রাজনৈতিক সংস্কৃতির অধঃপতনে ২১ আগস্ট বিশেষভাবে দায়ী: শেখ পরশ
২১ আগস্ট ২০২১ ১৩:৩৭
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার কারণে বাংলাদেশকে বর্হিবিশ্বে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল জানিয়ে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ পরশ বলেছেন, আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অধঃপতনের একমাত্র কারণ এই গ্রেনেড হামলা।
শুক্রবার (২০ আগস্ট) দুপুরে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের উদ্যোগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্ট মর্মন্তুদ হত্যাকাণ্ডের সকল শহিদ-স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
শেখ পরশ বলেন, বিএনপি-জামাত কোনো রাজনৈতিক দল নয়, একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। বিএনপি-জামাত ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর কীভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার করেছে, কীভাবে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে, তা আপনারা সবাই জানেন।
ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. ইসমাইল হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী শান্তি মিছিলে নারকীয় গ্রেনেড হামলা চালায়। যুদ্ধে ব্যবহৃত গ্রেনেড শান্তি মিছিলে ব্যবহার পৃথিবীর ইতিহাসে একটি ঘৃণিত কাজ। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। সেদিন আওয়ামী লীগের প্রায় ২৫ জন নেতা-কর্মী নিহত এবং অসংখ্য নেতা-কর্মী আহত হন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা কেন হয়েছিল? কারণ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করা, যেন বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বিচার না হয়, যাতে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি আর কোনো দিন ক্ষমতায় না আসতে পারে, যেন এদেশটি আইএসআই নিয়ন্ত্রিত পাকিস্তানী ভাবধারায় তাবেদারি রাষ্ট্রে পরিণিত হয়। বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে হত্যা করা ছিল তাদের মূল পরিকল্পনা।
১৫ আগস্ট স্বজন হারানোর কথা উল্লেখ করে শেখ পরশ বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ইতিহাসের ঘৃণ্যতম হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী হয়েছিলাম। সেদিন হারিয়েছিলাম বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের সকল সদস্যকে। কী দোষ করেছিলাম আমি? কী দোষ করেছিল শেখ রাসেল, শুকান্ত বাবু, ১০ বছরের আরিফ সেরনিয়াবাত, বেবী সেরনিয়াবাত? আজকের প্রজন্ম কিন্তু এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজে। আসলে ১৫ আগস্ট ছিল সুপরিকল্পিত একটি হত্যাকাণ্ড, ১৫ আগস্ট ছিল বাঙালির স্বাধিকারকে অস্বীকার করা এবং এর প্রতিশোধ নেওয়া। ১৫ আগস্ট ছিল বাঙালির পরিচয় বা জাতিসত্তার ওপর আঘাত করা। ১৫ আগস্ট শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা নয়, তাঁর পরিবারকে হত্যা করে পুনরায় পাকিস্তান বানানোর একটা চেষ্টা।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে এবং এর পেছনের কুশিলবদের খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিশন গঠন করা এই প্রজন্মের অন্যতম দাবি। কারা সেই ষড়যন্ত্রকারী? যেন তা নতুন প্রজন্ম জানতে পারে। যারা স্বাধীনতাবিরোধী, যারা ’৭১ সালের বাঙালির বিজয় মেনে নিতে পারেনি, মূলত তারাই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী। বঙ্গবন্ধুর হত্যার সুবিধাভোগীরাই এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বক্তব্যে জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততা রয়েছে। ’৭৫ পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমানের কার্যকলাপে তা প্রমাণ পাওয়া যায়।
যুবলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, গত দুই বছরে যুবলীগের অনেক উন্নতি সাধিত হয়েছে। প্রথমত জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে যুবলীগের একটি পরিছন্ন কমিটি উপহার দিয়েছেন। যুবলীগ একটি পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে যুবলীগ সুনামের সাথে ঢাকাসহ সারাদেশে পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছে যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বৈশ্বিক মহামারি মোকাবিলায় যুবলীগ যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা সংগঠনের শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর অবস্থানে আছি। সংগঠনের শৃঙ্খলা রক্ষায় কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না, হবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, রাজনীতি হচ্ছে মানুষের জন্য। মানব সেবাই রাজনীতির মূল অনুষঙ্গ। শোকাবহ এই আগস্ট মাসে যুবলীগের নেতাকর্মীরা করোনার এই মহাসংকটে মানবসেবায় আত্মনিয়োগ করেছে। আর অন্যদিকে বিএনপি-জামাত করছে দেশ ধ্বংসের ষড়যন্ত্র। দেশের জনগণকে নিরাপদ রাখতে যুবলীগের নেতাকর্মীদের বিএনপি-জামাতের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সদা সজাগ থাকতে হবে। করোনার এই মহাসংকটে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় করোনার শুরু থেকে যুবলীগ সারাদেশে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিটি দুর্যোগে যুবলীগ সবসময় মানুষের পাশে ছিল এবং থাকবে।
বিএনপি-জামাত এর উদ্দ্যেশে তিনি বলেন, তারা সব সময়ে সমালোচনায় ব্যস্ত, করোনার এই মহা সংকটে অসহায় মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে সমালোচনায় ব্যস্ত সময় পার করছে। এটাই বিএনপি-জামাতের চরিত্র। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের সদস্যদের নির্মম হত্যাকান্ডে খুনি জিয়া জড়িত। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে সম্পৃক্ততা কারণে খুনি জিয়ার মরনোত্তর বিচার করতে হবে। আমরা যুবলীগ জিয়ার বিচার দাবি করছি।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে পর জিয়া খুনিদের পুর্নবাসন করেছেন। রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে ভোগদখল করেছেন। আইন করে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বিচার বন্ধ করেছে। শুধু জিয়া নন, তার উত্তরসুরি বিএনপি-জামাতও রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। নিজের স্বার্থে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করে চলেছে।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এড. মামুনুর রশীদ, তাজ উদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মুতিউর রহমান বাদশা, সাংগঠনিক সম্পাদক জহির উদ্দিন খসরু, প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী, দফতর সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান রহমান মাসুদ, তথ্য ও যোগাযোগ (আইটি) সম্পাদক মো. শামছুল আলম অনিক, সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিপ্লব মোস্তাফিজ, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মো. হারিছ মিয়া শেখ সাগর, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক এড. মুক্তা আক্তার, উপ-দফতর সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন শাহজাদা, উপ-তথ্য ও যোগাযোগ (আইটি) বিষয়ক সম্পাদক এন আই আহমেদ সৈকত, সহ-সম্পাদক আবদুর রহমান জীবন, মো. মনিরুজ্জামান পিন্টু, কার্যনির্বাহী সদস্য ইঞ্জি. মো. মুক্তার হোসেন চৌধুরী কামাল, এড. সওকত হায়াতসহ কেন্দ্রীয় মহানগর ও বিভিন্ন নেতারা।
সারাবাংলা/এএম