গ্রেনেড মারা কোন গণতন্ত্র— বিএনপির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী
২১ আগস্ট ২০২১ ১৭:৩১
ঢাকা: বিএনপির দিকে আঙুল তুলে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে যারা গণতন্ত্রের কথা বলে, এটা কোন ধরনের গণতন্ত্র? প্রকাশ্য দিবালোকে, একটা জনসভায় সাধারণ মানুষ আছে। যেখানে যারা আর্জেস গ্রেনেডের মতো গ্রেনেড মারতে পারে, তারা কি?
শনিবার (২১ আগস্ট) সকালে ‘ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ১৭তম বার্ষিকী’ উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ প্রান্তে যুক্ত ছিলেন। গণভবন প্রান্তে সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ।
এসময় গ্রেনেড হামলায় আহতদের খোঁজখবর নেওয়াসহ বিভিন্ন হাসপাতাল-ক্লিনিক থেকে উদ্ধার করে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনা। সেদিন আওয়ামী লীগ সমর্থিত চিকিৎসকরা দিনরাত জান দিয়ে খেটেছেন এবং আহতদের পাশে দাঁড়িয়েছে সেজন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি ছাত্রলীগ যুবলীগ আওয়ামী লীগসহ সবাই যে যেখানে সুস্থ ছিল সবাই ছুটে এসেছে, আহতদের পাশে দাঁড়িয়েছিল সেকথাও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ২১ আগস্টেও নির্মম গ্রেনেড হামলার সমালোচনা করে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দিকে আঙুল তুলে বলেন, ‘দেশে যারা বলে গণতন্ত্রের কথা বলে, এটা কোন ধরনের গণতন্ত্র? প্রকাশ্য দিবালোকে, একটা জনসভায় সাধারণ মানুষ আছে যেখানে, সেই জনসভায় যারা আর্জেস গ্রেনেডের মতো গ্রেনেড মারতে পারে এবং শুধু মারা না, গ্রেনেড মারার পর সাথে সাথে ওখানে যে রক্ত, পায়ের জুতা, মানুষের সব কিছু পড়ে আছে, তখনো একটা গ্রেনেড ফাটেনি; সেই গ্রেনেডটা পড়ে আছে, সেটা যখন উদ্ধার করা হল এবং সেই গ্রেনেডটাকে একজন আর্মি অফিসার সে নিয়ে বলল যে, এটাকে রাখতে হবে আলামত হিসাবে। তাকে ধমক দেওয়া হলো, পরে তার উপরে অনেক নির্যাতনও করেছে, কেন এই কথা বলল। সেই গ্রেনেডটাও ধ্বংস করে দেওয়া হল এবং সেই আলামত মোছার জন্য পানি দিয়ে ধোয়া শুরু করল। তখন আমি যুবলীগের নানক-আজমকে বললাম যে, ওখানে যে এইভাবে সব আলামত নষ্ট করে দিচ্ছে, তোমরা যতটুকু পার, ওটাকে রক্ষা করো।’
সেই সময় সিটি করপোরেশনের পানির গাড়ি নিয়ে এসে আলামত নষ্ট করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই কাজগুলি কাদের? এই কাজগুলি তো সরকারের? এই কাজগুলি তো পুলিশের? পুলিশ কিন্তু তা করেনি। এটা হল বাস্তবতা।’
পরবর্তীতে চারদিকে যখন সবার সমালোচনা তখন একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি দিয়ে তদন্ত কমিটি করা হয় জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘সেই তদন্ত কমিটি আবিস্কার করল যে পাশের দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এসে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তো পাশের দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এসে দিনে-দুপুরে এইভাবে এতোগুলি গ্রেনেড যদি শহরের ভিতরে মেরে যেতে পারে, তাহলে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থারা কি করছিল? তারা কি নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছিল? তাহলে তারা দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে কিভাবে? স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার সশস্ত্র বাহিনী আমাদের বিডিআর পুলিশ তারা কি করছিল? এইভাবে তারা সমস্ত দৃষ্টিটা অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করল।’
তারপরও মানুষের সমালোচনার মুখে জজ মিয়াসহ মগবাজারে আমাদের আওয়ামী লীগ নেতা মোকলেসসহ কয়েকজনকে মিথ্যা অজুহাতে গ্রেফতার করে জড়িত হিসাবে প্রমাণ করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। এবিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জজ মিয়া একটা গরীব ঘরের ছেলে, তাকে টাকা পয়সা দিয়ে তার পরিবার লালন-পালন করবে তাকে সেই কথা বলে তাকে দিয়ে এক কাহিনী রচনা করল এবং তাকে অ্যারেস্ট করল। ওর কি যোগ্যতা আছে বা ওর কি আর্থিক সঙ্গতি আছে যে এই গ্রেনেড সংগ্রহ করা, গ্রেনেড মারার জন্য এতোগুলি লোক নিয়োগ করা, এটা কি সম্ভব?’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘একটা গ্রেনেড পাওয়া গেল জেলখানার ভিতরে ওয়ালের সঙ্গে। সেটা আবার আমাদের এক স্বনামধন্য পত্রিকা ডায়াগ্রাম এঁকে দেখাল, জেলখানার পাশের কোন এক বাড়ি থেকে ওই গ্রেনেড ছুঁড়ে মারাতে, ওটা ওখানে পড়েছে। জেলখানার পাশে এমন কোনো বাড়ি নেই যেখান থেকে গ্রেনেড মারলে ওই জায়গাটায় এসে গ্রেনেড পড়বে। আসল কথা যে, এরা অনেকগুলি ক্রিমিনাল জোগাড় করেছিল তার মধ্যে কিছু জেলখানা থেকে বের করে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু সেই সময় যখন প্রত্যেকের হাতে যে গ্রেনেডগুলি ছিল সবাই সেগুলি মারতেও পারেনি। রমনা হোটেলের সামনে ওখানে একটা গলিতে ফেলানো অবস্থায় একটা পাওয়া যায়। একজন কারারক্ষী এর মধ্যে জড়িত ছিল।’
‘ওইদিন রাতে এগারটার দিকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে চারজনকে দেশ থেকে বাইরে পাঠিয়ে দেয়। তার মধ্যে তাজউদ্দিন ছিল, ওই কারারক্ষী আর সেই সঙ্গে যেটা শোনা যায় যে, কর্নেল রশিদ আর ডালিম সেই সময় ঢাকায় এসেছিল এবং ঢাকায় এসে খালেদা জিয়া এবং তারেক জিয়ার তত্ত্বাবধানেই ছিল’, বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।
‘এর কারণ হিসাবে তখনকার গোয়েন্দা সংস্থা, ডিজিএফআই, এনএসআই, পুলিশসহ সবাই জড়িত ছিল বলে অভিযোগ করেন। তাই দেশ থেকে পালিয়ে যেতে তাদেরকে সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছিল তৎকালীন সরকার বলে অভিযোগ করেন। কারণ যখন তারা জানল যে আমি তো এখনো মরি নাই, বেঁচে আছি। তখন তারা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
২১ আগস্ট দলের হাজার খানেক নেতাকর্মী আহত হয়েছিল দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ খুব বেশি আহত ছিল, কেউ খুব হয়ত না। কিন্তু আহতের সংখ্যা কিন্তু অনেক বেশি। আর নিহত তো হয়েছে আমাদের ২২ জন। পার্টির নেতার্মী আর দুই জন ছিল তাদের লাশ কিন্তু কেউ কোনদিন আর নিতে আসেনি। এই দুইজন ছিল অজ্ঞাতনামা। আগস্ট মাসে এই ঘটনা ঘটল। আর সেপ্টেম্বরের দিকে সাকা চৌধুরীর দশজন ক্যাডারকে ক্রসফায়ার দেওয়া হয়েছিল। তাদের কেন ক্রসফায়ারে মারা হয়েছিল?’
সভার শুরুতে গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ প্রান্তে সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনসহ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর-দক্ষিণের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও আবু আহমদ মান্নাফী। এছাড়া কেন্দ্রীয় নেতারাসহ মহানগর ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এনআর/এমও
২১ আগস্ট ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা গণতন্ত্র গ্রেনেড মারা প্রধানমন্ত্রী