Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাঁধের আশায় বানানো পাকাবাড়ি নদীগর্ভে, এখন ফেলছে জিও ব্যাগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৩ আগস্ট ২০২১ ১৩:০৪

চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মা নদীতে আবারও ভাঙন শুরু হয়েছে। মাত্র এক সপ্তাহে জেলার সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের গোয়ালডুবি গ্রামের প্রায় ২০০ মিটার অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন শুরুর পর নদী তীরবর্তী এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি। হুমকির মধ্যে রয়েছে চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের বাখের আলী, মোড়লপাড়া, ফাটাপাড়া, চাকপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার পরিবার।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙন দেখে এই গ্রামের ঘরবাড়ি ভেঙে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ায় ব্যস্ত গ্রামবাসী। কাটা হচ্ছে ছোট-বড় সবধরনের গাছ। ইতোমধ্যেই পদ্মায় বিলীন হয়েছে এই গ্রামের পাকা-আধাপাকা কয়েকটি ঘরবাড়ি। স্থানীয়রা জানান, হঠাৎ করে গত এক সপ্তাহ থেকে এই এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। কয়েকদিন বিরতি দিয়ে গত মঙ্গলবার পুরোদমে তাণ্ডব চলে গোয়ালডুবি গ্রামে।

বিজ্ঞাপন

ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীর পাড়ে জিও ব্যাগ ফেলা শুরু করেছে। তবে জিও ব্যাগ নয়, বাঁধ নির্মাণ করাই স্থায়ী সমাধান বলছেন স্থানীয়রা। শুষ্ক মৌসুমে বাঁধ নির্মাণ করা গেলে এখনকার ভাঙন রোধ করা সম্ভব হতো বলে মনে করেন তারা। ক্ষতিগ্রস্তদের খাবার ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করার দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।

ফাটাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আকমল হোসেন নিজের উর্পাজনের সবটুকু দিয়ে ৪ মাস আগে নতুন করে বাড়ি বানিয়েছেন। পদ্মা বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হওয়া ও নদী থেকে বাড়ির দূরত্ব ২৫০ মিটার হওয়ায় প্রায় ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে বাড়িটি নির্মাণ করেন। আকমলের ভাই স্কুলশিক্ষক সৈয়বুর রহমান বলেন, আমাদের সাড়ে ৪ বিঘা জমি, আমের বাগান, দুটি বাড়ি তলিয়ে গেছে। মাত্র ৪ মাসের পাঁকা বাড়িটি নিমিষেই হারিয়ে গেল পদ্মার মাঝে। বাড়ির ভেতরের মালপত্র নিয়ে সরে যাওয়ারও সময় পায়নি। এই ঘটনার পর আরও ২০টি পরিবার ঘরবাড়ি ভেঙে নিয়ে চলে যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

ভাঙন কবলিত এলাকা গোয়ালডুবির পাশের গ্রাম চাকপাড়ায় বাড়ি মুদি দোকানি মো. সাহিন জানান, এর আগেও এই এলাকায় এসেছি। কিন্তু মঙ্গলবার বিকেলে এসে দেখি চারটি বাড়ি নাই। পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। পদ্মার আশপাশের আরও কয়েকটি গ্রাম এখনও অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে।

রোববার (২২ আগস্ট) নদীতে ভাঙন না থাকলেও এর প্রভাব রয়েছে প্রবল। নদী পাড়ে লাগানো ছোট ছোট গাছ কাটা নিয়ে ব্যস্ত স্থানীয়রা। পঞ্চাশোর্ধ মো. ফজলুর রহমান বলেন, তাড়াহুড়ো করে গাছগুলো কেটে নিচ্ছি। গাছগুলো লাগানো একবছরও হয়নি। কিন্তু কী করবো, ভাঙনে তো সব হারিয়েছি। গাছগুলো কেটে যতটুকু খড়ি পাওয়া যায় তাই লাভ। চোখের সামনে বাড়িঘর, জমিজমা সব পদ্মায় হারিয়ে গেল। সরকারের কাছে আমাদের আকুল আবেদন, যেন বাঁধটা করে দেয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাহফুজ হাসান জানান, বাড়িগুলো থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার নদীর দূরত্ব ছিল। কিন্তু এতো দ্রুত গতিতে নদী ভাঙন হচ্ছে যে, বাড়িঘর ও বিভিন্ন আসবাবপত্র সরানোর সময় পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। থেমে থেমে হঠাৎ করে দিনরাতের যেকোনো সময় ভাঙন শুরু হচ্ছে। বাঁধ তৈরি করা দেখেই ভরসা পেয়ে অনেকে পাঁকা বাড়ি নির্মাণ করেছিল। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল। তিনি আরও জানান, নদী ভাঙন শুরুর পর বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এটি নদী ভাঙন রোধ করতে পারবে না। এর স্থায়ী সমাধানের জন্য বাঁধ নির্মাণ করতে হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ভারতের দুটি রাজ্য উত্তর প্রদেশ ও বিহারে অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে সেখানে সবগুলো পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এর ফলে পদ্মা নদীতে অধিক স্রোতের কারণে ভাঙন শুরু হয়েছে। নদী ভাঙন কবলিত ও হুমকিতে থাকা এলাকায় নদীর পাড়ে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান জানান, এই মুহূর্তে উত্তাল পদ্মা নদীর সাথে যুদ্ধ করা কঠিন কাজ। পাউবো কর্তৃপক্ষ নদী রক্ষায় সর্বোচ্চ সামর্থ্যের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ঠিকাদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন রাসেল পানি উন্নয়ন বোর্ডের দিকে তীর ছুড়ে বলেন, প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান অফিসের বাইরে কোনো কাজ করে না। সেক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ডই পারে ঠিকাদারদের কাছ থেকে সময়মত কাজ বুঝিয়ে নিতে।

নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে জানিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আব্দুল ওদুদ বলেন, চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নে পদ্মা নদীতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। চলতি বছরে ব্লক নির্মাণের কাজ চলছে। আগামী বছর বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হলে ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে এই এলাকার মানুষ।

সারাবাংলা/এএম

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পদ্মা ভাঙন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর