করোনার প্রভাবে ‘অভাবে’ আত্রাইয়ের মৃৎশিল্পীরা
২৩ আগস্ট ২০২১ ০৮:১১
নওগাঁ: জেলার আত্রাই উপজেলার ছোট যমুনা নদীর তীরবর্তী দাঁড়িয়ে থাকা ভবানীপুর পালপাড়া মৃৎশিল্পের কারিগরদের প্রাচীন বাসস্থান। উপজেলার ভবানীপুর, রাইপুর, মিরাপুর, সাহেবগঞ্জ, বহলা, পাঁচুপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য কুটিরের নয়নাভিরাম মৃৎ শিল্পীদের বাসস্থান। তবে করোনার প্রভাবে মৃৎশিল্পের ঐতিহ্য আঁকড়ে থাকা পাল বংশের লোকদের টিকে থাকা যেন কঠিন হয়ে পড়েছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে অভাব-অনটনের মাঝে দিন কাটছে তাদের। প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের প্রভাবে ভালো নেই তারা।
একসময় এই গ্রামগুলিতে মৃৎশিল্পের জৌলুস ছিল। এ শিল্পে জড়িয়ে ছিল এখানের শতাধিক পরিবার। এখনও হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার পূর্বপুরুষদের এ পেশা ধরে রেখেছেন। কিন্তু বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে এ মাটির কাজ। কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েছেন।
এখানকার তৈরি মৃৎশিল্পের অনেক সুনাম ও সুখ্যাতি থাকলেও এখন শুধুমাত্র দইয়ের পাত্র ও পিঠার খোলা তৈরি করে কোন রকমের জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। অথচ একসময় পালরা খোলা, হাড়ি, পাতিল, কলসি, ব্যাংক, পিঠা তৈরির ছাঁচ, পুতুলসহ ছোট-ছোট খেলনাসহ নানা ধরনের জিনিসপত্র তৈরি করত।
বর্তমানে এ অঞ্চলে খোলা পাত্রের কদর বেশি রয়েছে। একটি খোলা তৈরিতে মাটি ও পোড়ানো বাবদ প্রায় ৫ টাকা খরচ হলেও তা বাজারে বিক্রি হয় ১০ টাকা। এরমধ্যেই রয়েছে শ্রম ও মাল বহনের খরচ। ফলে লাভের মুখ তারা দেখেন না মৃৎশিল্পীরা। অথচ ওই একটি খোলা এক হাত ঘুরে বাজারে খুচরা ক্রেতা কিনছেন ২০ থেকে ৩০ টাকা। ফলে মধ্যস্বত্ব ভোগীদের হাতে যাচ্ছে লাভের বড় অংশ। ন্যায্য দাম না পাওয়ায় মৃৎশিল্পীরাও পেশার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে।
রাইপুর গ্রামের মৃৎশিল্পের কারিগর বিপ্লব কুমার পাল বলেন, ‘লাভ-লসের হিসাব করি না। বাপ-দাদার কাজ ছাড়ি কি করে, তাই করে যাচ্ছিলাম। কিন্তু করোনাভাইরাসের ফলে আমাদের পেশায় অনেক প্রভাব পড়েছে। পূর্বপুরুষের পেশা বাঁচিয়ে রাখতে গিয়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে পরিবারনিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটছে আমাদের।’
উপজেলার ভবানীপুর পালপাড়া গ্রামের মৃৎশিল্পী ধীরেন্দ্রনাথ পাল জানান, নদী-খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন মাটি সংগ্রহেও টাকা খরচ করতে হয় তাদের। এছাড়াও জ্বালানির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ও বিক্রির সঙ্গে মিল না থাকায় প্রতিনিয়ত লোকসান গুণতে হচ্ছে। এরমধ্যে করোনার কারণে কাজ বন্ধ থাকায় তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন।
এছাড়া এককালের ঐতিহ্যের মাটির তৈরি বাসন, হাড়ি, পাতিল, কলসি, পুতুলসহ নানা তৈজসপত্র এখন প্লাস্টিকের দখলে। ফলে উপজেলার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের জৌলুসও আর নেই। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। যদিও মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখা দরকার বলে মনে করছেন উপজেলার সচেতন মহল।
সারাবাংলা/এমও