Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা: ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির অপেক্ষা

কামরুল ইসলাম ফকির, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২১ আগস্ট ২০২১ ১২:১৯

ঢাকা: ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার মামলা (ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল) হাইকোর্টে প্রায় তিন বছর ধরে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে করা পৃথক দুটি মামলার ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় পৌঁছেছে প্রায় তিন বছর আগে। এর পর আসামিরা বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। এরই মধ্যে প্রায় তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এই ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত করা যায়নি। এ সময়ের মধ্যে কোনো বেঞ্চ নির্ধারণ করাও সম্ভব হয়নি। এ জন্য করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারিকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র বলছে, ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানির জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত করা হয়েছে। এরই মধ্যে পলাতক আসামিদের পক্ষে সরকারি খরচে আইনজীবী (স্টেট ডিফেন্স) নিয়োগ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। এখন নিয়ম অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টে একটি বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেবেন। তবে এই বেঞ্চ কবে নির্ধারিত হবে তার পুরো এখতিয়ার প্রধান বিচারপতির।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের করা আপিল শুনানি শুরু করার জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন পেপারবুক (মামলার রায়ের কপি, এফআইআরসহ যাবতীয় নথি)। প্রায় এক বছর আগেই পেপারবুকের ২২ হাজার পৃষ্ঠার যাবতীয় নথি তেজগাঁও প্রিন্টিং প্রেস থেকে প্রস্তুত হয়ে সুপ্রিমকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এসেছে। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে এসব নথি যাচাই-বাছাইসহ কিছু আনুষঙ্গিক কার্যক্রম বাকি রয়েছে। এ জন্য ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য এখনো হাইকোর্টের বেঞ্চ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।

২০০৪ সালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ওই গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দুটি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। একটি হত্যা, অপরটি বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে। এরপর বিচার শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর রায় দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১।

রায়ে ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দুই মামলার রায়ে ৩৮ জনকে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের অন্য ধারায় ২০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই দুই মামলায় আলাদাভাবে সাজা দেওয়া হলেও তা একযোগে কার্যকর হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

পলাতক ১৮ আসামির মধ্যে দুইজন ফাঁসির আসামি, ১২ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি আর অন্যান্য মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত চার আসামি রয়েছেন।

এরপর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের সাজা অনুমোদনের জন্য ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স পাঠানো হয়। অতঃপর কারাবন্দি আসামিরা ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৯ জন:

বিচারিক আদালতের রায়ে ১৯ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়। তারা হলেন— সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, মেজর জেনারেল (অব) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আবদুর রহিম, হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ, জঙ্গিনেতা মাওলানা তাজউদ্দিন, মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, মাওলানা শেখ ফরিদ, মাওলানা আবু সাইদ, মুফতি মঈনউদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, হাফেজ আবু তাহের, মো. ইউসুফ ভাট ওরফে মাজেদ বাট, আবদুল মালেক, মফিজুর রহমান ওরফে মহিবুল্লাহ, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হোসাইন আহমেদ তামিম, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ও মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন। এদের মধ্যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আবদুর রহিম সম্প্রতি কারাবন্দি অবস্থায় মারা গেছেন।

তারেকসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন:

বিচারিক আদালতের রায়ে ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়। তারা হলেন— বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপির নেতা হারিছ চৌধুরী, কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, আরিফুল ইসলাম আরিফ, জঙ্গিনেতা মুফতি আবদুর রউফ, হাফেজ ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা আবদুল হান্নান ওরফে সাব্বির, মুরসালিন, মুত্তাকিন, জাহাঙ্গীর বদর, আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, আবু বকর সিদ্দিক ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মো. ইকবাল, রাতুল আহমেদ, মাওলানা লিটন, মো. খলিল ও শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল।

বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ১১ জনের:

বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডিত ১১ জন হলেন— মেজর জেনারেল (অব) এটিএম আমীন, লে. কর্নেল (অব) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার, লে. কমান্ডার (অব) সাইফুল ইসলাম ওরফে ডিউক, সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা, সাবেক আইজিপি শহুদুল হক, সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান, ডিএমপির সাবেক ডিসি (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী, জোট সরকার আমলের তদন্ত কর্মকর্তা সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ, সাবেক এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমান ও সাবেক পুলিশ সুপার রুহুল আমীন।

অন্য মামলায় তিনজনের ফাঁসি কার্যকর:

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় মোট আসামি ছিলেন ৫২ জন। তাদের মধ্যে হুজি-বি নেতা মুফতি হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলমের ফাঁসি কার্যকর হয় ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায়। আরেক আসামি জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হয় মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায়। বাকি ৪৯ জনের বিরুদ্ধে বিচারিক আদালত রায় দেন।

রাষ্ট্রপক্ষে ডেথ রেফারেন্স সংক্রান্ত আবেদনের শুনানির বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত মামলাটির শুনানি শুরু করা সম্ভব হবে। রাষ্ট্র্রপক্ষ সেভাবেই শুনানি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। চলতি বছরই যাতে এ মামলাটি হাইকোর্টে নিষ্পত্তি হয় সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে।’

মামলার শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের পরবর্তী ধাপ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান জানান, পেপারবুক প্রস্তুত হয়ে আসার পরে তা যাচাই-বাছাইসহ কিছু আনুষঙ্গিক কার্যক্রম বাকি রয়েছে। এসব আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শেষ করে শিগগিরই পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক ১৮ আসামিরা কে কোথায়:

দণ্ডিত মোট ৪৯ আসামির মধ্যে তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরীসহ ১৮ জনকে মামলার নথিতে পলাতক দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে তারেক রহমান ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে আছেন। হারিছ চৌধুরী ২০০৭ সালে এক-এগারোর পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সিলেট সীমান্ত দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। বর্তমানে তার অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তাজউদ্দিন বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকায় আছেন বলে জানা যায়। হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ, মেজর জেনারেল (অব) এটিএম আমিন ও লে. কর্নেল (অব) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার এবং কায়কোবাদ বিদেশে আছেন। তাদের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। গ্রেনেড হামলায় সরাসরি অংশগ্রহণকারী দুই জঙ্গি মুরসালিন ও মুত্তাকিন অস্ত্রসহ ধরা পড়ার পর প্রায় দেড় দশক ধরে ভারতের কারাগারে আছেন বলে জানা গেছে।

সারাবাংলা/কেআইএফ/এনএস

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা আপিল শুনানির অপেক্ষা ডেথ রেফারেন্স


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর