন ও তার স্বামী মাসুকুর রহমান।

শুনানি শেষে আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন।

পরদিন বুধবার (১৮ আগস্ট) কোম্পানির চিফ অপারেটিং অফিসারকে (সিওও) ১৬ লাখ টাকা ও ২২ টি ক্রেডিট কার্ডসহ গ্রেফতার করে পুলিশ।

এদিকে, ই-কমার্স প্লাটফর্ম ইক্যাবের সদস্যপদও হারাতে বসেছে ই-অরেঞ্জ এমন খবরও পাওয়া যাচ্ছে।

সারাবাংলা/ইউজে/একেএম

অর্থ আত্মসাত ই-অরেঞ্জ সিআইডি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর